Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
ডেভিস কাপ

এক ঘণ্টারও কমে আকাশ থেকে মাটিতে ভারতীয় টেনিস

একাদশীর সকালে প্যান্ডেলে থাকা দুর্গাঠাকুর দেখতে যেমন নবমীর রাতের একশো ভাগের মাত্র দশ ভাগ সময় লাগে, তেমনই ঘটল ভারতীয় টেনিস দলের কপালে। গতকাল ডেভিস কাপের দশমীতে প্রবল বৃষ্টি ভারতীয় ডেভিস-প্রতিমার বিসর্জন আটকে দিয়েছিল। আজ একাদশীর সকালে সেই প্রতিমা দেখতে স্টেডিয়ামে মেরেকেটে শ’দেড়েক লোক। তাও বেশির ভাগই মিডিয়ার। ফাঁকা প্যান্ডেলে ভারতীয় ডেভিস-প্রতিমার বিসর্জন দেখতে লাগল এক ঘণ্টারও কম।

পারলেন না য়ুকি।

পারলেন না য়ুকি।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

একাদশীর সকালে প্যান্ডেলে থাকা দুর্গাঠাকুর দেখতে যেমন নবমীর রাতের একশো ভাগের মাত্র দশ ভাগ সময় লাগে, তেমনই ঘটল ভারতীয় টেনিস দলের কপালে।

গতকাল ডেভিস কাপের দশমীতে প্রবল বৃষ্টি ভারতীয় ডেভিস-প্রতিমার বিসর্জন আটকে দিয়েছিল। আজ একাদশীর সকালে সেই প্রতিমা দেখতে স্টেডিয়ামে মেরেকেটে শ’দেড়েক লোক। তাও বেশির ভাগই মিডিয়ার। ফাঁকা প্যান্ডেলে ভারতীয় ডেভিস-প্রতিমার বিসর্জন দেখতে লাগল এক ঘণ্টারও কম। মাত্র এক ডজন গেমেই আগের দিনের ৬-৩, ৪-৪ ঝুলে থাকা নির্ণায়ক পঞ্চম রাবারের মীমাংসা সার্ব ফিলিপ ক্রাজিনোভিচ নিজের অনুকূলে করে নিলেন য়ুকি ভামব্রির বিরুদ্ধে। ৬-৩, ৬-৪, ৬-৪। প্লে-অফ টাই ৩-২ ম্যাচে জিতে জকোভিচের দেশ ওয়ার্ল্ড গ্রুপে ঢুকে গেল। আর ভারত ফের এশীয় আঞ্চলিক গ্রুপে। আবার ডেভিস কাপের টপ ফ্লোরে উঠতে একতলা থেকে সিঁড়ি ভাঙা শুরু ২০১৫-য়।

টনি রোচ বছর শেষে কলকাতায় এসে সোমদেব-য়ুকিদের সাত দিনের তালিমে কতটা উদ্বুদ্ধ করবেন সেটা সময়ই বলবে। তবে য়ুকিরই সমবয়সী এক সার্বিয়ান আজ শিখিয়ে গেলেন, কী ভাবে প্রবল চাপেও মাথা শশার মতো ঠান্ডা রেখে টাই বার করতে হয়। বেঙ্গালুরুতে কেরিয়ারের প্রথম লাইভ রাবার খেললেন। ২-২ অবস্থায় শেষ রাবার খেলাও এই প্রথম। এবং দুটো ‘প্রথম’-এই জয়ী হিসেবে কোর্ট ছাড়লেন। ভারত যেমন বলতে পারবে, টাইয়ে দু’টো পাঁচ সেটের লড়াই কিন্তু আমরাই জিতেছি। এবং তাতেই ০-২ থেকে ২-২ করি। তেমনই বেলগ্রেডের তরুণ, যিনি ফ্লোরিডায় বিখ্যাত নিক বলতিয়েরি অ্যাকাডেমিতে গত চার-পাঁচ বছর য়ুকির সঙ্গে আছেন, বলতেই পারেন, উত্তেজক চড়াই-উতরাইয়ের টাইয়ে দিনের শেষে তিনিই নায়ক। সার্বিয়ার তিনটে জয়ের মধ্যে ক্রাজিনোভিচ নিজের দু’টো সিঙ্গলসই জিতেছেন।

বিদেশে একই গুরুর শিষ্য হয়েও ক্রাজিনোভিচ আর য়ুকি দুই বন্ধুর টেনিস-দর্শনে কী অদ্ভুত অমিল! ক্রাজিনোভিচ সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, “কাল রাতে টেনশনে ঘুম হয়নি। শুধু ভেবেছি, সকালে ১-০ সেট লিডকে ২-০ করতে পারব তো? ম্যাচটা জিতে দেশকে ওয়ার্ল্ড গ্রুপে তুলতে পারব তো? নোভাক আমাদের মতো তরুণদের উপর আস্থা দেখিয়ে এখানে আসেনি। সেই আস্থার দাম বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ারের পাশাপাশি দেশকেও দিতে পারব তো?”

কিছুক্ষণ পরে একই চেয়ারে বসে য়ুকির মন্তব্য, “কাল রাতে ঘুমিয়েছি। ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম তো!” ‘বন্ধু’র মতো য়ুকিরও ডেভিস-কেরিয়ারে এটা প্রথম ২-২ অবস্থায় নির্ণায়ক রাবার খেলা। কিন্তু জুনিয়র বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের প্রাক্তন এক নম্বর বললেন, “অন্য সময় বিপক্ষের সার্ভিসে দুটো বা একটা ব্রেকও পেলে আমি বেশির ভাগ যেমন সদ্ব্যবহার করে থাকি, এই প্রচণ্ড চাপের ম্যাচে সেটা পারিনি। কী করব! এ রকম পরিস্থিতিতে তো আগে কখনও খেলিনি!”


শ্যাম্পেন দিয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন সার্ব।

এ রকম পরিস্থিতিতে তাঁরাও বিদেশের মাঠে ডেভিস কাপ খেলেননি, বললেন সার্বিয়ার নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বোগডান ওব্রাভোভিচ। প্রসঙ্গ দর্শক। বললেন, “কোর্টে ভারতীয় প্লেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারির হাজার-হাজার সমর্থকও গত দু’দিন আমাদের বিরুদ্ধে খেলেছে। ভারতের ০-২ থেকে ২-২ করায় গ্যালারিরও অবদান আছে। সত্যি বলতে কী, নির্ণায়ক পঞ্চম ম্যাচ কাল শেষ না হয়ে আমাদের পক্ষে ভালই হয়েছে। ফাঁকা স্টেডিয়ামে ফিলিপ আজ স্বস্তিতে খেলল! কাল গ্যালারির মারাত্মক চিৎকারে বেচারা শেষমেশ জিততে পারত কি না সন্দেহ! এমন অবস্থায় কখনও পড়েনি তো!”

লিয়েন্ডার সব শুনছেন আর নিজের জন্য আরও বড় লক্ষ্য গড়ছেন। বলে দিয়েছেন, “আমি কেরিয়ার শেষ করতে চাই মহম্মদ আলি, পেলে, মাইকেল জর্ডন, রড লেভারের মতো। সেই লক্ষ্যেই রিও অলিম্পিক খেলব। মেয়েকে নিয়ে পারিবারিক সমস্যায় মনের উপর কিছুটা চাপ পড়ে বইকী। কিন্তু র্যাকেট হাতে কোর্টে নামলে অন্য কিছু মনে থাকে না।” একচল্লিশের তরুণের থেকে কী কিছু শিখলেন য়ুকিরা? বেঙ্গালুরুতে এত বড় ডেভিস কাপ টাই, ভারতীয় টেনিসের তাবড় ব্যক্তিত্বের কোর্ট আর কোর্টের বাইরে ছড়াছড়ি, কিন্তু ঘরের ছেলে হয়েও মহেশ ভূপতির এক দিনও স্টেডিয়ামের ধারপাশও না মাড়ানোর মতোই এই প্রশ্নটাও ঘুরপাক খেল কেএসএলটিএ-তে।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “লিয়েন্ডারের টেনিস-স্কিল ছেড়ে দিন, ওর টেনিস-দর্শনটা থেকেও যদি তরুণ প্রজন্ম শিক্ষা নেয়, ভারতীয় টেনিসের ছবিটা বদলে যাবে। লিয়েন্ডারের জীবনযাত্রা প্রায় একজন সাধকের মতোই। বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই খাওয়াদাওয়ায় সম্পূর্ণ নিয়মনিষ্ঠ। সিগারেট-মদ ছোঁয় না। চল্লিশ পেরিয়েও প্রতিদিন প্রচণ্ড কঠিন ট্রেনিং শিডিউলের প্রতিটা ধাপ করে। সকাল-সন্ধে যোগাসন করে। সঙ্গে ধ্যানচর্চা। যাতে ফিটনেসের সঙ্গে সঙ্গে মনও তাজা, চাপহীন থাকে।”

মুশকিল হল, ভারতীয় ক্রিকেট দলে যেমন একটাই সচিন তেন্ডুলকর ছিলেন, তেমনই ভারতীয় টেনিস দলে একটাই লিয়েন্ডার পেজ। বাকিরা তাঁর মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু তাঁর মতো টেনিস-সাধনা করেন না। নিটফল; ২০১৪ সালেও ডেভিস কাপে ভারত লাইফলাইন-এর জন্য তাকিয়ে লিয়েন্ডারের দিকে!

২০১৫-তেও থাকবে হয়তো!

ছবি: পিটিআই

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE