উৎসব: দিল্লিকে হারিয়ে ড্যারেন ব্র্যাভোর কোলে মণীশ। ছবি: বিসিসিআই
ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অবিশ্বাস্য একটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সঞ্জু স্যামসনের শরীরটা হাওয়ায় উড়ে বাউন্ডারি লাইন টপকে যাচ্ছে। ওই অবস্থায় বলটা ও মাঠের মধ্যে ছুড়ে দিল। একটা নিশ্চিত ছয় হল না। চারটে রান বেঁচে গেল। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওটা ছয় হলে ম্যাচটা এত উত্তেজনার হয় না।
কেকেআর ম্যাচ হারলে ওটাই টার্নিং পয়েন্ট হতো। সেটা হল না, কারণ গৌতম গম্ভীরের হাতে দু’টো স্টেপনি থাকায়! স্টেপনি হল গাড়ির সেই বাড়তি টায়ারটা, যেটা বিপদের সময় আপনার কাজে আসে। টায়ার পাংচার হয়ে গেলে ডিকি খুলে স্টেপনিটা বার করুন আর টায়ার বদলে ফেলুন। গাড়ি আবার দৌড়বে।
গম্ভীরের হাতে এ রকমই দু’টো স্টেপনি আছে। এক জন মণীশ পাণ্ডে। অন্য জন সুনীল নারাইন। যখন যেখানে প্রয়োজন হয়েছে, এই দু’জন কাজের কাজটা করে দিয়েছে।
সোমবার কোটলায় যে রকম হল। ১৬৯ রানের লক্ষ্যটা বড় ছিল না। কিন্তু শুরুতে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কেকেআর। প্রথমে ওদের ম্যাচে ফেরাল মণীশ-ইউসুফ পাঠানের ১২ ওভারে ১১০ রানের পার্টনারশিপটা। কিন্তু ইউসুফ যতই হাফ সেঞ্চুরি করুক, মনে হয়েছিল ও ম্যাচ শেষ করে আসতে পারবে না। যে ক্ষমতাটা মণীশের আছে।
মণীশ এই কলকাতা টিমটার ব্যাটিং ইঞ্জিন। বছর তিনেক আগের আইপিএল ফাইনাল থেকে শুরু করে ও প্রচুর ম্যাচ নাইটদের জিতিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করার পরে আত্মবিশ্বাসটাও প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। এখন ম্যাচ শেষ করে আসছে। দিল্লির বিরুদ্ধে যেমন করল।
আরও খবর: দিল্লির বিরুদ্ধে জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক সেরে ফেলল কেকেআর
মণীশের সবচেয়ে বড় দু’টো গুণ হল, ওর ডাকাবুকো মনোভাব আর ক্রিকেটীয় শট খেলার ক্ষমতা। সোমবার কোটলায় যে দু’জন ব্যাটসম্যান সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটীয় শট খেলল তাদের এক জন সঞ্জু স্যামসন, অন্য জন মণীশ।
শেষ ওভারে যখন ৩ বলে ৮ রান বাকি, মণীশ কিন্তু কোনও স্লগ করেনি। বলটার জন্য অপেক্ষা করে লিফট করল। তবে ওই ছয়টার জন্য আমি মণীশের পাশাপাশি ওর ক্রিকেট অস্ত্র-কেও নম্বর দেব। মানে মণীশের ব্যাটকে আর কী! ও বলটা পুরোপুরি পায়নি। তবু হিট করল। পুরনো দিনের ব্যাট হলে হয়তো বলটা বাউন্ডারি লাইন পার হতো না। কিন্তু তার জন্য মণীশের কৃতিত্ব একটুও কমছে না।
এ বারের আইপিএলে নারাইনকে কিন্তু আবার ভয়ঙ্কর লাগছে। অ্যাকশন শুধরে আসার পরেও দেখছি ব্যাটসম্যানরা ওকে ঠিক বুঝতে পারছে না। সোমবারও সেটাই দেখলাম। ৪ ওভারে ২০ রানে এক উইকেট সেটারই প্রমাণ। বিপদের সময় নারাইন গম্ভীরের বড় পরিত্রাতা হবে। সেটা পাওয়ার প্লে-তেই হোক বা ডেথ ওভারে।
রক্ষাকর্তা: উড়ে গিয়ে বাউন্ডারি বাঁচাচ্ছেন সঞ্জু স্যামসন। ছবি: বিসিসিআই
কোটলার এই উইকেট তৈরির দায়িত্বে আছে অঙ্কিত দত্ত। একটু স্লো হলেও পিচটা কিন্তু বেশ ভাল। তাই শাহবাজ নাদিম-কে কেন জাহির খান-রাহুল দ্রাবিড় বসিয়ে দিল, বুঝলাম না। ওদের ওই সিদ্ধান্তটা মানতে না পারলেও শেষ ওভারটা অমিত মিশ্র-কে দেওয়া নিয়ে আমি একমত। তখন ক্রিস ওকস স্ট্রাইকে ছিল। অমিতের বলে ইংরেজ অলরাউন্ডারের পক্ষে শট নেওয়া কঠিন ছিল। ওক্সের উইকেটটাও মিশ্র পেল। এমনকী যে বলে দিল্লির লেগস্পিনার ছয়টা খেল, সেটাও খারাপ করেনি। অফ স্টাম্পের বাইরে রেখেছিল। যাতে কাট করতে বাধ্য হয় মণীশ। তার মানে সিঙ্গল আর কী। মণীশ সেই বলটাই উড়িয়ে দিল।
দিল্লি হারলেও ওদের ঋষভ পন্থের কথা বলতেই হবে। ছেলেটা ভারতের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারকে হেলায় পিটিয়ে দিল। মিড উইকেটের ওপর দিয়ে যে ওভার বাউন্ডারিটা মারল, সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে ওর কব্জির কী জোর। আর কী নিখুঁত টাইমিং করার ক্ষমতা। ওই ওভারে উমেশের থেকে ২৬ রান নিল ঋষভ। তিনটে ওভার বাউন্ডারি, দু’টো বাউন্ডারি। কিপিংটাও দারুণ করল। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাতীয় দলে ঢোকাটা ওর সময়ের অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy