বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেওয়ার ফাঁকে শশাঙ্ক মনোহর। শুক্রবার গভীর রাতে হোটেলে।-নিজস্ব চিত্র
বোর্ড কর্তা কেন, ক্রিকেটমহলে দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। মোবাইল রাখেন না। ক্রেডিট কার্ড না। পারতপক্ষে বিদেশ যেতে চান না। নেশাভাঙ করেন না। কোর্টের কাজ কখনও বাড়িতে আনেন না। আর ইন্টারভিউ দেওয়া সযত্নে এড়িয়ে চলেন। শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে তাঁকে কথা বলাতে রাজি করানো গেল প্রভূত চেষ্টার পর। সদ্য জগমোহন ডালমিয়ার বাড়ি থেকে ক্রিকেটমহলের বহুপ্রতীক্ষীত বৈঠক সেরে ফিরেছেন। এত দিন? নাকি এত বছর বাদে মুখ খুললেন শশাঙ্ক মনোহর? তখন কে জানত আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার বিচরণ করবে এমন বিস্ফোরক মেজাজে।
প্রশ্ন: সাধারণ ধারণা হচ্ছে নতুন জমানার এই ক্রিকেট বোর্ড কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড গড়িমসি করছে। একমত হবেন?
মনোহর: গড়িমসি কী— আমার মতে এই বোর্ড কিছুই করছে না। অনেক উদ্যোগী হওয়ার কথা ছিল ওদের। কোথায় কী। কাজেকর্মে কোনও উন্নতিই চোখে পড়ছে না এদের। সবচেয়ে ভয়ের যেটা, এদের হয়ে পিছন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে অন্য লোক। বোর্ড যে কে চালাচ্ছে, সময় সময় তো সেটাই আমি বুঝে উঠতে পারছি না।
প্র: আইপিএল দুর্নীতি রোখার ব্যাপারে বোর্ডের মনোভাব কি খুব ঢিলেঢালা মনে হচ্ছে না? যদিও রাজীব শুক্ল বলেছেন লোঢা কমিটির রিপোর্ট বোর্ড কার্যকর করছে।
মনোহর: কার্যকর করছে মানে! করে কি ধন্য করে দিচ্ছে নাকি? সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ ওদের না মেনে উপায় আছে নাকি? আমি দেখছি বোর্ড কর্তারা বলছেন-টলছেনও যে আমরা ক্রিকেট দুর্নীতি দূর করে দেব। প্রচণ্ড লড়ব, ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে ভাই বক্তৃতা করে কী হবে? কোরাপশন কোনও দিন পুরো সাফ হবে না। বোর্ডে হবে না। বোর্ডের বাইরের জীবনেও না। কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে দুর্নীতিমুক্ত করার। এদের মনে রাখা উচিত, ক্রিকেট নামক এই খেলাটা এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নামক এই প্রতিষ্ঠান কোনও এক ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে অনেক বড়। কেউ যেন না ভাবে যে একজন ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাকি সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তো হোক।
প্র: এই কোনও এক ব্যক্তিটা কে? শ্রীনিবাসন?
মনোহর: অফকোর্স। যদিও আমার মনে হয় এমন একটা পরিস্থিতি এসেছে যখন ব্যক্তিকে অগ্রাহ্য করে সিস্টেমকে, ন্যায়বিচারকে মাথা তুলতেই হবে। সে ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন।
প্র: আপনার কি মনে হয় নৈতিক কারণে শ্রীনির আইসিসি প্রধান পদ ছাড়া উচিত?
মনোহর: আজ কেন, ২০১৩ থেকেই ওর কোনও পদ আঁকড়ে থাকা উচিত হয়নি। কথায় আছে না সিজার্স ওয়াইফ শুড বি অ্যাবাভ সাসপিশন। এত দায়িত্বপূর্ণ পদে তুমি সন্দেহের মেঘ ঘাড়ে নিয়ে বসে থাকতে পারো না।
প্র: শ্রীনি বলছেন সিএসকের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই!
মনোহর: তাই তো! পৃথিবীর সবাই ওর সঙ্গে সিএসকের গাঁটছড়া দেখতে পেয়েছে। শুধু ও নিজে নাকি দেখেনি।
প্র: অনেকের মনে হচ্ছে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আইপিএল মহাকর্তা সুন্দর রামনকেও বোর্ড কর্তাদের সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। অথচ তিনি আশ্চর্য ভাবে টিকে।
মনোহর: আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সুন্দরকে অনেক আগেই সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। পারসেপশন বলে একটা কথা আছে। যে লোকে কী ধারণা করছে। এটা হয়তো সব সময় আইন নয় কিন্তু আইনি সিদ্ধান্তের মতোই জোরালো। আর সাধারণ ধারণা হল সুন্দর এই সব নক্কাছক্কার সঙ্গে ভাল রকম জড়িত। তাই পরিস্থিতি যখন এমন, তখন অপরাধী না নিরপরাধ এ সব পরে দেখে অনেক আগেই সুন্দরকে যেতে বলা উচিত ছিল। একমাত্র ওকে সরালে তবেই তো পারসেপশনের বদল হওয়া সম্ভব। তাই না?
প্র: কিন্তু সুন্দর তো এই ক’দিন আগে বার্বেডোজের আইসিসি বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে এলেন।
মনোহর: সেটাই তো বিচিত্র যে এ সব লোকেরা এখনকার জমানার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মুখ। এখন তারা যদি পাঠায় আমি-আপনি কী করতে পারি!
প্র: ডালমিয়াকে আপনি তথাকথিত গোপন বৈঠকে কী পরামর্শ দিলেন?
মনোহর: বললাম যে কড়া হন। কোনও ব্যক্তিকে, কোনও কিছুকে ভয় পাবেন না। আপনি একজন এত বড় প্রশাসক। কীসের দ্বিধা আপনার। বোর্ডের স্বার্থে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিন।
প্র: রোববারের আইপিএল বৈঠকে কি এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে যে বোর্ড নিজেরাই দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্ব নিয়ে নিল?
মনোহর: সেটা কী করে হতে পারে! বোর্ড তো আর ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়। তা ছাড়া আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল তো একটা সাব কমিটি। তারা এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কী করে সিদ্ধান্ত নেবে? এই সিদ্ধান্ত একমাত্র জেনারেল বডিতে হতে পারে।
প্র: শাসনে আসার আড়াই মাসের মধ্যেই নতুন জমানার বোর্ডকে যে লড়ঝড়ে লাগছে, আপনি কি একমত?
মনোহর: ওরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন আমি বলেছিলাম, ছ’মাস দেখে মন্তব্য করব। এখনও তাই বলছি— শেষ কথা বলার আগে অন্তত ছ’মাস দেখা দরকার। সবে তো আড়াই মাস হল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy