রিঙ্কু সিংহের সঙ্গে শাহরুখ খান। —ফাইল চিত্র
রিঙ্কু সিংহকে কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথম কিনেছিল ২০১৮ সালে। সেই সময় তাঁর নাম ভারতীয় ক্রিকেটে কত জন শুনেছে সেটাই ছিল সন্দেহের। এমন এক জন ক্রিকেটারের উপর টাকা ঢালা কি কেকেআরের উচিত হয়েছে? সেই সব প্রশ্নের উত্তর রবিবারের ম্যাচ। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে পাঁচ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতালেন রিঙ্কু সিংহ।
গত বছর রিঙ্কু সব থেকে বেশি ম্যাচ খেলেন নাইটদের হয়ে। সাতটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। করেন ১৭৪ রান। এর আগে তিন বছরে মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলে তিনি করেছিলেন ৭৭ রান। তাঁর সেই উত্থানের পিছনে কী ধরনের পরিশ্রম রয়েছে? গত বছর ইডেনে বসে আনন্দবাজার অনলাইনকে রিঙ্কু বলেছিলেন, “আমি আলাদা কিছু করার চেষ্টা করিনি। হাঁটুতে একটা চোট ছিল আমার। সেটা বেশ কিছু দিন ভুগিয়েছে। কিন্তু সেই সময়টাতেই আমি অনেক কিছু শিখেছি। কঠিন সময়টা দেখেছি। আইপিএলের আগের সাত মাসে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। রাজ্যের হয়ে খেলতে নেমেও রান পেয়েছি। আইপিএলেও পেয়েছি।”
উত্তরপ্রদেশের রিঙ্কু বাঁহাতে ব্যাট করেন। অফ ব্রেক বলও করতে পারেন। কিন্তু যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার, সেখানে ক্রিকেট খেলাটাই একটা যুদ্ধ ছিল। আইপিএলে দল পাওয়া তো সোনার পাথরবাটি। রিঙ্কুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। লখনউয়ে দু’টি ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে রিঙ্কুর সংসার। দু’বেলা ঠিক মতো খাবার জুটত না। রিঙ্কুর দাদা ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখা ভাইকে এক জায়গায় ঝাড়ুদারের কাজে ঢুকিয়ে দেন। রিঙ্কু যদিও দমে যাননি। তিনি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে। লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন তাঁর রাজ্যের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১৬ সালে।
1,6,6,6,6,6! Lord Rinku 🤩#GTvKKR | #AmiKKR | #TATAIPL 2023 pic.twitter.com/eW87VQUtHe
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) April 9, 2023
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অভাবের সংসারে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখাও বিলাশিতা। রিঙ্কু সিংহ তবুও স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন সত্যি করার যাবতীয় চেষ্টাও করেছেন। রিঙ্কুর বাবা লোকের বাড়িতে সিলিন্ডার বণ্টন করতেন। অভাবের সংসারে কিছুটা সাহায্য করার জন্য এক সময় তাঁকে কোচিং ক্যাম্প পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। লজ্জায় সেই চাকরি করতে পারেননি রিঙ্কু। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। এখন তিনি কেকেআরের ভরসা হয়ে উঠেছেন। ম্যাচ জেতাচ্ছেন।
একটা সময় কেকেআরের প্রথম একাদশে দেখা যেত না রিঙ্কুকে। কিন্তু তিনি বার বার আলোচনায় উঠে আসতেন তাঁর ফিল্ডিংয়ের জন্য। কেকেআরে যোগ দেওয়ার পরের কয়েক বছর একাধিক ম্যাচে ফিল্ডিং করেছেন রিঙ্কু। দুর্দান্ত সব ক্যাচ নিয়েছেন। নজর কেড়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ প্রায় খেলেননি (২০২২ সাল বাদে) বললেই চলে। আসলে কোটিপতি লিগে তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটাররা যখন অধিনায়ক হয়ে গিয়েছেন, রিঙ্কু শুধু ফিল্ডিং করেছেন। নিজের ফিল্ডিং সম্পর্কে রিঙ্কু বললেন, “আমি ফিল্ডিংটা খুব উপভোগ করি। যত বেশি উপভোগ করবে, তত ভাল ফিল্ডিং করা সম্ভব। আমি সেটাই করার চেষ্টা করি।”
চেষ্টা করেন রিঙ্কু। লড়াই করার চেষ্টা। নিজের জীবন থেকেই সেই রসদ পেয়েছেন। যে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে উঠে এসেছেন, ক্রিকেট মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান। দলকে জেতানোর। রবিবার পেরেছেন। শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মারলে জিততে পারত কলকাতা। এমন অবস্থায় পাঁচটি ছক্কাই মারলেন রিঙ্কু। জেতালেন দলকে। কেকেআর যে এত বছর ধরে তাঁর উপর বিশ্বাস রেখেছে, সেটার ফল পাচ্ছে। তাঁর উপর বিশ্বাস রাখার মর্যাদা দিচ্ছেন রিঙ্কু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy