গুরুর ক্লাসে। শনিবার ইডেনে পন্টিং-রোহিত।
‘হ্যালো, চেক... ওয়ান... টু... ফাইভ... সিক্স... সিক্সটি সিক্স।’
ইডেন-টাইম বলছে, সন্ধে ছ’টা। মাঠের মধ্যভাগে একটা বিশালাকৃতি স্টেজ। আইপিএলের কিছু বড়-মেজ-সেজ কর্তা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটার পর একটা গান বাজছে। গ্যালারির গায়ে, ক্লাবহাউস গেটে এত দিন যে কেকেআরের বিরাট পোস্টার দেখা যেত, সমস্ত নামিয়ে ফেলা হচ্ছে ঝটপট। ‘ফাইনাল ২০১৫’ লেখা নতুন ব্র্যান্ডিং দ্রুত দখল নিচ্ছে ইডেনের। নতুন রং, নতুন আমেজ, নতুন ‘লুক অ্যান্ড ফিল’।
রোহিত শর্মাকে ঠিক তখনই দেখা গেল ইডেন বাইশ গজের দিকে হাঁটতে। ঘাসে ঢাকা পিচের পাশে হাঁটু মুড়ে বসে কিউরেটরের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এ বার পুরো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, রিকি পন্টিংয়ের পিছন পিছন। শোনা গেল, টিমের বিদেশিদের কেউ কেউ প্র্যাকটিসে নামার আগে গড়িমসি করছিলেন। পন্টিং তাঁদের নাকি বলে দেন, দশ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে গোটা টিমকে মাঠে দেখতে চান। কারণ আইপিএলটা তিনি জিততে এসেছেন। আর সেই যুদ্ধে ন্যূনতম ঢিলেমি বরদাস্ত করবেন না!
শুনলে ‘পান্টার’কে ঘিরে যেমন বাড়তি সম্ভ্রমের বৃত্ত তৈরি হবে, ঠিক তেমন একটা ভ্রমও ভেঙে যাবে। রবিবাসরীয় ইডেন শুধু দু’মাসব্যাপী তেওহারের অন্তিম রজনী দেখছে না। ঘরের টিমের সাম্রাজ্যে ভিন-রাজ্যের অতিথিদের ঢুকে পড়া দেখছে না। আইপিএল ট্রফির মালিকানা দখলের মরণপণ যুদ্ধও দেখছে।
যে মহাযুদ্ধের প্রাক্-লগ্নে কিছুটা হলেও আইপিএলের জার্মানিকে বিবর্ণ দেখাচ্ছে আইপিএলের আর্জেন্তিনার পাশে!
জার্মানি— সিএসকে। এমএসডির টিমের ধারাবাহিকতা টুর্নামেন্টে আর কারও নেই। আট বারে ছ’টা ফাইনাল খেলছে চেন্নাই, চ্যাম্পিয়ন এখনও পর্যন্ত দু’বার। এবং মুম্বইকে ‘আর্জেন্তিনা’ বলতে হচ্ছে কারণ টিমটা ক্রিকেট-আবেগের আরবসাগর। সচিন তেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, অনিল কুম্বলে, জন্টি রোডস— সাপোর্ট স্টাফেই এত হীরকদ্যূতি যে, প্রথম এগারো দেখার আগেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। ফর্ম, পারফরম্যান্স, মনন সব বিচার করলে পূর্বাভাসে ধারাবাহিকতার চেয়ে আবেগকেই এগিয়ে রাখতে হবে।
দুপুরে সুরেশ রায়না বলছিলেন, দু’বছর আগের ফাইনাল টিমের মনে আছে। অদৃশ্য ইঙ্গিত ছেড়ে রাখলেন, দু’বছর আগের কলকাতা ফাইনালে যন্ত্রণার প্রতিশোধ নেবে টিম। কিন্তু তার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ টিমে থাকা দরকার। যেটা নাকি থাকছে না। শোনা গেল, সিএসকে ম্যানেজমেন্টের এক মহাকর্তা টিম মিটিংয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়ে বুঝিয়েছেন, এই ট্রফিটা টিমের স্বার্থে কতটা দরকার। টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ বলছিলেন, অবস্থা সুবিধের নয়। শ্রীনিকে নিয়ে যে মনোভাব পোষণ করছে বর্তমান ভারতীয় বোর্ড, তাতে বিচারপতি লোঢা কমিশনের রিপোর্ট বিরুদ্ধে গেলে সিএসকের বাঁচা নাকি মুশকিল হতে পারে। সঙ্কটমোচনের উপায়— ট্রফিটা জেতা। যা হলে চ্যাম্পিয়ন টিমের গায়ে হাত দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— তিনি নিজেও কি চাপে? মন্তব্য অনুচিত, কারণ উত্তর নেই। কয়েকটা ব্যাপার শুধু বলা যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে সিএসকে অধিনায়কের আসার কথা থাকলেও এলেন না। ইডেন— সেখানেও পিচ-টিচ দেখতে তাঁকে ঢুকতে দেখা গেল না। দু’জন সাপোর্ট স্টাফ গোপনে পিচ দেখে গেলেন।
শহরে ধোনি-পরিবার। ইডেনে আজ আইপিএল ফাইনাল, চেন্নাই সুপার কিংগস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
জামাই ষষ্ঠীর দিনে কি জামাইয়ের হয়েই গলা ফাটাবে কলকাতা?
মুম্বইয়ের আবার কিছু গোপন নয়। আড়ালে-আবডালে নয়। পিচ নিয়ে প্যাঁচালো প্রশ্ন, জবাবে তাচ্ছিল্য মেশানো পাল্টা। টিমের লক্ষ্যবস্তু নিয়ে জিজ্ঞাসায় বলে দেওয়া, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে মুম্বই ফাইনালে নামছে না। নামছে, দ্বিতীয় বার ট্রফিটা তুলতে। এবং প্রথম উত্তরদাতার নাম রোহিত শর্মা হলে, দ্বিতীয় জন পন্টিং। এমনিতেই বর্তমান ইডেনের অলিখিত ‘বাদশা’ রোহিত। মে মাসের ইডেন উইকেট ভাবাচ্ছে কি না জিজ্ঞেস করায় যে হাসিটা দিলেন, সম্রাটকেই মানায়। ‘‘কী আর আলাদা হবে। এখানে সবাই খেলে খেলে অভ্যস্ত।’’ শুধু একটা কথা পরিষ্কার করে গেলেন। এই মঞ্চের জন্যই এত যুদ্ধ, এত খাটাখাটনি। এর পর হেরে যাওয়া মানে, দেড় মাসের সব চেষ্টা ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। টিমের কাছে ক্যাপ্টেন এখন একটাই জিনিস চান— ‘ওয়ান লাস্ট এফর্ট।’
এর পরে আইপিএলের জার্মানি-আর্জেন্তিনা তুলনা আর কানে লাগে কি? আবেগের ক্যাপ্টেনের স্বপ্ন শুধু এখন রিও ফাইনালের কোনও এক জনের মতো ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে না গেলেই হল!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy