Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হাফ ডজন গোল দিয়ে এগোল ভারত

লাওসে যা পারেনি ভারত, মঙ্গলবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে ছ’গোলের মালা পরিয়ে সেটাই করে দেখালেন স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের ছেলেরা।

গোল করে রফিকের সমারসল্ট। মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে। ছবি এআইএফএফ

গোল করে রফিকের সমারসল্ট। মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে। ছবি এআইএফএফ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৪:৪৩
Share: Save:

লাওস-১ : ভারত-৬

(শিয়াভং) (জেজে ২, সুমিত, সন্দেশ, রফিক, কার্দোজো)

লাওসে যা পারেনি ভারত, মঙ্গলবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে ছ’গোলের মালা পরিয়ে সেটাই করে দেখালেন স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের ছেলেরা।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এগারো ধাপ পিছিয়ে থাকা টিমকে নিয়ে এ দিন রীতিমতো ছেলেখেলাই করলেন রফিক-সুমিতরা। তাও আবার ম্যাচের শুরুতে শিয়াভংয়ের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লাওস-ই। তার পর নীল জার্সির দাপটে কোথায় যেন ভেসে গেল লাওসের যাবতীয় স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্স।

ভারতের হয়ে প্রথম গোলের মুখ খোলেন সেই জেজে লালপেখলুয়াই। যাঁর গোলে অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতে এসেছিল ভারত। এ দিন জেজে করলেন জোড়া গোল। এই মুহূর্তে এশিয়া কাপ প্লে অফের ম্যাচে মালয়েশিয়ার স্ট্রাইকার বাকরির সঙ্গেই সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন জেজে। বাকরি এবং জেজে দু’জনেই দু’ ম্যাচে তিনটি করে গোল করেছেন। ম্যাচ শেষে ফর্মে থাকা স্ট্রাইকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ব্রিটিশ কোচ বলেছেন, ‘‘জেজে টোট্যাল স্ট্রাইকার। মাঠে খুব খাটে। বল ধরে খেলে। জানে কখন কী করতে হবে। ইউরোপের লিগে খেলার যোগ্যতা জেজের রয়েছে।’’

ক্লাব, দেশ, আইএসএল— এই তিন জায়গাতেই জেজে এখন সব কোচেদের বড় ভরসার জায়গা। মিজোরামের লুংলেই জেলার ছোট্ট গ্রাম থেকে ভারতীয় টিমের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা কিন্তু সহজ ছিল না জেজের।

জেজের মতোই বাবা জয়প্রকাশ পাসির থেকেই ফুটবলে হাতেখড়ি সুমিত পাসির। এ দিনের আর এক গোলদাতা। বাবা জয়প্রকাশ খেলতেন রেলের হয়ে। তিনিই সুমিতকে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ছোটবেলায়। জাতীয় দলের জার্সিতে ২ জুন লাওসের বিরুদ্ধে অভিষেক। আর দেশের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই গোল পেলেন চণ্ডীগড়ের সদ্য কুড়ি পেরোনো স্ট্রাইকার।

চণ্ডীগড়ের আর এক ফুটবলার সন্দেশ ঝিঙ্গন, যিনি সেন্টার ব্যাক হিসেবে ইতিমধ্যেই ক্লাব ফুটবল এবং আইএসএলে নজর কেড়েছেন। আর মঙ্গলবার জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোলটিও পেয়ে গেলেন।

যাঁর গোলে প্রথম বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আটলেটিকো দে কলকাতা, সেই মহম্মদ রফিকও জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গোল পেলেন এ দিন।

কিগান পেরেরার পরিবর্তে নেমেই দেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই গোল পেলেন গোয়ার ডিফেন্ডার ফুলগানকো কার্দোজো। স্পোর্টিং ক্লুবের হয়ে ভাল পারফর্ম করায় জায়গা পেয়েছিলেন স্টিভনের টিমে। যার পরিবর্তে তাঁর মাঠে নামা সেই কিগানেরও এ দিন অভিষেক ম্যাচ ছিল।

এই পাঁচ রথীর সৌজন্যেই আপাতত বসন্ত স্টিভনের টিমে। য়ার সুবাদে আপাতত চাকরি যাচ্ছে না স্টিভনের। তাই বোধহয় তিনিও এ দিন ফুটবলারদের সঙ্গে উন্মাদনায় ভাসলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে দিলেন, ‘‘মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়লাম আজ। এ দিন আমরা প্রতিটা মুহূর্তে লড়াই করে জিতেছি। লাওস শুরুতেই গোল করায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পেয়েছি এবং দাঁড়িয়েছিও।’’

তবে এশিয়া কাপ প্লে অফের ম্যাচে এক ধাপ এগোলেও আসল লড়াই এ বার শুরু স্টিভনের। যেখানে কঠিন সব প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে। বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বের ম্যাচে ভারতের যে রকম শোচনীয় দশা হয়েছিল, সেটার পুনরাবৃত্তি হলে কিন্তু স্টিভনের এই সুখের দিন থাকবে না।

বিরতির ঠিক আগে উদান্তার বদলে জ্যাকিচন্দকে নামান স্টিভন। এই একটা পরিবর্তনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। উইং দিয়ে আক্রমণে উঠতে থাকেন জ্যাকিচন্দ। তাঁর অসাধারণ সব ক্রস এবং পাস ফালাফালা করে দিচ্ছিল লাওসের ডিফেন্সকে। এ দিন ছ’টির মধ্যে তিনটি গোলের পিছনেই বড় ভূমিকা রয়েছে মণিপুরী উইঙ্গারের । স্টিভনও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে যান, ‘‘জ্যাকিচন্দই ম্যাচটা বদলে দিয়েছে। ও নামার পরেই ম্যাচে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।’’

প্রথমার্ধে জেজে এবং সুমিতের গোল দিয়ে যে সুনামি শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধেও সেটাই জারি ছিল। ভারতীয়দের একের পর এক আক্রমণে জেরবার লাওস রক্ষণ এ দিন কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। দু’পর্ব মিলিয়ে স্কোরলাইন ভারতের পক্ষে ৭-১।

ভারত: গুরপ্রীত, রিনো, অর্ণব, সন্দেশ, কিগান (কার্দোজো), উদান্তা (জ্যাকিচন্দ), লিংডো (অলউইন), রফিক, সুনীল, জেজে, সুমিত।

অন্য বিষয়গুলি:

india win
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE