অবসরের মুখে দাঁড়ানো যে কোনও প্লেয়ারের মতো আমিও একটা রূপকথার শেষ চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম শেষ টেস্টে একটা সেঞ্চুরি, টেস্ট-সহ শ্রীলঙ্কার সিরিজ জয়। আমার নিজের পারফরম্যান্স আর টিমের হার নিয়ে আমি হতাশ ঠিকই, কিন্তু তার জন্য কোনও অনুতাপ নিয়ে যাচ্ছি না। ভারত ওই ম্যাচে বেশি ভাল খেলেছে আর তাই জয়টা ওদেরই প্রাপ্য।
যাই হোক, গত পাঁচটা দিন আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল, খুব আবেগের ছিল। বিশেষ করে শেষ দিন, যে দিন আমার মতো মানুষও কান্না চাপতে পারল না। আমার শেষ ম্যাচ দেখতে পি সারাভানামুত্তু ওভালে এত ক্রিকেটপ্রেমী উপস্থিত হবেন, ভাবিনি। দেখে আমি অভিভূত। দুটো ইনিংসে রান না পাওয়ার পরেও ওঁরা যে আমার জন্য গলা ফাটালেন, ভাবা যায় না।
ভারতীয় প্লেয়াররা আমাকে যা যা বলল আর আমার জন্য যা যা করল, সেগুলো আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছর আমাদের দু’দেশের মধ্যে দারুণ সব লড়াই হয়েছে। ভারত আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচ মানেই তো ছিল টাফ ক্রিকেট। মাঠের বাইরে কিন্তু আমরা একে অপরকে সম্মান করি। সেখানে দুটো টিমের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল। আমি শেষ বার আউট হওয়ার পরে ভারতীয়রা যে রকম স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাকে ঘিরে ধরল, হ্যান্ডশেক করল, আমাকে শুভেচ্ছা জানাল, সেটা আমাকে নড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বের নানা কোণ থেকে আমার গোটা পরিবার যে ওভালে এসেছিল, তাতে উপলক্ষটা একটা আলাদা মাত্র পেল। আসলে আমাদের সবার এ ভাবে একসঙ্গে হওয়াটা একেবারেই ঘটে না। ওঁরা সবাই যে মাঠে ছিলেন, সাইডলাইন থেকে আমার খেলা দেখছিলেন, মাঝে মধ্যে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আবেগের তোড়ে গলাটা এমন শুকিয়ে গেল, শব্দগুলো এমন হারিয়ে গেল যে বিদায়ী বক্তৃতায় আমার স্ত্রী ইয়েহালির কথাই ভাল করে বলা হল না!
আমার স্ত্রী, আমার পরিবার সব সময় আমার পাশে থেকেছে। আমার টিম জিতুক বা হারুক, আমি রান পাই বা না পাই— সব সময় বাড়ি ফিরেছি এমন একটা পরিবারের কাছে যারা আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে। আমার পরিবার আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জন্যই আমার পা সব সময় মাটিতে থেকেছে। ক্রিকেটজীবনের শুরু থেকে শেষ যে সাফল্য পেয়েছি তার শক্তি, তার অনুপ্রেরণা আমার পরিবার আর বন্ধুবান্ধব।
সঙ্গা-পরিবার।
ইয়েহালিকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়াটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। স্কুল জীবন থেকে আমি ওকে ভালবাসি, আর ও আমাকে। ওর ভালবাসা, ওর সমর্থন না থাকলে হলফ করে বলতে পারি, আজ এত সফল হতাম না। পেশাদার ক্রিকেটারের স্ত্রী হওয়া যে কতটা কঠিন, অনেকেই জানেন না। বিশেষ করে যদি আপনার সন্তানও থাকে। এই যে পনেরো বছর আমি শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলার উপর ফোকাস রেখে গিয়েছি, তার পিছনে রয়েছে ইয়েহালির অসীম আত্মত্যাগ।
শুধু তো আমাদের যমজ ছেলে-মেয়ে কবিৎ আর স্বিরীকে প্রায় একা হাতে মানুষ করা নয়। একজন এশীয় ক্রিকেটারের স্ত্রী হিসেবে ওকে নিষ্ঠুর, অবিরাম মানসিক চাপও বয়ে বেড়াতে হয়েছে। প্রত্যাশার অন্তহীন চাপ, আমার পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা, তার উপর কখনও ন্যায্য-কখনও অন্যায় প্রকাশ্য সমালোচনার মোকাবিলা— কোনটা সামলাতে হয়নি ওকে! এখন যে আমি বাড়িতে একটু বেশি সময় দিতে পারব, তাতে ও দারুণ খুশি।
জীবনের অন্তিম টেস্টটা শেষ হল দারুণ একটা পার্টি দিয়ে। অ্যাঞ্জেলো আর আমার সতীর্থদের দেওয়া পার্টি। আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ওখানে ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মিস করব জানেন? ড্রেসিংরুমের এই অন্তরঙ্গতা, এই মজাগুলো। রাতটা আমরা দারুণ কাটালাম। ভোররাত পর্যন্ত প্রচুর নাচগান করলাম।
আর তার পর আজ সকালে ঘুম ভাঙল প্রাক্তন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy