Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘আমাকে বড় শিক্ষা দিল অলিম্পিক্স’, দেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী জিতু

শ্যুটিং রেঞ্জ থেকে বেরোনোর সময় মনে হচ্ছিল তাঁর পা চলছে না। সেনাবাহিনীর শ্যুটার। কিন্তু মিলিটারিম্যান হওয়া সত্ত্বেও এমন ভেঙে পড়েছেন যে, মিক্সড জোনে এসে বলে ফেললেন, ‘‘দেশ আমার জন্য অনেক করেছে। পদক দিতে না পারায় আমি ক্ষমাপ্রার্থী। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।’’

রতন চক্রবর্তী
রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

শ্যুটিং রেঞ্জ থেকে বেরোনোর সময় মনে হচ্ছিল তাঁর পা চলছে না। সেনাবাহিনীর শ্যুটার। কিন্তু মিলিটারিম্যান হওয়া সত্ত্বেও এমন ভেঙে পড়েছেন যে, মিক্সড জোনে এসে বলে ফেললেন, ‘‘দেশ আমার জন্য অনেক করেছে। পদক দিতে না পারায় আমি ক্ষমাপ্রার্থী। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।’’

শ্যুটিং বিশেষজ্ঞরা অভিনব বিন্দ্রা, গগন নারাঙ্গের চেয়েও যাঁর হাতে রিওতে পদক দেখার ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন সেই জিতু রাই এত খারাপ করবেন কেউ ভাবতে পারেননি। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে তবু ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। ৫০ মিটার পিস্তল তাঁর সেরা ইভেন্ট। গত দু’বছরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়াড— একের পর এক বড় মঞ্চে সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জ জিতে এসেছেন তিনি। অথচ অলিম্পিক্সে এ রকম অধঃপতন! জিতু আরও শান্ত হয়ে বলেন, ‘‘১০ মিটারে যখন পারলাম না, তখন থেকে পাখির চোখ করেছিলাম ৫০ মিটারকেই। এটা থেকে পদক তুলতেই হবে। শুরুটাও ভাল করেছিলাম। কিন্তু...’’। থেমে যায় জিতুর কথা।

অলিম্পিক্সের চাপ নিতে পারলেন না? এ বার যেন গর্জে ওঠেন খুব ছোট বয়সে সপরিবার নেপাল ছেড়ে লখনউয়ে চলে আসা জিতু। ‘‘একেবারেই না। কোনও চাপ ছিল না। সেনাদের সব ধরনের চাপ নেওয়া শিখতে হয়। সেটা আমি শিখেছি। কিন্তু...।’’ বারবার কিন্তু..কিন্তু করে থেমে যাচ্ছেন, তা হলে কি অন্য কোনও সমস্যা?

এ বার যেন ভেঙে পড়লেন জিতু। ‘‘অজুহাত বলবে সকলে। কেউ শুনতে চাইবে না। আসলে এখানকার শ্যুটিং রেঞ্জের হাওয়ার সঙ্গে আমি শেষের দিকে মানিয়ে নিতে পারিনি। হাওয়া চলার মধ্যেও আমি জাতীয় রেকর্ড করেছি। কিন্তু সেখানে এতটা হাওয়া ছিল না। থেমে থেমে বয়ে ছিল। আর এখানে তো টানা হাওয়া চলল,’’ দাবি করলেন বছর তেইশের জিতু। তবে এটা ঠিক যে, কোয়ালিফাইংয়ে প্রথম রাউন্ডগুলোয় খুব ভাল ফায়ারিং করে চারে উঠে গিয়েছিলেন জিতু। কিন্তু পরের দিকে এত খারাপ মারলেন যে আফসোসের আওয়াজ শোনা গেল গ্যালারিতে হাজির কিছু ভারতীয়ের গলায়। বারোয় শেষ করে ফাইনাল রাউন্ডে উঠতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে জিতু বলছিলেন, ‘‘আমি আজ পর্যন্ত যে-যে টুর্নামেন্টে পদকের লক্ষ্য নিয়ে গিয়েছি, সফল হয়েছি। এখানেই শুধু পারলাম না। অলিম্পিক্স আমাকে বড় শিক্ষা দিয়ে গেল।’’

জিতুর ইভেন্টে সেনাবাহিনীর সিইও এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী, আইওএ-র অনেক কর্তা— সবাই স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন জিতুর হাতে পদক দেখবেন বলে। ফেরার সময় তাঁরা সবাই জিতুকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে গেলেন, ‘‘এ বার হল না। সামনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পাওয়ার চেষ্টা করো।’’ কিন্তু অলিম্পিক্স পদক হারিয়ে বিশ্ব শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপের কোনও মূল্য কি আমজনতার কাছে আছে? শ্যুটিং এমন একটা খেলা যার প্রতি সাধারণ মানুষের টান গভীর নয়। অলিম্পিক্সে অভিনব-গগনরা পদক পেলে হইচই হয়, জয়দীপ কর্মকার অল্পের জন্য চতুর্থ হয়ে পদক হাতছাড়া করার পর দু’-চারদিন লেখালেখি হয় ভারতীয় মিডিয়ায়। ব্যাস, ওই পর্যন্ত!

রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর এবং বিজয় কুমারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই সেনা অ্যাকাডেমি থেকে অলিম্পিক্সে আসা জিতুর লক্ষ্য ছিল, অলিম্পিক্স পদক জয়ের ব্যাপারেও তাঁর দুই পূর্বসূরিকে স্পর্শ করবেন। তিনিও চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, রিওতে শ্যুটিং থেকে আদৌ কোনও পদক আসবে কি না? চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক্সে এসেছিল দু’টো। জিতু বললেন, ‘‘এখনও গগনসাবের দু’টো ইভেন্ট বাকি আছে। দেখুন কী হয়।’’

রিওর জন্য শ্যুটার-প্রতি গড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা সত্ত্বেও গেমস ছয় দিন গড়িয়ে যাওয়ার পরেও কোনও পদক নেই। এখানে হাজির আইওএ-র এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘শ্যুটিং থেকে আমরা পদক পাবই। দেখে নেবেন। কুস্তি, তিরন্দাজি, অ্যাথলেটিক্স, গল্ফ, ছেলেদের হকিতেও চান্স আছে।’’ তিনি আশায় থাকতেই পারেন। কিন্তু লন্ডনের চেয়ে বেশি পদক এ বার পাওয়া কোনও মতেই সম্ভব নয়। ভারতের অলিম্পিক্সের ১১৬ বছরের ইতিহাসে রিওতে বৃহত্তম দল পাঠানো সত্ত্বেও!

অন্য বিষয়গুলি:

Jitu Rai Rio Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE