Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

শহিদ দিবসের ধাক্কায় ময়দানে ফুটবলই এখন ‘শহিদ’

জলের বোতল। ঝালমুড়ির ঠোঙা। অর্ধভুক্ত পাঁউরুটি। মল। মূত্র। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠা। থকথকে কাদা। জমা জল। ছেঁড়া কাগজ, প্লাস্টিক বোতল, পোড়া সিগারেট টুকরো তাতে মিশে তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য পাঁক!

গন্ধ-সঙ্কট। তালতলা মাঠে অভূতপূর্ব ছবি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

গন্ধ-সঙ্কট। তালতলা মাঠে অভূতপূর্ব ছবি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

জলের বোতল। ঝালমুড়ির ঠোঙা। অর্ধভুক্ত পাঁউরুটি।

মল। মূত্র। দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠা।

থকথকে কাদা। জমা জল। ছেঁড়া কাগজ, প্লাস্টিক বোতল, পোড়া সিগারেট টুকরো তাতে মিশে তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য পাঁক!

ভাবতে পারেন, খেলার পাতায় পাড়ার মোড়ের আবর্জনার গল্প কেন? ভাবতে পারেন, বঙ্গে এমন ছবি নতুন নয়। কিন্তু যদি বলা হয় এটা কলকাতার ফুটবল মাঠের অবস্থা, তা হলে? যদি বলা হয়, এমন প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দু’দিন ধরে বেশ কিছু মাঠে বন্ধ ফুটবল? ফুটবলাররা মাঠে আসছেন, দশা দেখছেন, বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তালতলা ইন্সটিটিউট পুলিশ, কাস্টমস— যে মাঠে যান, যে দিকে তাকান প্রায় এক ছবি।

এবং অভিযোগ ধরলে, সব কিছুর সৌজন্যে ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের মহা-সমাবেশ!

বৃহস্পতিবার তালতলা ইন্সটিটিউট মাঠে গিয়ে দেখা গেল, হাঁটাচলার অযোগ্য। মল-মূত্রের দুর্গন্ধে দেড় মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। তার উপর শহরের নিরন্তর বৃষ্টিতে সে সব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দু’দিন হয়ে গেল লিগ ম্যাচ করা যাচ্ছে না। বুধবার চতুর্থ ডিভিশনে ওয়াইএমসিএ চৌরঙ্গি বনাম পার্সি ক্লাবের ম্যাচ বাতিল করতে হয়েছে। এ দিন দ্বিতীয় ডিভিশনে জোড়াবাগান-ইউনাইটেড স্টুডেন্ট ম্যাচের দফারফা হল। বাটা বনাম অনুশীলনী ম্যাচও করানো গেল না। তালতলা ইন্সটিটিউটের অন্যতম কর্তা গৌর দে-কে দেখা গেল দুঃখ করছেন। বলছেন, ‘‘সমাবেশে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাই এমন মাঠ নোংরা করে দিয়ে গিয়েছেন। সবচেয়ে জঘন্য, লোকে মল-মূত্রও এখানে সেরে গিয়েছে। ম্যাচ দূরের কথা। পাঁচ মিনিট দাঁড়ানো যাচ্ছে না।’’ কাস্টমস কর্তা কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আমাদের মাঠে এখন খেলা বন্ধ। কবে হবে আমার জানা নেই।’’

ময়দানে এমন পরিস্থিতি প্রথম বার মোটেও নয়। আগেও হয়েছে। তালতলা মাঠের উপর ‘নির্যাতন’ তো বিগত তিন-চার বছর ধরেই চলছে। এ বার শহিদ দিবসের পাল্লায় পড়ে বেশ কিছু দিনের জন্য মাঠে খেলা এখন বন্ধ। সবচেয়ে মুশকিলের হল, সমাধানের কোনও রাস্তাও আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনিক কর্তারা এখন ঘাড়ে পড়া অযাচিত ‘যন্ত্রণা’ নিয়ে স্কোয়্যার পাস খেলতে ব্যস্ত!

মাঠ পরিষ্কারের দায়িত্ব যে ঠিক কার, সেটা নিয়েই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাচ্ছে না। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মাঠ যার, সাফ করার দায়িত্বও তার।’’ যা শুনে তালতলা কর্তা গৌর দে-র পাল্টা, ‘‘আমাদের দায়িত্ব শুধু নেট আর বারপোস্ট বসানো। মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ তো নয়।’’ রেফারি অ্যাসোসিয়েশনকে জিজ্ঞেস করা গেল। উত্তর সহজ এবং সংক্ষিপ্ত— তাঁদের কাজ রেফারি দেওয়া। তবে হ্যাঁ, তাঁদের ক্লাবের মালিকে গত তিন বছর ধরে টাকা দিচ্ছে আইএফএ। সে-ই এত দিন পরিষ্কার করত। এ সব জনসমাবেশের পরের দিনই করত। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি।

বিড়ম্বনা বটে! অদ্ভুতও। দেশের ফুটবলে কর্পোরেট জগত ঢুকে পড়ছে ধীরে ধীরে। আইএসএলের আভিজাত্যের চাকচিক্য কী বস্তু, দেখেছে দেশ। এ দিনও মধ্য কলকাতার এক অভিজাত ক্লাবে ফুটবল-পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে বসে পড়লেন আইএফএ কর্তারা। শুধু ঘরের কাছের ‘শিশির বিন্দু’-ই চোখে পড়ল না! মাঠ আছে। ম্যাচের সূচিও ঠিক। কিন্তু পূতিগন্ধময় পরিবেশ ম্যাচ হতে দিচ্ছে না। কাদা মাঠে আবর্জনার স্তুপে গড়াগড়ি খাচ্ছে কলকাতার ফুটবল-গর্ব। প্রাক্তন ফুটবলার এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম সরকার বললেন, ‘‘বুঝতে পারছি না, কেন শুধু তালতলা মাঠই বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। খেলার মাঠে এ রকম ঘটনা খুব দুর্ভাগ্যজনক। যে দায়িত্বে আছে, তার অবিলম্বে মাঠ পরিষ্কার করা উচিত।’’

করা তো উচিত। কিন্তু করবে কে? ইচ্ছে কোথায়? দায়িত্ববোধ কোথায়?

শহিদ দিবসের ধাক্কায় ময়দানের ফুটবল এখন আপাতত ‘শহিদ’!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE