বঙ্গ ব্রিগেডের তিন প্রধান চরিত্র। প্রীতম, কিংশুক ও সৌভিক।
তেরো বছর আগে এক ঝাঁক বাঙালি মিলেই তো শেষ বার স্বপ্নপূরণ করেছিল সবুজ-মেরুনের। শেষ ম্যাচ জিততেই হবে এ রকম পরিস্থিতিতে চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান।
বাসুদেব মণ্ডল, দেবজিৎ ঘোষ, দুলাল বিশ্বাস, হোসেন মুস্তাফিরা সেই সময় ব্যারেটো, আমৌরি, সেরেকিদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লিগে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
তেরো বছর বাদে আবার একই পরিস্থিতি। সনি-বোয়া-কাতসুমিদের পাশে তাল মিলিয়ে লড়াই করছেন প্রীতম কোটাল, শিল্টন পাল, শৌভিক চক্রবর্তী, কিংশুক দেবনাথরা। গোল করছেন, করাচ্ছেন, বাঁচাচ্ছেন।
শুধু মোহনবাগানই নয়, যে বছর ইস্টবেঙ্গল শেষ বার জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সে বারও তো লাল-হলুদে উজ্জ্বল ছিলেন দেবজিৎ, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়, দীপক মণ্ডল, দীপঙ্কর রায়রাও। ওকোরো, ডগলাসদের পাশে বাঙালি ফুটবলারদের কৃতিত্বও সমান ভাবে জ্বলজ্বল করেছে ২০০৩-০৪ লিগে।
ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও এটাই ঘটনা, ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান শেষ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দুই বাঙালি কোচ—সুব্রত ভট্টাচার্য এবং সুভাষ ভৌমিকের হাত ধরে। আর এ বারও বাগান কোচ এক বঙ্গসন্তান— সঞ্জয় সেন।
ময়দানে কান পাতলে এখন শোনা যায়, বাঙালি ফুটবলার বা কোচ সে ভাবে উঠে আসছে না। বাংলার টিমগুলোতে ক্রমশ দাপট বাড়ছে বিদেশি আর ভিন রাজ্যের ফুটবলার-কোচের। সেই ধারণাকেও অনেকাংশেই ভুল প্রমাণ করেছেন সঞ্জয় এবং তাঁর বঙ্গ-ব্রিগেড। কিংশুক-প্রীতমদের পারফরম্যান্স দেখার পর দেবজিৎ ঘোষ, যিনি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দুই টিমেরই শেষ বার জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন, এ দিন বললেন, ‘‘চারটে বিদেশি আমাদের সময়ও ছিল। এখনও আছে। তবে বাঙালি ছেলেদের দাপটকে কোনও সময়েই অস্বীকার করা যায় না। বাঙালিরা মিলেই সে বার মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম। আমার বিশ্বাস এ বারও প্রীতম-কিংশুরা আই লিগ এনে দেবে বাগানে।’’
স্মৃতির সরণি বেয়ে তেরো বছর আগে ফিরে যাচ্ছেন দুলাল বিশ্বাসও। বলছিলেন, ‘‘সে বার আমাদের শেষ দু’টো ম্যাচ ছিল সালগাওকর আর চার্চিলের সঙ্গে। সালগাওকরের বিরুদ্ধে আমরা তিন গোলে এগিয়েও। ৩-৪ হেরে যাই। যার ফলে চার্চিলের বিরুদ্ধে জিততেই হতো, নয়তো রানার্সও হতে পারতাম না। তবে এ বার মোহনবাগানকে ড্র করলেই চলবে।’’
শিল্টন পাল, যিনি পুণেতে ভারত এফসি ম্যাচে জঘন্য গোল খেয়ে আই লিগের লড়াই অনেকটাই কঠিন করে তুলেছিলেন মোহনবাগানের, সেই শিল্টনই শেষ দু’ম্যাচে দুরন্ত ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছেন। অসাধারণ সব সেভ করেছেন। শন রুনি, সুনীল ছেত্রীদেরও আটকে তিনি বাগান সমর্থকদের মুখে চূড়ান্ত হাসি ফোটাতে বদ্ধপরিকর। কী ভাবে এই সময় শিল্টন নিজের মনকে শান্ত রাখবেন, সেই উপায় বাতলে দিচ্ছেন সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়। যিনি ইস্টবেঙ্গলের শেষ জাতীয় লিগজয়ী টিমের গোলকিপার ছিলেন। ‘‘শিল্টনের মতো আমিও সে বার ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলাম। জানি কতটা চাপ থাকে। শিল্টনকে বলব মনকে পুরো শান্ত রাখতে, কোনও প্ররোচনায় পা না দিতে। আর রবিবার মাঠে ম্যাচটাকে খুব খুঁটিয়ে রিড করতে হবে।’’
দেবজিৎ, বাসুদেবদের মতো বাগানকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিতে চান প্রীতম-কিংশুকরাও। এ দিন ক্লাব ছাড়ার আগে প্রীতম বলে গেলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে কেউই মনে রাখবে না। আমাদের এত লড়াইয়ের কোনও মূল্য থাকবে না।’’ যদি ধনচন্দ্র পুরো ফিট না হয়ে ওঠেন, সে ক্ষেত্রে পঞ্চম বাঙালি হিসেবে রবিবার প্রথম একাদশে থাকতে পারেন সুখেন দে-ও। এ সবের মধ্যেই আবার বাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসু বকেয়া বেতন মেটানোর জন্য আরও এক কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে গেলেন এ দিন টিমের অনুশীলনে হাজির হয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy