Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Sports News

বিশ্বকাপের জন্য কতটা তৈরি যুবভারতী?

বছর ঘুরতে চলল, অথচ হাল্কা শীতের বিকেলে চিনেবাদাম খেতে খেতে নিজের দলের জন্য গলা ফাটাননি কোনও সমর্থক। বাইপাস থেকে সল্টলেক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েনি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ টিকিটের কালোবাজারি।

যুবভারতী স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত।

যুবভারতী স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ২৩:১৯
Share: Save:

সময় গড়িয়েছে, কিন্তু বল গড়ায়নি একটাও।

বছর ঘুরতে চলল, অথচ হাল্কা শীতের বিকেলে চিনেবাদাম খেতে খেতে নিজের দলের জন্য গলা ফাটাননি কোনও সমর্থক। বাইপাস থেকে সল্টলেক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েনি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ টিকিটের কালোবাজারি। বাংলার সব রাস্তা এসে মিশে যায়নি কলকাতা ফুটবলের প্রাণকেন্দ্রে। হিউম-দ্যুতিদের গোলে চিৎকারে আত্মহারা হয়ে ওঠেনি গোটা স্টেডিয়াম। ফুটবল মরসুমে গমগম করা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কেমন যেন থমকে গিয়েছে! কোথাও করাতের কান ধাঁধাঁনো শব্দ, তো কোথাও আবার ড্রিল মেশিনের টানা ধাতব আওয়াজ। ফুটবলের নয়া উৎসবের জন্য সাজছে সে।

অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে ভারতে। খেলা হবে কলকাতাতেও। সেই মর্মে ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে ফিফা-র। তাই ঢেলে সাজানো হচ্ছে ভারতীয় ফুটবলের গর্ব এই স্টেডিয়ামকে। ভারতের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের আসর বলে কথা। হোক না তা যুবদের। তবু, বিশ্বকাপ তো বটে!

হেমন্তের রোদ পড়া বিকেলে স্টেডিয়াম চত্বরে ঢুকতেই গা ছমছম করে উঠল। নিঃস্তব্ধ। প্রায় জনমানবহীন। স্টেডিয়ামের চেহারাটা এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপের আকার নিয়েছে। ভিআইপি গেটের ডান দিকের অংশ পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই গেটের পাশেই ছোট্ট একটি দোকান চালাতেন এক দৃষ্টিহীন দম্পতি। খুঁজে পাওয়া গেল না তাঁদেরও। দোকানের সামনে এখন ডাই করা ইটের স্তূপ। ভাঙা পড়েছে স্টেডিয়ামের ভিতরে থাকা সরকারি অফিসও। সে দিকের দুটো ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস ঘরের আর কোনও অস্তিত্বই নেই। আইএসএল সরে গিয়েছে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে।

১৯৮৪-র ১১ জানুয়ারি নেহরু কাপের ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হয়েছিল এই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের। তার পর অনেক ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে এই স্টেডিয়াম। সে আন্তর্জাতিক ম্যাচই হোক বা বিশ্ব ফুটবল-ডার্বির ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলা— ভালমন্দ মিশিয়ে নানা ফুটবল মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। এ বার সেই স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের স্বাদ পাওয়ার অপেক্ষায়।

বাঁ প্রান্তের দুটো ড্রেসিংরুমকে বিশ্বমানের বানিয়ে ফেলা হয়েছিল তিন বছর আগেই। সৌজন্যে আইএসএল। ওই দুইকে অটুট রেখেই বাকি কাজ করা হচ্ছে। নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে মাঠে ঢোকার টানেল। এমনকী, গ্যালারিও। বসানো হয়েছে হাল্কা নীল রঙের বাকেট চেয়ার। প্রেসবক্সেরও জায়গা বদল হচ্ছে। পাল্টে গিয়েছে মাঠও। আর্টিফিশিয়াল টার্ফ তুলে লাগানো হয়েছে নতুন বারমুডা ঘাস। আনা হয়েছে সেই মার্কিন মুলুক থেকে। বিশ্বকাপ ঘাসের মাঠেই খেলা হবে। ১৯৮৪ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ঘাসেরই মাঠ ছিল যুবভারতীতে। ২০১১তে এখানে টার্ফ বসানো হয়। ২০১৫-য় বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই সেই টার্ফ তুলে আবার ঘাসের মাঠ করা হয়। নতুন মাঠ অনেকটাই তৈরি। বাকি কাজ চলছে জোরকদমে। তৈরি হওয়ার পর থেকে এই প্রথম অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাককেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে নতুন করে। স্টেডিয়ামে কর্মরত এক জন বললেন, ‘‘সকাল ন’টা থেকে কাজ শুরু করি। শেষ হয় রাত ১০টায়। আবার পর দিন সকালে চলে আসি। দিন-রাত কাজ চলছে।’’

এই মুহূর্তে যুবভারতীর ছবি। -নিজস্ব চিত্র।

৩১ জানুয়ারির মধ্যে স্টেডিয়াম পুরো তৈরি করে ফিফা-র হাতে তুলে দেওয়ার কথা। সাময়িক ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। জানুয়ারিতে আবার ফিফা-র প্রতিনিধিরা দেখে সবুজ সিগন্যাল দেবেন। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অবশ্য এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তাঁর দাবি, সময়ের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে পুরো স্টেডিয়াম।

আর তাই ভারতের বিশ্বকাপ না খেলতে পারার আফসোস হয়তো কিছুটা কমবে এ বার। অতীতে বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচ হয়েছে এই যুবভারতীতে। সেটা ১৯৮৫ সাল। শেষ আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি হয়েছে ২০১১-য়। সে বারই আর্জেন্তিনা-ভেনেজুয়েলার ম্যাচ দেখেছিল কলকাতা। দেখেছিল মেসি, ডি’মারিয়া, আগুয়েরোদের। এক লাখ ২০ হাজারের ভর্তি গ্যালারি দেখেছে সব ডার্বি। ১৯৯৭-এর ১৩ জুলাই সর্বোচ্চ এক লাখ ৩১ হাজার দর্শক দেখেছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ। তবে, এ বার বিশ্বকাপের জন্য গ্যালারিতে আসনের সংখ্যা কমবে।

পেলে, মারাদোনা, অলিভার কান, বেবেতো, বেটো থেকে লিওনেল মেসির পা পড়েছে এই স্টেডিয়ামে। আবার এই স্টেডিয়াম সাক্ষী থেকেছে ডার্বি ঘিরে রক্তাক্ত মুহূর্তের। কখনও সেই তালিকায় নাম ঢুকেছে কোনও সমর্থকের, ছাড় পাননি ফুটবলারেরাও। এ বার নতুন এক লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৩ বছরের এই ক্রীড়াঙ্গন।

পছন্দ হলে বিশ্বকাপের ফাইনাল ভেন্যু হতে পারে এই যুবভারতী, তাও জানিয়ে দিয়েছে ফিফা। সেই লক্ষ্যেই জোরকদমে চলছে স্টেডিয়ামের কাজ। নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় এই শহর। ভারতীয় ফুটবলের মক্কার এ বার শুধু স্বপ্ন দেখার পালা।

আরও খবর

যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য যুবভারতীকে সবুজ সঙ্কেত দিল ফিফা

অন্য বিষয়গুলি:

U17 World Cup Yubabharati Stadium Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE