নায়িকা: অবিশ্বাস্য ইনিংস হরমনপ্রীতের। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে চূর্ণ করা হরমনপ্রীত কউর কি পুরুষদের ক্রিকেটেও খেলতে পারেন? এমন একটি প্রশ্ন কিন্তু উঠে পড়েছে ক্রিকেট মহলে।
পুরুষদের ক্রিকেটে মহিলাদের খেলার উদাহরণ একেবারে যে নেই, তা-ও নয়। ছ’জন এমন মহিলা ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁরা ছেলেদের ক্রিকেটে খেলেছেন। যদিও সেগুলো খুব বিশাল স্তরে নয়। অস্ট্রেলিয়ার পেসার জো গস এক বার ব্র্যাডম্যান ফাউন্ডেশনের চ্যারিটি ম্যাচে ছেলেদের সঙ্গে খেলেছেন। ইংল্যান্ডের কেট ক্রস ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে ছেলেদের সঙ্গে খেলেছেন। সব চেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ সারা টেলর। ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দু’বছর আগেই অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষদের গ্রেড ক্রিকেটে খেলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এই গ্রেড ক্রিকেট যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। সারা সফল হননি কিন্তু তিনি যে সাহস দেখিয়েছিলেন, তা প্রশংসিত হয়।
টেলর যে দেশে গিয়ে খেলেছিলেন, ডার্বিতে তাদেরই চূর্ণ করেছেন হরমনপ্রীত। তাঁর ১১৫ বলে ১৭১ নট আউটের বিধ্বংসী ইনিংস দেখার পরে অনেকের মুখে প্রশ্ন— সারা টেলরের মতো হরমনপ্রীতও কি পুরুষদের ক্রিকেটে খেলতে পারেন? বিশেষ করে তাঁর ছক্কা মারার ভঙ্গি দেখে উৎসাহিত ক্রিকেট মহল। বেশির ভাগ ছক্কাই তিনি মেরেছেন মাঠের অনেকটা দূরে। কয়েকটি গিয়ে পড়েছে গ্যালারিতে। কপিল দেবের সঙ্গে তুলনা টেনে রাতারাতি তাঁর নাম হয়ে গিয়েছে ‘হারিকেন হরমনপ্রীত’। ৮০-৮৫ মিটার দূরত্ব অনায়াসে অতিক্রম করে যাচ্ছে তাঁর মারা ছক্কা।
আরও পড়ুন:
বিশ্বজয়ের প্রেরণাও পেয়ে গিয়েছেন ঝুলন
অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৯ সালে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে সিডনিতে তিনি একটি ৯১ মিটারের ছক্কা মারেন হরমনপ্রীত। যা মেয়েদের ক্রিকেটে অকল্পনীয়। সেই সময় হরমনপ্রীতের বয়স ছিল মাত্র ১৯। সিডনির সেই বিশাল ছক্কা দেখে বিশ্বাস করতে পারেননি অস্ট্রেলীয়রাও। তাঁরা দাবি করেন, হরমনপ্রীতের ডোপ পরীক্ষা করা হোক। অস্ট্রেলীয়দের সেই চ্যালেঞ্জও সফল ভাবে পাশ করেন ভারতের তারকা। তখন থেকেই সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া দেখলেই তাঁর মধ্যে বাড়তি জেদ চেপে যায়। যেটা ফের দেখা গেল ডার্বিতে বিধ্বংসী ইনিংসে।
ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা কোথা থেকে পেলেন এই শক্তি? ছোটবেলা থেকেই কি এ রকম ছক্কা মারেন? প্রশ্ন শুনে হরমনপ্রীতের বাবা হরমন্দর সিংহ ভুল্লার অদ্ভুত কাহিনি শোনালেন আনন্দবাজার-কে। বলে দিলেন, ‘‘ছেলেদের ক্রিকেটে খেলেই তো ও বড় হয়েছে। আমার মনে হয় না, এখনও ছেলেদের সঙ্গে খেলতে হলে ও বিন্দুমাত্র ঘাবড়াবে।’’ কত দিন পর্যন্ত ছেলেদের সঙ্গে খেলেছেন হরমনপ্রীত? তাঁর বাবা বললেন, ‘‘ক্লাস টেন পর্যন্ত তো নিয়মিত ভাবে ছেলেদের সঙ্গে খেলত। তার পরেও খেলেছে মাঝেমধ্যেই।’’
পঞ্জাবের একেবারে সীমান্তে অবস্থিত ছোট্ট শহর মোগা। সেখানকার মেয়ে হরমনপ্রীত। তাঁর বাবা বলছিলেন, ‘‘পাকিস্তান বর্ডারে আমাদের শহর। একেবারেই ক্রিকেট খেলার চল ছিল না। এখনও নেই। তবু মেয়েকে খুব ছোটবেলায় একটা ব্যাট কিনে দিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করত সারাক্ষণ। কখন যে খেলাটাকে ভালবেসে ফেলল।’’
সারা দেশকে গর্বিত করেছে তাঁর মেয়ে। বাবা দিতে চান অন্য বার্তা, ‘‘প্রার্থনা করব আর কেউ যেন মেয়ের ভ্রুণ হত্যা না করে। আমাদের দেশের মেয়েরা প্রমাণ করে দিয়েছে, ওরাও বিশ্বজয় করার ক্ষমতা রাখে।’’ একই বার্তা দিতে চান হরমনপ্রীতের মা-ও।
কিন্তু প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে ছেলেদের ক্রিকেটে খেলা? সেটা কি সম্ভব করতে পারেন হরমনপ্রীত? তাঁরা বাবা একটা কথা বলছেন। ‘‘মেয়ে আমার খেলার মাঠে ঢুকে গেলে মাথায় কিছুই আর ঢোকে না। দারুণ জোশ এসে যায় এসে যায় ওর মধ্যে। কে মেয়ে, কে ছেলে সে সব খেয়াল থাকে না।’’ আরও বললেন, ‘‘ভীষণ সিরিয়াস খেলার ব্যাপারে। ট্রেনিং আর জিম সেশন মিস করে না কখনও।’’ শক্তি এবং টাইমিংয়ের মেলবন্ধনে হরমনপ্রীত মন জিতে নিয়েছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। এখন দেখার কাপ নিয়ে ফিরতে পারেন কি না। তাঁর বাবা বললেন, ‘‘মেয়ের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলেছি কাল জেতার পরে। আজও বললাম। আমার মেয়ে একা নয়, দেশের মেয়েরা যেন কাপ জিতে ফেরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy