Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
হতাশ হলেও কোহালিদের পাশে ওভালের নায়ক

ঋষভ, এটা টেস্ট ক্রিকেট, বলছেন ক্ষুব্ধ ইঞ্জিনিয়ার

ইঞ্জিনিয়ার নিজে উইকেটকিপিং গ্রহে পথিকৃৎ। গিলক্রিস্ট, ধোনিদের আগমনের অনেক আগে তিনি দেখিয়েছিলেন, উইকেটকিপার ভাল ব্যাটসম্যান হলে দল কতটা উপকৃত হতে পারে।

বিরক্ত: ঋষভের ব্যাটিং দেখে হতাশ ইঞ্জিনিয়ার। —ফাইল চিত্র।

বিরক্ত: ঋষভের ব্যাটিং দেখে হতাশ ইঞ্জিনিয়ার। —ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫১
Share: Save:

ওভালে ইতিহাস তৈরি করার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন বিরাট কোহালির দলও স্মরণীয় করে রাখবে এ বারের ওভাল যাত্রা। ভারতে গিয়েছিলেন কয়েক দিনের জন্য। কিন্তু দ্রুত কাজ সেরে ফিরে এসেছিলেন শুধু ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টে একটি বলও মিস করবেন না বলে। ধরেই নিয়েছিলেন, ডন ব্র্যাডম্যানের দলের ০-২ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় সিরিজ জেতার মতো অভাবনীয় কিছু দেখতে পাবেন।

ভেবে রাখা চিত্রনাট্য যে মিলল না, তাতে হতাশ ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। ‘‘আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত ছিলাম যে, ভারত সাউদাম্পটনে জিতবে আর ওভালে আমরা হইহই করতে করতে ফয়সালার টেস্ট ম্যাচ দেখতে যাব। কী অসাধারণ আবহ তৈরি হত!’’ মঙ্গলবার ফোনে কথা বলার সময় প্রাক্তন ভারতীয় তারকার গলায় হতাশার সুর ভাল মতোই ধরা পড়ছিল। ‘‘দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, সাউদাম্পটনে ভারত জেতার মতো অবস্থা তৈরি করেছিল। সকলে আর একটু লড়াই করার মানসিকতা দেখালে মনে হয় না হারতে হত।’’

ইঞ্জিনিয়ার নিজে উইকেটকিপিং গ্রহে পথিকৃৎ। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের আগমনের অনেক আগে তিনি দেখিয়েছিলেন, উইকেটকিপার ভাল ব্যাটসম্যান হলে দল কতটা উপকৃত হতে পারে। ১৯৭১-এর সেই ঐতিহাসিক ওভাল টেস্টেই প্রথম ইনিংসে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। ১১১ বলে ৫৯ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে সাত নম্বরে যখন ব্যাট করতে নামেন, রীতিমতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। সুনীল গাওস্করকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন জন স্নো। অন্য ওপেনার অশোক মাঁকড়কে তুলে নিলেন আন্ডারউড। সাউদাম্পটনের বিরাট কোহালি এবং অজিঙ্ক রাহানের মতোই অধিনায়ক ওয়াড়েকর এবং দিলীপ সরদেশাই প্রতিরোধ গড়ে তুললেন কিছুটা। তাতেও বিপদ পুরোপুরি মুক্ত হয়নি কারণ ওয়াড়েকর রান আউট হয়ে যান। সরদেশাইকে তুলে নেন আন্ডারউড।

প্রায় তিন ঘণ্টার কাছাকাছি মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দারুণ লড়াকু ৩৩ করেন গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। তার পর মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে বিশ্বনাথ এবং সোলকার আউট। ইঞ্জিনিয়ার যখন ক্রিজে এলেন, ভারত ১৩৪-৫। তখনও জেতার জন্য ৩৯ রান করতে হবে। রানটা কম কিন্তু প্রাণান্তকর চাপ! সুনীল গাওস্কর এর মধ্যে কমেন্ট্রিতে ওভালের জয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘‘টার্গেট স্কোর ছিল ১৭৩। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যেন মনে হচ্ছিল, ১০৭৩ রান করতে হবে। ধুরন্ধর ক্যাপ্টেন্সি করছিল রে ইলিংওয়ার্থ। এমন অসাধারণ ফিল্ডিং সাজানো আমি কখনও দেখিনি। ঠিক যেখানে যেখানে বল যেতে পারে, সেখানে ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ইলিংওয়ার্থ।’’

এ রকম হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দেওয়া পরিস্থিতিতে নেমে ইঞ্জিনিয়ার মানসিক ভাবে দমে না গিয়ে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে শুরু করেন। জয়ের জন্য বাকি থাকা ৩৯ রানের মধ্যে ২৮ নট আউট ছিল তাঁর। সে দিনের জয়ের অন্যতম নায়ক খুবই হতাশ হয়েছেন নবাগত ঋষভ পন্থকে নিয়ে। ‘‘ওকে আমার বেশ ভাল লেগেছে। উত্তেজক এক তরুণ প্রতিভা। কিন্তু ঋষভকে বুঝতে হবে এটা টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট ক্রিকেট। এবং সেই টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে ইংল্যান্ডের মাটিতে, যেখানে অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যান রান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে,’’ বলে ইঞ্জিনিয়ার যোগ করছেন, ‘‘সব বলে যে টেস্টে ছক্কা মারা যায় না, সেটা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে, উল্টোপাল্টা ব্যাট চালিয়ে এখানে সফল হওয়া যায় না। লড়াই করতে হয়। জেদ আর অধ্যবসায় দেখাতে হয়।’’ তার পরেই উদাহরণ পেশ করলেন, ‘‘বিরাট কোহালিকে দেখে শিখুক না ওরা। কী রকম ক্রিজে পড়ে থেকে লড়াই করছে। কখনও কি উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছে?’’ ইঞ্জিনিয়ারের উপদেশ, ‘‘ঋষভের প্রতিভা আছে। ওর পক্ষে ভাল কিছু করে দেখানো সম্ভব। কিন্তু ওকে যদি টেস্ট ক্রিকেটে সফল হতে হয়, তা হলে লড়াই করে পড়ে থাকতেও শিখতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্টেরও উচিত, ওকে ঠিক এই কথাটা বলে দেওয়া।’’

প্রাক্তন ভারতীয় তারকা ক্ষুব্ধ আরও একটা কারণে। বললেন, ‘‘মইন আলিকে নয় উইকেট দিয়ে ম্যাচ হারাটা মেনে নিতে পারছি না। ভারত তো স্পিনের দেশ, চিরকাল শুনছি ভারতের ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভাল খেলে। ওর মতো বোলার মুম্বইয়ের প্রত্যেক ক্লাবে বোধ হয় এক জন করে পাওয়া যাবে। তাকে খেলতে গিয়ে এত কেঁপে গেল কী করে আমাদের ব্যাটিং? দেখে মনে হচ্ছিল, মইন আলি নয়, কোনও জিম লেকার বোধ হয় বল করতে এসে গিয়েছে সাউদাম্পটনে!’’ থামতে চায় না তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমার মনে হচ্ছিল, অবসর ভেঙে ফিরে এসে ব্যাট হাতে দাঁড়াই মইন আলির সামনে। আমি বুঝতাম, দারুণ সুইংয়ের আবহাওয়ায় জিমি অ্যান্ডারসন ধ্বংস করে দিচ্ছে ভারতকে, ঠিক আছে। কিন্তু মইনের সামনে আত্মসমর্পণ মানা যায় না।’’

হতাশ হলেও কোহালি-শাস্ত্রীদের পাশে দাঁড়াতে চান ইঞ্জিনিয়ার। বলে দিলেন, ‘‘কোহালি মন ভরিয়ে দিচ্ছে এই সিরিজে। রবিকেও (শাস্ত্রী) বলতে চাই, আমরা তোমাদের পাশে আছি। ওভালে জান লড়িয়ে দাও আর দেশের সম্মানের জন্য খেলো।’’ বয়স আশি পেরোলেও এখনও যেন একাত্তরের সকালে ওভালে ব্যাট হাতে দাঁড়ানো ফারুক ইঞ্জিনিয়ার। জন স্নো, ডেরেক আন্ডারউডদের যতই ভয়ঙ্কর দেখাক, উইকেট দেব না। ভারতকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়ব!

আহা, যদি হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থদের মধ্যে ছিটেফোঁটাও থাকত!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE