Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বকাপার রহিম বাড়ি ফিরল জুতো হাতে

রহিমের বাবা মহম্মদ রফিক পেশায় গাড়ি চালক। মা ছোটোখাটো শাড়ির ব্যবসা করে সংসার চালান। বিশ্বকাপার ছেলেকে আনতে দু’জনেই শুক্রবার গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। তাই আর ছেলের প্রিয় খাবার চাউমিন বানাতে পারেননি সীমা বেগম।

জল-কাদা ভেঙে বাড়িতে ঢুকছে বিশ্বকাপ খেলে আসা রহিম আলি। সঙ্গে মা সীমা বেগম। ইছাপুর বিবেকনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

জল-কাদা ভেঙে বাড়িতে ঢুকছে বিশ্বকাপ খেলে আসা রহিম আলি। সঙ্গে মা সীমা বেগম। ইছাপুর বিবেকনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৩
Share: Save:

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলে চব্বিশ ঘণ্টা আগে নয়াদিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে অভিনন্দনের বন্যায় আপ্লুত হয়ে পড়েছিল রহিম আলি। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই ফের আতঙ্ক গ্রাস করল ভারতীয় দলের স্ট্রাইকারকে!

ইছাপুরের বিবেকনগরে শুক্রবার রাত এগারোটা নাগাদ পৌঁছেই চমকে যায় ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারা। বছর দু’য়েক আগে যখন প্রথম বার জাতীয় দলে সুযোগ পায় রহিম, তখনও সামান্য বৃষ্টিতে বাড়ির সামনে জল জমে যেত। এখনও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বাড়ির সামনের রাস্তা হারিয়ে গিয়েছে জলের তলায়। বাধ্য হয়ে জুতো খুলে নিয়েই মা সীমা বেগমের হাত ধরে বাড়িতে ঢুকল রহিম। অন্ধকার দূর করতে ভরসা মোবাইল ফোনের আলো। ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার বলছিল, ‘‘বাড়ি ফিরেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম, এত দিনে নিশ্চয়ই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখলাম, কিছুই বদলায়নি। এখনও রাস্তাটা পাকা হয়নি। যে কোনও সময় বড়সড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’’ সঙ্গে যোগ করল, ‘‘জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর আমাদের জীবনযাত্রাটাই সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। গত দু’বছরে ইউরোর একাধিক দেশে আমরা সফর করেছি। অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম আধুনিক জীবনযাত্রায়। তাই খুব খারাপ লাগছিল।’’

রহিমের বাবা মহম্মদ রফিক পেশায় গাড়ি চালক। মা ছোটোখাটো শাড়ির ব্যবসা করে সংসার চালান। বিশ্বকাপার ছেলেকে আনতে দু’জনেই শুক্রবার গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। তাই আর ছেলের প্রিয় খাবার চাউমিন বানাতে পারেননি সীমা বেগম। রহিমের কথায়, ‘‘শুক্রবার রাতে বাড়িতে ফিরে ডিমের কালিয়া ও পরোটা খেয়েছি।’’ তা হলে চাউমিন কবে হবে? হাসতে হাসতে রহিমের উত্তর, ‘‘বেশ কিছু দিন তো বাড়িতেই থাকব। এর মধ্যেই মা এক দিন চাউমিন বানিয়ে দেবেন।’’

বাড়ি ফিরলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ অবশ্য নেই রহিমের। এ দিন সকালে সাড়ে সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল রহিম। মাকে বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ এনে দিয়ে চলে যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। রহিম বলল, ‘‘নির্ভীক সংঘে খেলেই আমি বড় হয়েছি। শুক্রবার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বলে ক্লাবে যাওয়া হয়নি। এ দিন তাই সকালেই চলে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।’’ কী বলল বন্ধুরা? বাঙালি বিশ্বকাপার বলল, ‘‘ওরা দারুণ খুশি। উৎসাহ দিয়েছে আরও ভাল খেলার জন্য।’’

তবে এখনই অনুশীলনে নেমে পড়ার পরিকল্পনা নেই রহিমের। আপাতত কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে চায়। বলল, ‘‘প্রচণ্ড ক্লান্ত। কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে চাই।’’ আর ভারতীয় স্ট্রাইকারের বাবা বলছিলেন, ‘‘অনেক রোগা হয়ে গিয়েছে ছেলেটা। বিশ্বকাপ খেলার উত্তেজনায় ঠিক মতো ঘুমোতেও পারেনি।’’ সেই সঙ্গে শোনালেন আশ্চর্য কাহিনি। বললেন, ‘‘বিশ্বকাপে খেলার জন্য রহিমকে সোনার আংটি উপহার দিতে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন ওর শৈশবের কোচ অমিয় ঘোষ। আমার ছেলে কিন্তু কোচকে বলে দিয়েছিল, অভিজিৎ সরকার ও জিতেন্দ্র সিংহকেও একই উপহার দিতে হবে। অমিয়বাবু ছাত্রের কথা মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে তিন ফুটবলারকে সোনার আংটি উপহার দেবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rahim Ali FIFA Football U-17 World Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE