মারমুখী: হেরে গেলেও নারাইন ঝড় চলল। ছবি: সুমন বল্লভ।
১৯৯২ বিশ্বকাপে মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ড। মার্ক গ্রেটব্যাচকে দিয়ে ওপেন করানোর পাশাপাশি অফস্পিনার দীপক পটেলের হাতে নতুন বল তুলে দিয়ে চমক দেওয়া।
এর পর ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কা। ওয়ান ডে ক্রিকেটের ভাষাটাই পাল্টে দিয়ে গিয়েছিল তারা। সনৎ জয়সূর্য আর কালুভিথর্নে সে বার শুধু ক্রিকেট খেলেননি। বিপ্লবী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা আসার আগে গোটা দুনিয়া জানত, শেষ ১০ ওভারে স্লগে গিয়ে অলআউট আক্রমণ করতে হবে। যেমন একটা সময়ে সবাই জানত, পৃথিবীকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে সূর্য।
জয়-কালু জুটি চোখ খুলে দিয়েছিল ওয়ান ডে পিপাসুদের যে, শেষের ১০ ওভারের চেয়েও বেপরোয়া ভাবে বল্লা চলবে প্রথম ১৫ ওভারে। যখন ফিল্ডাররা বৃত্তের মধ্যে থাকবে। শ্রীলঙ্কান ওপেনাররা অভিনব এই স্ট্র্যাটেজিতে বিশ্বকাপ নিয়েই চলে গিয়েছিলেন! সেই সঙ্গে ওয়ান ডে ক্রিকেটের স্কোর-মিটারও অনেক ওপরে চড়িয়ে দিয়ে গেলেন তাঁরা।
ইডেনে শুক্রবার বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ ছিল না। ছিল আইপিএলে শাহরুখ খানের নাইটদের সঙ্গে গুজরাতের সিংহদের লড়াই। আইপিএলের নামের পাশে আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতিও নেই। তা না থাকুক, সুনীল নারাইন নামক নতুন বিস্ময়ের হাত ধরে নিঃশব্দ বিপ্লবই ঘটে যাচ্ছিল ইডেনে। নারাইন টিকলেন মাত্র ১৭ বল। তার মধ্যেই ন’টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে করলেন ৪২। কিন্তু চার বা ছক্কা নয়, তার সেরা শট ক্রিকেট মাঠের বাউন্ডারি ছাপিয়ে সম্ভবত আরও বড় ক্যানভাসে গিয়ে আছড়ে পড়ল।
গ্রেটব্যাচ বা জয়সূর্যদের মতো নারাইনের হাত ধরে ফের পাল্টে যাচ্ছে সীমিত ওভারের ক্রিকেট। জয়সূর্য-রা বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন একদিনের ক্রিকেটে। নারাইন কেরামতি দেখাচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে। জয়সূর্য-কালুভিথর্নে দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে প্রথম পনেরো ওভারের ফায়দা তুলতে হয়। নারাইনের মাধ্যমে কেকেআর দেখিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে-তে সুবিধে তুলতে হয়। শুরুর ছয় ওভারে ঝুঁকি নিয়ে বেপরোয়াদের পাঠাতে হবে, নতুন টি-টোয়েন্টি নকশা এটাই।
এত দিন এমনকী, টি-টোয়েন্টির মতো ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটেও ওপেনিংটা বিশেষজ্ঞের কাজ বলে মনে করা হতো। আইপিএলেও প্রায় সব দলে ইনিংস ওপেন করেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানেরা। ক্রিস গেল বা ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আছেন কিন্তু তাঁরা কেউ নারাইনের মতো বোলার নন। শুক্রবার নারাইনের স্ট্রাইক রেট যেমন ছিল ২৪৭.০৫। কোনও ব্যাটসম্যান পাঠিয়ে এমন স্ট্রাইক রেট সম্ভব কি? মনে হয় না। কেকেআর অন্দরমহলে শুরুতে ঝড় তোলার এই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয় এ বারের আইপিএলের প্রস্তুতি শিবিরে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট দেখে, গৌতম গম্ভীর ও রবিন উথাপ্পা দারুণ সফল ওপেনিং জুটি হতে পারে। কিন্তু তাঁদের স্ট্রাইক রেট খুবই কম। দেখা যায়, পাওয়ার প্লে-তে খুবই কম রান তুলেছেন তাঁরা।
আগের বার পর্যন্ত সেই ঘাটতি পুষিয়ে যেত কারণ মাঝের দিকে আন্দ্রে রাসেলের মতো বিগহিটার ছিলেন। বেশির ভাগ ম্যাচে রাসেল ও ইউসুফ পাঠানের ঝড়ে বড় রান তুলতে পেরেছে নাইট রাইডার্স।
এ বার রাসেলকে পাওয়া যাবে না বুঝেই নতুন স্ট্র্যাটেজি করা দরকার ছিল। সিদ্ধান্ত হয়, গম্ভীর ও উথাপ্পার সফল জুটি ভেঙে ফেলা হবে। ক্রিস লিন-কে বেছে নেওয়া হয় গম্ভীরের নতুন পার্টনার হিসেবে। লিন চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়ার পরেও ফেরানো হয়নি গম্ভীর-উথাপ্পা জুটিকে। পরিবর্তনের ফল? এ বারে আট দলের মধ্যে পাওয়ার প্লে-তে রান তোলার হিসেবে শীর্ষে কেকেআর। ওভার প্রতি প্রায় ১০ রান করে তারা তুলছে পাওয়ার প্লে-তে। এমনকী, ক্রিস গেলের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের চেয়েও এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে তারা।
লিন চোট না পেলে হয়তো নারাইন নামক নতুন ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণই হতো না! শুক্রবারের ইডেনে সুরেশ রায়নার ব্যাটিং বিক্রমের কাছে হারের পর কেউ কেউ আবার বলবেন, ক্রিকেট ব্যাকরণই তো শেষ পর্যন্ত জিতল ফাটকার বিরুদ্ধে। সে যা-ই বলা হোক, আইপিএল নামক বিনোদনে চিরস্থায়ী ভাবে লেখা হয়ে থাকছে নারাইনের নাম। শুধু বিস্ময় বোলিংয়ের জন্য নয়। ব্যাট হাতে আরও চমকে দেওয়ার জন্য। সুনীল গাওস্করের নামে নামাঙ্কিত তিনি ওপেনারের বেশভূষায় আবির্ভূত না হলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে শিহরিত করা এই বিপ্লবটাই যে ঘটত না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy