বক্তা শাস্ত্রীর দাপট। সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রোতা কোহলি, প্রশাসনিক ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে।
এক-আধটায় আটকে গেলে বোঝা যেত। কিন্তু নতুন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রমাণাদি যে একটা গোটা দিন ধরে পরের পর পাওয়া যাবে, কে জানত।
নতুন ভারতীয় ক্রিকেট।
পরিবর্তনের ভারতীয় ক্রিকেট।
যেখানে বিরাট কোহলিদের টিম ডিরেক্টর ‘এ’ এবং অনূর্ধ্ব উনিশ টিমের সদ্যনিযুক্ত কোচ রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের তুমুল প্রশংসা করে ইঙ্গিত ছেড়ে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে বিরাটদের ব্যাটন ‘ওয়াল’-এর হাতে তুলে দিলে ভুল হবে না। দেশের কোচ প্রসঙ্গে গর্জন তুলছেন, ‘‘কোচ? নো কোচ! উই ডোন্ট নিড অ্যানাদার কোচ!’’
যেখানে টেস্ট অধিনায়ক প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছেন, ও সব ‘লার্নিং কার্ভের’ গল্পগাছার দিন শেষ! শেখা অনেক হয়েছে। টিমের এ বার জেতার সময়।
যেখানে সংক্ষিপ্ত সফরের আগে টিমকে উদ্দীপ্ত করার আগে বিশেষ ডিনার পার্টি দিচ্ছে বোর্ড। প্রেসিডেন্ট-সচিব উপস্থিত থেকে সেখানে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে।
যেখানে প্রবল গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ না হওয়া সত্ত্বেও অধিনায়কের প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনে আটকে থাকা হচ্ছে না। আগল খুলে জাতীয় মিডিয়ার সামনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ছ-ছ’জন ভারতীয় ক্রিকেটারকে!
এত খুল্লমখুল্লা শেষ কবে ছিল ভারতীয় ক্রিকেট? বড় টুর্নামেন্ট বাদ দিলে ক্রিকেটারদের মিডিয়া সেশনের ব্যাপার তো থাকতই না, এমনকী প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনও আটকে থাকত চর্বিতচর্বনে। আর শ্রীনি-রাজের সময় এমন প্রাক্-সিরিজ ডিনার পার্টি? তাঁর আমলের ঘনিষ্ঠরাও খুব একটা মনে করতে পারলেন না।
টিম ইন্ডিয়ার প্র্যাকটিসেও বক্তা শাস্ত্রীর দাপট।
আলোচনা, আকর্ষণের ব্যালান্স শিটে অবশ্য শনিবারের ডিনার পার্টির বিবরণী আসবে দুইয়ে। একে, রবি শাস্ত্রী। ভারতের টিম ডিরেক্টরকে এ দিন দেখলে মনে হবে, টি-টোয়েন্টিটা তাঁর প্রজন্মে থাকলে মন্দ খেলতেন না! বিরাট কোহলি যে বিরাট কোহলি, অকপট আর শিরোনামোচিত কথাবার্তার জন্য বিখ্যাত— তাঁকে পর্যন্ত আগুনে শাস্ত্রীর পাশে কেমন একটু ম্রিয়মান ঠেকল!
টিম ডিরেক্টর শুরুই করলে আপারকাট দিয়ে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভারতের কোচ তো এখনও ঠিক করা গেল না। সেটা কী ভাবে দেখছেন। প্রশ্নটা শোনামাত্র ঝাঁঝিয়ে উঠলেন শাস্ত্রী। ‘‘আরে, তিন জন কোচ আছে। আমি আছি। আর ক’টা কোচ লাগবে ভাই? আমি দু’টো কাজ করে দেব। হেড কোচের দায়িত্বও সামলে দেব। বাংলাদেশে আর কোনও কোচের দরকার নেই। যথেষ্ট আছে। আর আপনারা আমার মেয়াদ নিয়ে যা ভাবছেন, যতটা বলছেন, তার চেয়ে বেশিই কিন্তু আমি থেকে যেতে পারি!’’
সন্দেহ নেই, গত কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় দলে তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে জাতীয় মিডিয়ার নিরন্তর চর্চার উত্তর এটা। কেউ কেউ বলছেন, শাস্ত্রীকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত রেখে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তার পর কে? শাস্ত্রীকে প্রশ্নটা কেউ করেনি। কিন্তু দ্রাবিড়কে নিয়ে যে ভাবে তাঁকে উচ্ছ্বসিত দেখাল, তাকে ভবিষ্যতের কোনও ইঙ্গিত ধরলে ভুল হবে কি? চব্বিশ ঘণ্টা আগে ভারত ‘এ’ এবং অনূর্ধ্ব উনিশ টিমের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন দ্রাবিড়। শাস্ত্রী বলছিলেন, তাঁর সঙ্গে দ্রাবিড়ের ইতিমধ্যে কথা হয়েছে। বললেন, ‘‘ভারতের জুনিয়র টিমের দায়িত্বে রাহুল, এর চেয়ে ভাল খবর আর হতে পারে? রাহুল যে কোনও জুনিয়র ক্রিকেটারের কাছে আদর্শ রোলমডেল। খুব সৎ ছেলে ও। পরিষ্কার বলছি, জুনিয়র ক্রিকেটের দায়িত্বে রাহুল আসায় সিনিয়র টিম অসম্ভব খুশি।’’
সিনিয়র টিমের আশেপাশেও একটা ফুরফুরে আবহ রেখে দেওয়া হচ্ছে। শনিবার বোর্ডের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক শেষে ঠিক হয়, টিমকে উদ্দীপ্ত করতে বিশেষ ডিনার পার্টি দেওয়া হবে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এবং সচিব অনুরাগ ঠাকুর রাতের দিকে টিম হোটেলে চলেও যান। শোনা গেল, ইশান্ত শর্মাকে দেখতে পেয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট তাঁকে জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘‘তোমার হাইট কত?’’ বিরাটকে আসন্ন সফরের জন্য শুভেচ্ছা জানান। হরভজন সিংহকে আবার বলেন যে, বহু দিন পর জাতীয় টিমে যখন কামব্যাক করেছেন সর্দার, ভাল পারফরম্যান্স তাঁর থেকে আশা করছে বোর্ড। সম্প্রীতির সুর— সেটাও তো মাঝে মাঝেই বাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রীনির সঙ্গে বাংলাদেশ বোর্ডের সম্পর্ক শেষ দিকে কোন তিক্ততায় পৌঁছেছিল, সর্বজনবিদিত। সেখানে আসন্ন ক্রিকেট-সফরকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ বোর্ডের মহাকর্তাদের স্ত্রীদের জন্য শাড়ি পাঠানো হচ্ছে। যাঁদের মধ্যে প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামালের স্ত্রীও আছেন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও শাড়ি এবং গীতাঞ্জলি উপহার পাঠানো হচ্ছে বোর্ড প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে।
ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনও বিতর্কে ঢুকলেন না। কেউ এক জন বিরাটকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বিশ্বকাপের সময় দু’দেশের ক্রিকেটের সম্পর্কে যে অবনতি ঘটেছিল, তার প্রভাব সিরিজে পড়বে কি না। বিরাট উত্তর দিলেন, ‘‘না। ও সব অতীতের ব্যাপার। অতীতেই মিটে গিয়েছে। দু’টো দেশই প্রচুর ক্রিকেট খেলেছে তার পর থেকে। বাংলাদেশ খুব ভাল খেলেছে। আমরাও আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কোনও আক্রোশ বা ব্যক্তিগত রাগের ব্যাপার আমার টিমে নেই।’’
শুনলে বিশ্বাস হবে না অতীতকে। বিরাটের সঙ্গে সত্যিই একটা সময় কোনও এক রুবেল হোসেনের লেগেছিল তো?
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy