পদক গলায়। সোনাজয়ী জিতু। ছবি: এএফপি
নজরকাড়া নাটকীয় জয় ব্যাপারটাকে এক রকম ট্রেডমার্কই করে ফেলেছেন তিনি। জুলাইয়ে কমনওয়েলথ গেমসে পঞ্চাশ মিটার পিস্তলে সোনা জিতেছিলেন চাঞ্চল্যকর গেমস রেকর্ড-সহ। শনিবার ইনচিওনের শুটিং রেঞ্জ থেকে ভারতকে এশিয়ান গেমসের প্রথম সোনাটাও নাটকীয় ক্লাইম্যাক্সেই এনে দিলেন জিতু রাই।
ভিয়েতনামের চ্যালেঞ্জারকে এক্কেবারে শেষ শটে পরাজিত করে!
এগারো নম্বর গোর্খা রেজিমেন্টের নায়েব-সুবেদারের স্বর্ণ মৃগয়ার আগে অবশ্য গেমসে ভারতের হয়ে প্রথম পদকটা জেতেন হরিয়ানার শ্বেতা চৌধুরী। কোরিয়ার শুল্ক দফতর তাঁর বন্দুক আটক করায় অচেনা বন্দুক নিয়ে লড়েও ব্রোঞ্জ জিতলেন।
তবু গ্লাসগো গেমসের পর এখানেও জিতে সোনার ডাবল করা জিতুই এ দিন ভারতীয় খেলাধুলোর সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে রইলেন।
পদক মুঠোয় ধরে উচ্ছ্বসিত সাতাশ বছরের ছেলে অকপট মেনে নিলেন, জিততে মরিয়া ছিলেন। “যে ভাবেই হোক সোনাটা চেয়েছিলাম। প্রতিযোগিতা এখানে বিশ্বকাপের চেয়েও কঠিন। মারাত্মক চাপ ছিল। সোনা জিততে পেরে আমি ভীষণ খুশি।” যশপাল রানার পর এশিয়াডে ভারতের হয়ে পিস্তলে দ্বিতীয় সোনা জিতে প্রাপ্তির আনন্দে উদ্ভাসিত জিতু।
চলতি বছরে অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে বিশ্বের এক নম্বর ও ৫০ মিটার পিস্তলের পাঁচ নম্বর। বিশ্বকাপে দু’টি রুপো, এক সোনা, কমনওয়েলথ গেমসে ৫০ মিটার পিস্তলে সোনা, একই ইভেন্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতে এখানে এসেছিলেন। এ দিন ফাইনালে হারালেন চিনা তারকা ওয়াং ঝিওয়েই আর দক্ষিণ কোরিয়ার দু’বারের অলিম্পিক ও এই মুহূর্তের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জিন জং ওহ-কে।
যোগ্যতা পর্বে সপ্তম হয়ে জিতু ফাইনালে ওঠেন। যেখানে লড়াইটা ভিয়েতনামের হোয়াং ফুয়োং নুয়েনের সঙ্গেও ছিল। চিন ও কোরিয়ার দুই মহাতারকা শুরুতেই সোনার যুদ্ধ থেকে ছিটকে যান। ফলে ব্যাপারটা জিতু বনাম নুয়েন দ্বৈরথে দাঁড়ায়। শেষ শটের আগে পর্যন্ত নুয়েনই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু প্রবল চাপের মুখে জিতু যেখানে শেষ গুলিতে ৮.৪ স্কোর করেন সেখানে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নুয়েনের স্কোর ৫.৮। মোট ১৮৩.৪ স্কোরে রুপোয় সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। ১৮৬.২ স্কোর করে সোনা ছিনিয়ে নেন জিতু। ব্রোঞ্জ চিনের ঝিওয়েইয়ের।
শ্যুটিংয়ে ব্রোঞ্জ জিতে স্বাতী।
এশিয়ান গেমসে শ্যুটিংয়ে সোনা জয়ী ভারতীয়দের তালিকায় রণধীর সিংহ, রঞ্জন সোধি, যশপাল রানার পর এল জিতুর নাম। জন্মসূত্রে নেপালি হলেও যিনি নিজেকে একশো ভাগ ভারতীয় মানেন। বলে থাকেন, “আমাকে সব কিছু ভারতই দিয়েছে,” ২০০৬-এ নেপালের গ্রাম ছেড়ে এসে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া জিতু সেনা-ট্রেনিংকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “সেনাবাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা আর শৃঙ্খলাই আমাকে সাফল্য দিচ্ছে।” পিস্তলের জাতীয় কোচ পাভেল স্মিরনভ অবশ্য বলছেন, “মানসিক ভাবে জিতু অসম্ভব শক্তিশালী। প্রচণ্ড চাপেও মাথা একদম ঠান্ডা রাখে। অনেক ক’টা বড় প্রতিযোগিতায় নামাও ওকে সাহায্য করল।” শ্যুটিং ও তিরন্দাজি দলের ট্রেনার বৈভব আগাসে আবার বলেছেন, “সেনা ট্রেনিংয়ের কারণে জিতুর ফিটনেস আর পেশির উপর নিয়ন্ত্রণ অসাধারণ। সেটাই ওকে লক্ষ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করে।”
জিতুর সাফল্যের পাশে অবশ্য ৫০ মিটার পিস্তলে ব্যর্থ ভারতের ওম প্রকাশ এবং ওঙ্কার সিংহ। যাঁরা যথাক্রমে ১০ এবং ১৬তম হওয়ায় দল হিসাবে চতুর্থ স্থানে থাকল ভারত।
মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলেও এক কাণ্ড। শ্বেতা দেশকে প্রথম পদক দিলেও চূড়ান্ত ব্যর্থ এই ইভেন্টের অপর দুই তারকা হিনা সিধু ও ষোলো বছরের মালাইকা গোয়েল, যাঁরা যথাক্রমে ১৩ এবং ২৪তম হন। ফলে দলগত লড়াইয়ে চোদ্দো টিমের মধ্যে পঞ্চম হল ভারত।
শ্বেতা অবশ্য শ্যুট-অফে ব্রোঞ্জ জেতার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন। বলেছেন, “আজ পর্যন্ত আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য। ভারতের প্রথম পদক জেতাটাও গর্বের। রুপোর লক্ষ্যে লড়ছিলাম। ফাইনালের মাঝপথে মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলি। যাই হোক, ব্রোঞ্জও মন্দ নয়।” পিস্তলের সিরিয়াল নম্বর না মেলায় তিন দিন আগে তাঁর পিস্তল আটক করেন কোরিয়ার শুল্ক কর্তারা। শ্বেতা বলেছেন, “ক’দিন আগে নতুন পিস্তল নিয়েছি। হতে পারে পুরনো সিরিয়াল নম্বরই পাঠানো হয়েছিল। গত তিন দিন এ ব্যাপারে আলোচনার পরে আজ নিজের পিস্তল যখন ফেরত পেলাম, প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাই অন্য পিস্তলেই লড়েছি।”
এক নজরে প্রথম দিন
• শ্যুটিং: পুরুষদের ৫০ মিটার পিস্তলে জিতু রাইয়ের সোনা। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ব্রোঞ্জ শ্বেতা চৌধুরীর।
• ব্যাডমিন্টন: সাইনা নেহওয়াল, পি ভি সিন্ধুরা দলগত ইভেন্টের সেমিফাইনালে। মহিলা দলের ব্রোঞ্জ নিশ্চিত। প্রথম রাউন্ডে ম্যাকাওকে ৩-০ হারিয়ে শেষ আটে উঠে ভারত ৩-২ হারায় তাইল্যান্ডকে। শেষ চারে সামনে দক্ষিণ কোরিয়া। পুরুষরা হারে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে।
• স্কোয়াশ: মেয়েদের সিঙ্গলসে সেমিফাইনালে ওঠার যুদ্ধে দীপিকা পাল্লিকাল বনাম জ্যোৎস্না চিনাপ্পা। ব্রোঞ্জ নিশ্চিত। পুরুষদের সিঙ্গলসের শেষ আটে সৌরভ ঘোষাল।
• হ্যান্ডবল: গ্রুপের ম্যাচে চিনা তাইপের কাছে ২০-৩৯ হার।
• জুডো: নভজ্যোৎ চানা হারলেন শেষ ষোলোয়। কোয়ার্টার ফাইনালে থোউডাম কল্পনা দেবীর হার। রেপেশাজে জিতেও ব্রোঞ্জের ম্যাচে ব্যর্থ লিকমাবাম সুশীলা দেবী।
• বাস্কেটবল: প্রাথমিক রাউন্ডে প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ৮৯-৪৯ জিতলেন ছেলেরা।
• ভারোত্তোলন: সুখেন দে, সাইখোম মীরাবাঈ চানু ও খুমুকচাম সঞ্জিতা চানু শেষ করলেন যথাক্রমে পঞ্চম, নবম ও দশম স্থানে।
• টেনিস: প্রথম রাউন্ডে মেয়েরা টিম ইভেন্টে ৩-০ হারাল ওমানকে।
• ভলিবল: প্রথম রাউন্ডে পুরুষরা হারাল হংকংকে। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে মেয়েদের হার।
• ইকুয়েস্ট্রিয়ান: ড্রেসাজ টিম প্রি-তে ষষ্ঠ স্থান।
• উশু: সানাথই দেবী ইয়ুমনাম উজবেক মুবারক কামালোভাকে হারিয়ে ৫২ কিলোগ্রাম সান্দার শেষ আটে। সান্দার ৬০ কেজি বিভাগে নেপালের মঙ্গল প্রসাদ থারুকে হারিয়ে শেষ আটে ভারতের নরেন্দ্র গ্রেওয়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy