Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ফিকরুর স্বার্থপর ফুটবলে তিন পয়েন্ট রেখে এল কলকাতা

বাড়িতে আমাদের সময়কার গোলকিপার বিশ্বজিত্‌ দাসের সঙ্গে টিভিতে ম্যাচটা দেখতে বসার আগে কেমন যেন মনে হয়েছিল খেলাটা ড্র হবে। কিন্তু নব্বই মিনিটের পর মনে হচ্ছে, তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়া উচিত ছিল কলকাতার আটলেটিকোর।

ড্র করেও ফিকরুর হাসি। ম্যাচ শেষে শুক্রবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

ড্র করেও ফিকরুর হাসি। ম্যাচ শেষে শুক্রবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২
Share: Save:

আটলেটিকো দে কলকাতা-০ :

চেন্নাইয়ান এফসি-০

বাড়িতে আমাদের সময়কার গোলকিপার বিশ্বজিত্‌ দাসের সঙ্গে টিভিতে ম্যাচটা দেখতে বসার আগে কেমন যেন মনে হয়েছিল খেলাটা ড্র হবে। কিন্তু নব্বই মিনিটের পর মনে হচ্ছে, তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়া উচিত ছিল কলকাতার আটলেটিকোর।

তবে শুক্রবারও জিততে না পারলেও আমার কাছে এখনও পর্যন্ত আইএসএলের সেরা দল কলকাতা-ই। তা ফিজিক্যাল ফিটনেস হোক, ফুটবলার নির্বাচন হোক কিংবা মাঠে চাপ সামলানোর ক্ষমতাপ্রত্যেক ব্যাপারেই টুর্নামেন্টের বাকি সাতটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের চেয়ে এগিয়ে আমাদের শহরের দল। স্পেনের ফুটবল পরিকাঠামোয় মাসখানেকের ট্রেনিং কলকাতার দলের যে কতটা কাজে দিয়েছে সেটা এখান থেকেই পরিষ্কার। এত দিন শুধু ভাবতাম। এ দিনের পর নিশ্চিত হয়ে গেলাম— আইএসএলের বুড়োদের ভিড়ে নব্বই মিনিট দৌড়নোর স্ট্যামিনা একমাত্র কলকাতা দলেরই আছে।

একটু আফসোস তো হচ্ছেই! ফিকরুর সহজ মিসগুলোর জন্য। আফসোস হচ্ছে, মাঝমাঠ থেকে এত ভাল সাপোর্ট পেয়েও গোল হল না বলে। গার্সিয়া-হোফ্রের মধ্যে যে বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে, সে রকমটা ফিকরুর সঙ্গে দেখা গেল না লেস্টারের। যে জন্য কোচ হাবাস ওকে তুলেও নিলেন হাফটাইমের পরে। ফিকরুর গতি আছে, তবে ফুটবল-বুদ্ধির অভাব। শুধু দৌড়লেই তো আর গোল করা যায় না। ফিকরু কিন্তু আমার চোখে স্বার্থপর ফুটবল খেলছে। হাবাস এটা যত তাড়াতাড়ি ধরতে পারবেন, ততই ভাল কলকাতার। না হলে পরের ম্যাচগুলোতেও গোল-সমস্যায় ভুগতে হতে পারে গার্সিয়াদের!

চেন্নাইয়ানের খেলায় আমি খুব হতাশ। আইএসএলের শুরু থেকে সংবাদমাধ্যমে যে ভাবে মাতেরাজ্জিদের নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে, তাতে আমার বিরাট প্রত্যাশা ছিল ওদের নিয়ে। কিন্তু প্রথমার্ধের কিছু মিনিট বাদ দিলে পুরোটাই ব্যর্থ চেন্নাই। ডিফেন্সে মাতেরাজ্জিকে দেখে মনে হল, একটাই সংকল্প নিয়েছে। বল এলেই চোখ-কান বন্ধ করে উড়িয়ে দাও। ব্যাস! যদি এই ফুটবলই খেলতে হয়, তা হলে এত লক্ষ লক্ষ টাকা গচ্চা দিয়ে মাতেরাজ্জিকে নিয়ে আসার কী দরকার ছিল। ভারতীয় ডিফেন্ডাররাই তো যথেষ্ট। এ দিন শেখার মতো কোনও মুভ বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের থেকে পাওয়া গেল না!

সে তুলনায় ভারতীয় ফুটবলাররা বেশ ভাল খেলল। অর্ণব, বিশ্বজিতদের মতো ফুটবলাররা ওদের ক্লাবের ম্যাচে আহামরি কিছু না খেললেও আইএসএলে কিন্তু হিট। সিলভেস্ত্রে, এলানোর মতো তারকা বিদেশিদের মাথা ঠান্ডা রেখে সামলাচ্ছে। ফাইনাল ট্যাকলে না গিয়ে অপেক্ষা করছে। যাতে অযথা ফাউল না করে বসে। আটলেটিকোর ভারতীয়রা যেন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কলকাতার এই টিমে মেহতাব-নবি থাকলে শক্তি আরও বেড়ে যেত।

আমার দারুণ লাগছে যে, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বাইরেও এখানে ফুটবলে উত্‌সাহের জোয়ার আবার ফিরে এসেছে। খেলা দেখতে দেখতে বিশ্বজিতকে বলছিলাম, একটা সময় ফুটবল মাঠে দিলীপকুমার, অশোককুমার, উত্তরকুমাররা আসতেন। এখন আইএসএলের সৌজন্যে ফের মহাতারকা সেলিব্রিটিদের ভিড় গ্যালারিতে। ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো যেন টাইম মেশিনে চড়ে ফের ময়দানে! এটাই আইএসএল থেকে আমাদের বড় প্রাপ্তি। প্রচুর শিল্পপতিও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই উদ্যোগ যদি কাজে না লাগানো যায়, তা হলে এ দেশের ফুটবলের আর কোনও দিনই উন্নতি হবে না।

আটলেটিকো দে কলকাতা: শুভাশিস, অর্ণব, হোসেমি, বিশ্বজিত্‌ হোফ্রে, বোরহা, নাতো, গার্সিয়া, লেস্টার (লোবো), বলজিত্‌, ফিকরু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE