পুল্লেলা গোপীচন্দের সাফল্যের মুকুটে অন্যতম সেরা পালক লাগার সঙ্গেই ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের অন্যতম আইকনের সিভি-তে সম্প্রতি কাঁটাও লেগেছে!
প্রকাশ পাড়ুকোনের পরে দেশের একমাত্র অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন গোপীর কোচিং জীবনে পরপর দু’টো অলিম্পিক্সে স্মরণীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন তাঁর দুই ছাত্রী। ২০১২-এ লন্ডনে সাইনা নেহওয়ালের অলিম্পিক্স ব্রোঞ্জ এ দেশের ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে প্রথম। আর এ বার রিওতে পি ভি সিন্ধুর রুপো জয় তো এ দেশের মেয়েদেরই প্রথম অলিম্পিক্স রুপো জেতার ঐতিহাসিক নজির! কিন্তু অলিম্পিক্স থেকে গুরু-শিষ্যা দেশে ফিরতে না ফিরতে গোপীর ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগার মতো একটা সংবাদও জানাজানি হয়ে গিয়েছে!
সিন্ধু-গোপীকে নিয়ে দেশজোড়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাঝে গুরুকূলের অন্যতম সফল আর পুরনো ছাত্র পারুপল্লি কাশ্যপের গাচিবোলির অ্যাকাডেমি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ফাঁস হয়ে গেল এ দিন। সাইনার মতো তিনিও এখন থেকে বেঙ্গালুরুতে প্র্যাকটিস করবেন। তবে সাইনার মতো বিমলকুমারের কাছে নয়। কাশ্যপের এখন থেকে ট্রেনিং ক্যাম্প বেঙ্গালুরুতে তারকা বিদেশি ব্যাডমিন্টন কোচ টম জনের অ্যাকাডেমি।
হায়দরাবাদে গোপীর অ্যাকাডেমির ছেলেদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সাফল্যে সবার আগে কাশ্যপ। ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে সিঙ্গলসে সোনাজয়ী এই ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা অবশ্য বিরাট ধাক্কা খান চোটের কারণে রিও অলিম্পিক্স যেতে না পারায়। এ বছরের মার্চে জার্মান ওপেনে তাঁর হাঁটু ঘুরে যায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোট সারিয়ে রিও গেমসে নামার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সুপার সিরিজ প্রিমিয়ার আর সিঙ্গাপুর ওপেন থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন কাশ্যপ। কিন্তু উনত্রিশ বছরের হায়দরাবাদি তরুণ ডান হাঁটুর লিগামেন্টে অস্ত্রোপচার, তার পর গোপীর অ্যাকাডেমিতে দীর্ঘ রিহ্যাব করেও রিও যেতে পারেননি। দেশের ব্যাডমিন্টন ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মূলত সেটাই কাশ্যপের গোপীর সঙ্গ ত্যাগ করার কারণ।
‘‘গোড়ার দিকে আমি ভেবেছিলাম বেঙ্গালুরুতে মাসদুয়েক থাকব। কারণ অলিম্পিক্সে যেতে না পারায় আমি এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, একটা অন্য পরিবেশ চাইছিলাম। কিন্তু বেঙ্গালুরুর অ্যাকা়ডেমিতে এখন আমার মনে হচ্ছে আমি পুরোপুরি থিতু হয়ে গিয়েছি। এই ক’দিনের ভেতরেই নিজের খেলা, ফিটনেসে অনেক পরিবর্তন বুঝতে পারছি। আর সেগুলো সব ভালর দিকে,’’ বলছেন কাশ্যপ।
গোপী খবরটা কী ভাবে নিলেন? প্রশ্ন উঠছে আর কাশ্যপ নিজেই জবাব দিয়েছেন। ‘‘খুব বেশি কথা বলেননি এ নিয়ে। তবে আমি নিশ্চিত গোপীস্যর আমার পরিস্থিতিটা বুঝছেন। বুঝছেন যে, আমি একজন সিনিয়র প্লেয়ার। উনি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা খারাপ ভাবে নেবেন না।’’ তবে একইসঙ্গে কাশ্যপ মনে করিয়ে দিতে ছাড়েননি যে, একটা সময় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বরে পৌঁছে যাওয়া তিনি গত এক বছর ধরে চোটআঘাতে ভুগছেন। গত বছরের মাঝামাঝি কাফ মাসল ছেঁড়ার পরে তলপেটের চোটে এমনই ভোগেন যে, সৈয়দ মোদী গ্রাঁপ্রি গোল্ড খেতাব অটুট রাখার লড়াইয়ে নামতে পারেননি। সাউথ এশিয়ান গেমসে (স্যাগ) যেতে পারেননি। ভেবেছিলেন অলিম্পিক্সের টিকিট পেয়ে এই সব যন্ত্রণা ভুলবেন। কিন্তু গত মার্চের নতুন চোটে সেটাও হয়নি। ঘনিষ্ঠমহলের কাছে কাশ্যপ নাকি অভিযোগ করেন, গোপীর তাঁকে পুরো সময় দিতে না পারাও এর একটা কারণ। তাৎপর্যের, দু’বছর আগে গোপীর অ্যাকাডেমি ছাড়ার সময় এক অভিযোগ ছিল সাইনারও!
তবে কাশ্যপ ‘হারানো’-র খেদ গোপীকে ভুলিয়ে দিচ্ছেন সিন্ধু। এ দিন জানা গিয়েছে, সিন্ধুকে (এবং অবশ্যই রিওতে পুরুষ সিঙ্গলসে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা কিদাম্বি শ্রীকান্ত) শুধু গোপী-ই নন, তাঁর বৃদ্ধা মা-ও কী ভাবে মোটিভেট করেছিলেন রিওর জন্য। গোপী-ই বলছেন, এখন আমার কাছে অনেকে জানতে চাইছেন, অলিম্পিক্সে ওদের দু’জনকে এতটা বেশি আগ্রাসী, মরিয়া দেখাল কী ভাবে? ওই অ্যাটিটিউডের পিছনে রহস্যটা কী? আসলে আমরা সিন্ধুদের তাতানোর কয়েকটা রাস্তা বার করেছিলাম। আর তার পিছনে আসলে আমার মা। তাঁরই পরামর্শ ছিল, রিওতে সিন্ধু বা শ্রীকান্তের ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে ওদের নিয়ে গোটা ইন্ডিয়ান ব্যাডমিন্টন টিম যেন জাতীয় সঙ্গীত গায়। সেই মতো অলিম্পিক্সে ওদের প্রতিটা ম্যাচের আগে ড্রেসিংরুমে ‘জনগণমন’ গাওয়া হত। আর ব্যাপারটা দারুণ কাজ দিয়েছিল।’’
গোপীর মা আরও একটা কথা ছেলেকে বলেছিলেন, সিন্ধুকে বলতে রিওতে। ‘‘মার কথা হল, আমাদের দেশে প্রচুর ধনী আর প্রভাবশালী মানুষ আছে। কিন্তু আমাদের প্লেয়ারদের মতো খুব কম মানুষেরই সামনে সুযোগ আসে দেশকে গর্বিত করার। জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে তোলার। প্লেয়ারদের সাফল্য একটা গোটা দেশে একতা আনে। দেশবাসীর মনে মাতৃভূমির জন্য গর্বের অনুভূতি এনে দেয়। এটা সিন্ধুকে বলতেও দারুণ কাজ দিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy