Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

খলিল-ঋষভ বিশ্বকাপের পথে, পরীক্ষা কার্তিকের

একেবারে শেষ পর্বে আবির্ভাব ঘটিয়ে বিশ্বকাপের সেরা চমক হিসেবে উদয় হতে পারেন তিনি। জাহির খান, আশিস নেহরার পরে ভারতীয় দলে বাঁ হাতি পেসারের অভাব তিনি মেটাতে পারবেন কি না, সময়ই বলবে।

বাঁ হাতি পেসার খলিল আহমেদ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

বাঁ হাতি পেসার খলিল আহমেদ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

একেবারে শেষ পর্বে আবির্ভাব ঘটিয়ে বিশ্বকাপের সেরা চমক হিসেবে উদয় হতে পারেন তিনি। জাহির খান, আশিস নেহরার পরে ভারতীয় দলে বাঁ হাতি পেসারের অভাব তিনি মেটাতে পারবেন কি না, সময়ই বলবে। তবে নাটকীয় কোনও পট পরিবর্তন না হলে তিনি— খলিল আহমেদ তাঁর ক্রিকেট জীবনের স্বপ্নের যাত্রার হাইওয়েতে ঢুকে পড়েছেন।

খলিল আইপিএলে খেলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে ছিলেন। তার পরে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে সাফল্য তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এশিয়া কাপের দলে ঢুকিয়ে দেয়। সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে খেলার পরে নভেম্বরের মধ্যেই বিশ্বকাপের টিকিট প্রায় নব্বই শতাংশ নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। চোট-আঘাত পেয়ে ছিটকে না গেলে খলিলের ভিসা করে রাখা যেতে পারে। তার সব চেয়ে বড় কারণ, তিনি বাঁ হাতি পেসার। বেশ কয়েক বছর ধরেই যা ভারতীয় ক্রিকেটে অবলুপ্তপ্রায় শিল্প। জাহির, নেহরার পরে আর কেউ আসেননি।

রবিবার রাতের ইডেনে এক দিকে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টির লড়াই চলবে। অন্য দিকে কোচ রবি শাস্ত্রী, সহকারী বি. অরুণ, সঞ্জয় বাঙ্গাররা মন দিয়ে ‘নোট’ নেবেন তিন ক্রিকেটার সম্পর্কে। এঁরা তিন জন হলেন— ঋষভ পন্থ, খলিল আহমেদ এবং দীনেশ কার্তিক। এঁদের মধ্যে ঋষভ এবং খলিল কার্যত নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছেন বিশ্বকাপের জন্য। শোনা গেল, শাস্ত্রী-কোহালিরা নির্বাচকদের কাছে এক জন বাঁ হাতি পেসার চেয়েছিলেন। এম এস কে প্রসাদের কমিটি তাঁদের কাছে খলিলের নাম প্রস্তাব করে। নেটে দেখার পরে তাঁকে নিয়ে আশাবাদী হন শাস্ত্রীরা। বিশ্বকাপের আগে খলিলকে শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য বেঙ্গালুরুতে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে বিশেষ ট্রেনিং করতে পাঠানো হতে পারে। যাতে বোলিংয়ে আরও জোর বাড়াতে পারেন তিনি।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-উত্তর যুগে ঋষভই যে তাঁর উত্তরসূরি হতে চলেছেন, সেটা নিয়েও কারও মনে সন্দেহ নেই। ঋষভ ইতিমধ্যেই টেস্ট দলে ঢুকে ব্যাট হাতে সফল হয়েছেন। ইংল্যান্ডে কিপিং করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেও তাঁকে আরও সময় দিতে আপত্তি নেই কারও। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি মনে করছে, ঋষভ শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেই কারণে ওয়ান ডে দলে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে কিপিং করেছেন ধোনি। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন ঋষভ। বিশ্বকাপেও এই নকশাতেই তিনি স্কোয়াডে ঢুকে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: টেস্ট দলে ফেরাটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে রোহিতের

একই সঙ্গে ভারতীয় দল ঠিক করেছে, বিশ্বকাপের জন্য যে জায়গাগুলো নিয়ে সামান্য ধোঁয়াশা রয়েছে, সেখানে পরীক্ষা সেরে নেওয়া হবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। যেমন চার নম্বরে অম্বাতি রায়ডু প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু বিদেশের মাঠে তাঁর পরীক্ষা বাকি। যদি রায়ডু অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে রান করে দিতে পারেন, তিনিই বিশ্বকাপের দলে থাকবেন। যদি তিনি আটকে যান, তখন কী হবে? সেই কারণে দীনেশ কার্তিককে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, ইংল্যান্ডে অতীতে ভাল রেকর্ড থাকা কার্তিককেও তৈরি রাখা। যাতে কোনও কারণে রায়ডু পিছলে গেলে বিকল্প নিয়ে শেষ মুহূর্তে না উদ্বেগের প্রহর উপস্থিত হয়।

ভারতীয় দলের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত হচ্ছে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বিশ্বকাপের ভিসা পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর ব্যাটে অন্ধকার চললেও কোহালিদের মনে প্রাক্তন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে নিয়ে সংশয় নেই। ধোনির খারাপ ফর্ম চলতে থাকলে তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সরে যাবেন কি না, সেই প্রশ্ন যদিও উঠছে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন কলকাতায় এসে এমনই মন্তব্য করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ চলার মধ্যে টেস্টে হারতে থাকা ধোনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কারও কারও মত, আর পারছেন না বুঝলে ধোনি নিজেই ছেড়ে দেবেন। সে রকম কিছু ঘটলেও দু’টো বিকল্প তৈরি থাকছে। কার্তিক এবং পন্থ। এক জন কেকেআরের অধিনায়ক। তাঁর আইপিএল হোমে নামছেন রবিবার। অন্য জন ধোনি-পরবর্তী প্রজন্মে তাঁরই ঘরানার সব চেয়ে উত্তেজক প্রতিভা।

এর সঙ্গে ইডেনের গ্যালারিতে বসে চোখ রাখতে হবে রাজস্থানের বাঁ হাতি তরুণ পেসারের দিকে। আইপিএলে যাঁকে নিয়ে দর কষাকষির যুদ্ধ হয়েছিল ভালই। অবশেষে কিনে নেয় শিখর ধওয়নদের সানরাইজার্স। ইরফান পাঠানের মতো সেই বাঁক খাওয়ানো দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গার আছে খলিলের হাতে। এক দিনের ম্যাচে স্লগে বল করার লক্ষ্যে আরও বৈচিত্র যোগ করা নিয়ে খাটছেন। খলিল-কাহিনির আর একটা আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, বাবা একদমই চাইতেন না ছেলে ক্রিকেট খেলুক। বার বার আটকে দিয়েছেন প্র্যাক্টিসে যাওয়া থেকে।

বিশ্বকাপের উড়ানে উঠতে দেখলে নিশ্চয়ই ছেলে কথা শোনেনি বলে বাবা আর আফসোস করবেন না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE