Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Heather knight and Mithali Raj

ডাকাবুকো এক অধিনায়কের স্বপ্নের উড়ান

সেনা পরিবার থেকে মিতালির ক্রিকেটার হওয়ার কাহিনিও বেশ চমকপ্রদ। ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছেন মেয়েদের ‘তেন্ডুলকর’।

আত্মবিশ্বাসী ভারতের ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ। ছবি: রয়টার্স।

আত্মবিশ্বাসী ভারতের ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ। ছবি: রয়টার্স।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৭:০৯
Share: Save:

তিরাশির পঁচিশে জুন। ছ’মাসের মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে টিভিতে কপিলদেবের দলের বিশ্বজয় দেখতে স্ত্রী লীলাকে নিয়ে বসে পড়েছিলেন বায়ুসেনার আধিকারিক দোরাই রাজ।

চৌত্রিশ বছর পর, রবিবার বিকেলে সেই লর্ডসেই মেয়েদের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপটা ভারতে আনতে দোরাই রাজের সেই ‘ছোট্ট’ মেয়েটা— মিতালি রাজ-এর নেতৃত্বেই মাঠে নামবেন এগারোজন ভারতীয়।

শনিবার থেকেই যার জন্য শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা ভারতের প্রার্থনা। এসেছে সচিন তেন্ডুলকর থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহালিদের শুভেচ্ছা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রচারমাধ্যমের দৌরাত্ম্যও। এতেই ঘুম ছুটেছে দোরাই-লীলা-র।

শনিবার বিকেলে হায়দরাবাদের বাড়িতে আনন্দবাজারের ফোনটা ধরেই মিতালির মা তাই বলে দেন, ‘‘ঘরে এখনও গোটা পঁচিশ টিভি চ্যানেল রয়েছে। রাতে ফোন করুন।’’

রাতে ফোন ধরেই মিতালি রাজের বাবা দোরাই প্রথমেই বলে ওঠেন, ‘‘খুব টেনশন হচ্ছে। আপনারা সবাই প্রার্থনা করুন মিতালির দলের জন্য।’’ আর মা লীলা বলে বসলেন, ‘‘ঘুম থেকে দেরি করে উঠত বলে ওকে ভরতনাট্যমের ক্লাস ছাড়িয়ে ছেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে পাঠিয়ে খুব একটা ভুল করিনি সে দিন। মেয়েটা ছোট থেকেই ডাকাবুকো। ইংল্যান্ডকে সহজে জমি ছাড়বে না।’’

সেনা পরিবার থেকে মিতালির ক্রিকেটার হওয়ার কাহিনিও বেশ চমকপ্রদ। ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছেন মেয়েদের ‘তেন্ডুলকর’। এই মুহূর্তে মেয়েদের একদিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান (৬,১৭৩) তাঁরই ঝুলিতে। তাই এই নাম। একই সঙ্গে মাথায় টনটন বরফ চাপিয়ে অধিনায়কত্ব করার জন্য কেউ কেউ আবার তুলনা করছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গেও। এই বিশ্বকাপেই জনৈক সাংবাদিক মিতালির কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর পছন্দের পুরুষ ক্রিকেটার কে? উত্তরে মিতালির পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘পুরুষ ক্রিকেটারদের এই প্রশ্নটা করেন?’’ যে উত্তর হৃদয় জিতেছে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি থেকে বিগ বি অমিতাভ বচ্চনেরও।

এ দিন ফোনে এই প্রসঙ্গ তুলতেই অট্টহাস্য শুরু করে দেন দোরাই রাজ। বলেন, ‘‘মেয়েটা আমার বদলালো না। স্কুলের এক শিক্ষকও এই প্রশ্নটা করেছিল এক বার। তখনও এই উত্তরটাই দিয়েছিল।’’

মেয়ের উত্থানের কাহিনী সম্পর্কে মিতালির মা বলছিলেন, ‘‘সাড়ে নয় বছর বয়সে সামারক্যাম্পে প্রথম পাঠিয়েছিলাম ওকে। সেখানেই দিন কয়েক ওকে দেখার পর কোচ জ্যোতি প্রসাদ বলে দেন, এই মেয়ে অনেক দূর যাবে। ছেলের বদলে মেয়ের ক্রিকেটে নজর দিন।’’ এর পরেই কোচ সম্পত কুমারের কাছে পাঠানো হয় মিতালিকে। তিনি মাস দু’য়েক নেটে দেখার পরেই মিতালির বাবাকে সাফ বলে দেন, ‘‘তোমার মেয়ে একদিন দেশের হয়ে খেলবেই।’’

বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, সঙ্গে প্রখর ক্রিকেট মস্তিষ্ক। ইনিংসের মাঝেও দেখা যায় বই পড়ছেন মিতালি। এ দিন যে রহস্য ফাঁস করে ভারত অধিনায়কের মা জানালেন, ‘‘ষোলো বছর বয়সে যখন ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিল তখন সিনিয়রদের আড্ডায় পাত্তা পেত না। তখন থেকেই বই মিতালির সফর-সঙ্গী।’’ ১৯৯৬-৯৭ সালে কলকাতায় বিশ্বকাপের শিবিরে মিতালিকে কাছ থেকে দেখেছেন কোচ শ্রীরূপা বসু মুখোপাধ্যায়। তিনিও বলছেন, ‘‘প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম ও অন্য জাতের ব্যাটসম্যান। খুব ফোকাসড। সময় পেলেই বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে রাখে। সে বার ও চূড়ান্ত দলে ডাক পায়নি। সেই জেদটাই ওর পারফরম্যান্সের জেনারেটর। রবিবার ওর হাতে বিশ্বকাপটা দেখতে চাই।’’

এক যুগ আগে নিজামের শহরের এই মেয়ের অধিনায়কত্বেই বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল ভারত। যে কথা উঠলে বাবা দোরাই রাজ বলছেন, ‘‘তার পর ও খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল হতাশায়। সে সময় দিনের পর দিন বুঝিয়েছিলাম, সুযোগ আবার আসবে। সেই সুযোগ ফের আসছে রবিবার। অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ হারিয়েছে সেমিফাইনালে। আশা রাখি কপিলের মতো লর্ডস থেকে মেয়ে বিশ্বকাপ হাতেই বাড়ি ফিরবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE