মেলবোর্নে উড়ছে তেরঙ্গা। ঢাকার রাস্তায় লাল-সবুজের ঢল। ছবি: এএফপি।
আজ যদি আপনি পদ্মাপারের অতিথি হন, রাস্তাঘাটে বেরোলে একটু দাঁড়াবেন। বড় বড় মোড়ে জায়ান্ট স্ক্রিন বসছে। গিজগিজে ভিড় ব্যাঘ্রগর্জনের অপেক্ষায়। যদি আপনি নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমী হন, যদি আবেগের সমুদ্রে ডুব দিতে ইচ্ছে করে কখনও, আজ বাংলাদেশ রাজপথ কিন্তু আপনার জন্য। আপনার আনন্দের জন্য।
আজ যদি ঢাকা-ময়মনসিংহের বড় বড় দোকানগুলোর সামনে দিয়ে আপনি হাঁটাহাঁটি করেন, একটু সামলে। চমকে উঠবেন না যদি দেখেন, কোথা থেকে হাজির একদল লোক। তারা নাচবে। তারা গাইবে। তারা ‘চলো বাংলাদেশ’ বলবে বারবার। ওরা ফ্ল্যাশমব। ওদের কেউ স্কুলপড়ুয়া, কেউ আর একটু বড়। ওরা বুধবার থেকেই দলে দলে, দেশের সাফল্য-প্রার্থনায় একযোগে, ধানমণ্ডি থেকে নরাইল— ওরা সর্বত্র।
আজ যদি আপনি পূর্ববঙ্গ ঘোরাঘুরির প্ল্যান করে থাকেন, দয়া করে বাতিল করুন। জানা নেই আজ ক’টা বাস চলবে। জানা নেই, অটোও পাবেন কি না। কেউ কেউ তো বলল, গাড়ি বেরোবে না। সরকারি, বেসরকারি অফিস— সব বন্ধ। আরও শুনবেন? অনেক বাড়িতে নাকি বৃহস্পতিবার হেঁসেলই চড়বে না!
কে বলল, একটা ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরে এত কিছু? কে বলল, এটা শুধুই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল যেখানে প্রথম বারের জন্য নামছে বাংলাদেশ? কে বলল, বৃহস্পতিবারের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নামছেন শুধু এগারো বাঙালি?
বুধবার ঢাকা ও তার সংলগ্ন অঞ্চল ঘুরে, নানা জায়গার অবস্থা বিচারে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত খবরাখবরে উপরের উপলব্ধিই স্বাভাবিক। যেখানে খুশি যান। যে গলিতে ইচ্ছে ঢুকে পড়ুন। সিনেমার নায়ক থেকে অটোরিকশা চালক—যাঁর সঙ্গে ইচ্ছে কথা বলুন, কোথাওই মনে হবে না বৃহস্পতিবারের এমসিজিতে উইলোর সঙ্গে ডিউসের যুদ্ধ হচ্ছে। পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোচ্ছে, চিত্কার উঠছে ‘চার আর ছয় হবে, জয় বাংলার গান হবে’। বাজার-হাটে ছেলে-বুড়োর তর্ক লেগে যাচ্ছে নিমেষে। ঢাকার যাত্রাবাড়ির সবজি বাজারের এক ব্যবসায়ী পরিষ্কার বলে দিলেন, খেলা আর ব্যবসা দু’টো একসঙ্গে হয় না। বৃহস্পতিবার খেলা চালু। ব্যবসা বন্ধ। এ বার ফিরদৌস শুনুন। এ-পার এবং ও-পার— দুই বাংলাতেই অভিনয় করা নায়ক বললেন, “বাংলাদেশের কিছু হারানোর আছে কি? আমাদের এ বার সুযোগ আছে ভাল কিছু করার।” আর নায়ক শাকিব খান পরিষ্কার শুনিয়ে দিলেন, টাইগারদের তেতে থাকা স্পিরিটের সামনে পড়ে চাপে থাকবে ধোনি বাহিনী। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী কতটা ক্রীড়াপ্রেমী, সেটা এত দিনে বহির্বিশ্বের জনগণেরও অধিকাংশের জানা। শোনা গেল, শেখ হাসিনা দিনের নির্ধারিত নমাজের বাইরেও বাড়তি ‘নফল নমাজ’ পড়বেন টিমের সাফল্য কামনায়। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো টিমকে বার্তায় বলে দিয়েছেন— তোমাদের সেমিতে দেখতে চাই। ঢাকার প্রেসক্লাবে আড্ডার সারমর্ম— স্পিরিটটা রাখলেই ব্যস। ভারত চাপে। ফেসবুক-টুইটার কাপে বাঙালি গর্জনের কামনা থেকে শুরু করে ‘মওকা মওকা’-র পাল্টা, কী নেই! গোটা দেশ এখন বিশ্বাস করছে, ভারতের সঙ্গে পড়লে তাদের জেতার সম্ভাবনা এখন অনেক বেড়ে যায়। জেদের বশে বলে ফেলছে, উপমহাদেশীয় আতঙ্ক বলে যদি কিছু হয়, তা হলে সেটা শ্রীলঙ্কা-ভারত নয়। বাংলাদেশ!
পদ্মাপারের বাঙালি এখন স্রেফ প্রহর গুনছে। কখন সকাল হবে, কখন নামবে লাল-সবুজ। স্বপ্ন দেখছে একটা ম্যাচকে ঘিরে এক জাতির উত্তরণের। যদি ঠোঁট ছোঁয়ানো যায় সেই অমৃতে, যার নাম কাপ সেমিফাইনাল...।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy