Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কোচের যাত্রা নিয়ে ধন্দে থাকল দলই

এমনিতে কুম্বলের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রবিবারের ফাইনালের পরেই। তাঁকে নতুন করে চুক্তি দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দেওয়া কোচের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ নিয়ে তার পর দিতে হবে।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০৪:১৩
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারের যন্ত্রণার মধ্যেই সোমবার সারা দিন ধরে চলল কোচ অনিল কুম্বলেকে নিয়ে ধোঁয়াশা। এমনকী, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবেন কি যাবেন না, তা-ও পরিষ্কার করা হচ্ছিল না ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে। ভারতীয় দলের সদস্যরাও ছিলেন সম্পূর্ণ অন্ধকারে।

এমনিতে কুম্বলের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রবিবারের ফাইনালের পরেই। তাঁকে নতুন করে চুক্তি দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দেওয়া কোচের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ নিয়ে তার পর দিতে হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌স জানিয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে কুম্বলেই যেতে পারেন যদি তিনি সফরে যেতে সম্মত থাকেন।

খবর ছিল যে, লন্ডনে সোমবারেই সৌরভ, সচিনরা বসবেন কোচ নিয়ে বৈঠকে। সেখানেই ঠিক হওয়ার কথা ছিল কুম্বলের ভবিষ্যৎ। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবেন কি যাবেন না, সেটাও সেই বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সোমবার ইংল্যান্ডের সময় বিকেল পেরিয়ে গিয়েও বিভ্রান্তি কাটেনি। ভারতীয় বোর্ডের এক সদস্য বললেন, ‘‘ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির আমাদের জানানোর কথা কী হচ্ছে। আমরা মিটিং থেকে খবর আসার অপেক্ষায়।’’

এমনকী, ভারতীয় দলের সদস্যরাও বিকেল পর্যন্ত জানেন না, কুম্বলে তাঁদের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাচ্ছেন কি না। সেটা সত্যিই নজিরবিহীন কারণ কোহালিরা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের জন্য বেরিয়ে প়ড়ছেন আজ, মঙ্গলবার সকালের ফ্লাইটে। তার কয়েক ঘণ্টা আগেও যে ঠিক হল না কে কোচ হিসেবে যাবেন, তা থেকেই বোঝা যায় কী রকম দুর্দশা এখন চলছে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে। ভারতীয় দলের কয়েক জন সদস্যকে ফোন করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। তাঁরাও শুনেছেন সোমবারে মিটিং আছে। সেই মিটিংয়ের খবরের অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।

আরও পড়ুন: ১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়কে তুলনা করলেন আফ্রিদি

এমনিতে ফাইনালের পরে উৎসব আর অন্ধকার পাশাপাশি থাকল লন্ডনে। পাকিস্তান কাপ জিতে সারা রাত ধরে উৎসব করল। সোমবার ভোরের ফ্লাইটেই তারা দেশে ফিরে গেল। আর ভারতীয় ক্রিকেটারদের ফাইনালে হারের শোক কাটিয়ে ওঠার সংগ্রাম চলল সারা দিন ধরে।

রাত ভর পার্টি করতে করতেই পাক ক্রিকেটারেরা বলতে থাকেন, তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরতে চান। শোয়েব মালিকরা বলতে থাকেন, ‘‘দেশে আমাদের জন্য প্রচুর মানুষ অপেক্ষা করছেন। পাকিস্তানের রাস্তায় আজ প্রচুর ভিড় হবে।’’

কে বলবে এটা সেই পাক ক্রিকেট। যাদের দল কি না এত কাল বিশ্বকাপ বা বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট থেকে ঘরে ফিরতেই পারত না। বারবার তারা হারত আর দেশে এমনই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হতো যে, লন্ডন বা দুবাইয়ে অজ্ঞাতবাসে কাটিয়ে মাস খানেক পরে ফিরতে হতো পাকিস্তানে। বিরানব্বইয়ে ইমরান খানের হাতে বিশ্বকাপ ওঠা এবং ২০০৯-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাদ দিলে আর কোনও বিশ্ব মানের সাফল্য নেই তাদের। বরং এতকাল ভারতের কাছে হেরে দেশে ফেরাটাই কঠিন হয়ে যেত। ফখর জমান-রা তাই ওভালে শুধু কাপই জিতলেন না, পাক ক্রিকেটারদের সেই কারাবাসের জীবনও পাল্টে দিয়ে গেলেন।

এমনিতে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। গত কালও পাকিস্তানের কয়েক জন ক্রিকেটার এসে কোহালিকে দিয়ে ব্যাটে সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। শোয়েব মালিকের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন যুবরাজ, কোহালি। তবে দু’দলের দর্শকদের মধ্যে কয়েকটি ঘটনা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।

কোহালিরা অবশ্য ফাইনালে হারের পরে ড্রেসিংরুমেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েছেন। সেই সংক্ষিপ্ত সম্মেলনে কোহালি সতীর্থদের চাঙ্গা থাকার কথা বলেন। আর্জি জানান যে, খেলায় এমন ঘটনা ঘটবে। সব ম্যাচ আমরা জিতব না। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই হার আমাদের আঘাত করে, যেন আমরা হার থেকে শিখতে পারি, কিন্তু একই সঙ্গে যেন এগিয়েও যেতে পারি। যেন ওভালের এই হারেই পড়ে না থাকি।

শোনা গেল, কোচ কুম্বলেও বক্তব্য রাখেন টিমের সামনে। ছেলেদের তিনি উদ্বুদ্ধ করে বলেন, এই একটা হার দিয়ে নিজেদের বিচার করতে যেও না। এটা অফিসে একটা খারাপ দিন। এর চেয়ে ভাল ফল করার যোগ্যতা তোমাদের আছে।

রবিবারের ওভাল ড্রেসিংরুমে কোচের বক্তব্য শুনে কারও কারও মনে হতে থাকে, তিনি বোধ হয় টিমের সঙ্গে ভিভিয়ান রিচার্ডসের দেশে যাচ্ছেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার জানাজানি হয়ে যায় যে, কোচ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ফলে ফের বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে।

রাত পর্যন্ত পরিষ্কার করে টিম ম্যানেজমেন্টকে জানানো হয়নি কুম্বলে দলের সঙ্গে যাবেন কি যাবেন না। তবে কুম্বলের ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়ার বিমানের টিকিট করানো আছে। রাত পর্যন্ত বোর্ড থেকে কোনও বার্তা নেই কুম্বলের টিকিট বাতিল করার। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে তিনি দলের সঙ্গে যাচ্ছেন।

লন্ডনে ক্রিকেট মঞ্চে নানা রং আর নানা আবেগের শেষ প্রহরে একটা জিনিস নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোহালি কোচ হিসেবে চান না কুম্বলেকে। সেই মনোভাবের কোনও পরিবর্তন রবিবারের হারের পরেও ঘটেনি। যদি কুম্বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যানও, এর পরের শ্রীলঙ্কা সফর থেকে নতুন কোচ আসছেন।

যদি কুম্বলে তার পরেও থেকে যান, ওভালের ফাইনালের চেয়েও সেটা বড় অঘটন হবে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE