ভারতে প্রথম খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে “চিরকাল মনে রাখার মতো।” সানিয়া মির্জার সঙ্গে মিক্সড ডাবলস খেলে উঠে এমনটাই বললেন রজার ফেডেরার। তারকাদের টেনিস লিগ খেলতে ভারতীয় কোর্টে এই প্রথম নেমেছিলেন ফেড-এক্স। রবিবার নয়াদিল্লিতে টেনিস জুটির ছবি তুলেছেন প্রেম সিংহ।
ভারতের মাটিতে তাঁর প্রথম পোস্ট-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনের মাঝপথে সাউন্ড সিস্টেম ফেল করল! তাতেও দিব্যি প্রেস মিট চালিয়ে গেলেন টেনিসের মহানক্ষত্র! প্রেসরুমের একেবারে কোণ থেকে আসা প্রশ্নও কান খাড়া করে শুনলেন। গোটা হল যাতে শুনতে পায়, সে জন্য চেঁচিয়ে উত্তর দিলেন। বাকি প্রেস কনফারেন্স সে ভাবেই চলল! তা সত্ত্বেও রজার ফেডেরার-এর চোখমুখে সামান্যতম বিরক্তি নেই! এমনকী সাংবাদিক সম্মেলনের পর সেখানেই ঝাড়া আধঘণ্টা বসে অটোগ্রাফ বিলোলেন! তাঁর আগে এ দেশে প্রথম বার খেলার অভিজ্ঞতা যা শোনালেন—
প্রশ্ন: কেমন লাগল ভারতে প্রথম বার খেলে?
ফেডেরার: চিরকাল মনে রাখার মতো। কোর্টে নামতেই যে ভাবে রংবেরঙের আলোয়, হাজার হাজার দর্শকের প্রচণ্ড চিৎকারে, ডিজের বাজনায় আমাকে এ দেশে সংবর্ধনা দেওয়া হল, তা দেখে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল আমার!
প্র: এর পর কি ভারতে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস টুর্নামেন্টেও আপনাকে দেখা যেতে পারে?
ফেডেরার: এটা সত্যি যে, আমি কিছু দিন আগেই বলেছিলাম, পরের বছর নতুন-নতুন টুর্নামেন্ট খেলব, যেগুলো আমি এটিপি ট্যুরে আগে কখনও খেলিনি। সে কারণেই দু’হাজার পনেরোয় টেনিস ট্যুর শুরু করছি ব্রিসবেনে। আপনারা নিশ্চয়ই ভারতে টুর্নামেন্ট বলতে চেন্নাই ওপেনের কথা বলছেন? না, ওটা যে সময় হয়, তার সঙ্গে আমার অস্ট্রেলীয় ওপেনের প্রস্তুতি শিডিউল মেলে না। ব্রিসবেন ওপেনে খেললে যেটা সম্ভব। তা ছাড়া আমার চারটে ছোট বাচ্চা আছে। পেশাদার ট্যুরে ওদের নিয়ে ঘুরতে হয় আমাকে। জেট ল্যাগের ব্যাপারও থাকে। ভারতে মনে হয়, এক-দু’দিন প্রদর্শনী ম্যাচট্যাচই ঠিক আছে। সাত দিনের টুর্নামেন্ট এখানে খেলা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।
প্র: প্রদর্শনী ম্যাচেও কিন্তু আজ আপনাকে সিরিয়াস দেখাল কোর্টে! প্রথম বার ভারতে খেলছেন বলেই কি? অফ সিজনে তো চোট লেগে যেতেও পারত, যে ভাবে গোটাকয়েক রিটার্ন করলেন রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে!
ফেডেরার: দেখুন, চোট তো আপনার গাড়ির থেকে বেরোতে গিয়েও লাগতে পারে! কেউ চায় না চোট পেতে। কিন্তু সেটা শুধু খেলারই নয়, জীবনের অঙ্গ। আমার ফ্যানরা চান না আমি চোট পাই। আমি নিজেও চাই না। কিন্তু যখন কোর্টে নামি, সেটা যে ধরনের ম্যাচেই হোক না কেন, পুরো একশো ভাগ দিয়েই খেলা উচিত বলে মনে করি। সে ভাবেই খেলি। আজও খেলেছি।
প্র: আইপিটিএলের নতুন নিয়মে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন?
ফেডেরার: বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রথমে তো অত নতুন নিয়ম মনে রাখতে গিয়ে মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল আমার। ৩-৩ হওয়ার পর কোর্ট বদল করতে ভুলে যাচ্ছিলাম। তবে গোটা ব্যাপারটা বেশ মজার।
প্র: তা হলে আইপিটিএলের ভবিষ্যৎ ভালই বলছেন?
ফেডেরার: সেটা পরের বছর আরও ভাল বোঝা যাবে। যে কোনও নতুন ব্যাপার প্রথমে ভালই লাগে। একটু পরে ভাল-মন্দ দু’টোই বোঝা সম্ভব হয়। তবে সার্ভিসের জন্য মাত্র কুড়ি সেকেন্ড সময়টা প্লেয়ারদের কাছে কঠিন পরীক্ষা। ধরুন, বলটা টস করে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে সার্ভ করতে গেলেন, সেই মুহূর্তে ঢং ঢং করে অ্যালার্ম বাজলে কিন্তু প্লেয়ারের শরীর, মন— দুয়ের উপরই চাপ পড়ে। প্রভাবটা খেলায় পড়তে পারে।
কিংবদন্তির সঙ্গে কোর্টে সানিয়া। রবিবার। ছবি: প্রেম সিংহ
প্র: প্রথমে ‘না’ বলে দিয়ে ফের এই প্রদর্শনী টুর্নামেন্ট খেলতে রাজি হলেন কী কারণে?
ফেডেরার: খেলব না বলিনি তো? মহেশকে বলেছিলাম, পরের বছর খেলব। তার পর দিন-কয়েক আগে ও নতুন ড্র্যাফ্ট সমেত ফের অনুরোধ করল যখন, তখন ভাবলাম, ঠিক আছে, অফ সিজনের গোড়ার দিক এখন। বিশেষ করে এই নির্দিষ্ট সপ্তাহে ভারতে উইকএন্ড কাটাতে অসুবিধে নেই। সে জন্য কেবল দিল্লিতেই খেলতে রাজি হয়েছি। সেটাও শেষ দু’দিন। তার মধ্যে আজ তিনটে সেট খেলেছি, কাল খেলব দু’টো সেট। আমার অফ সিজন শিডিউলও কিন্তু পরিষ্কার। পরিবারের সঙ্গে কাটানোও। এখান থেকে দেশে ফিরে আমার আরএফ ফাউন্ডেশনের জন্য ওয়ারিঙ্কার সঙ্গে একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলব ২১ ডিসেম্বর। তার পর পরের মরসুমের ট্যুরে বেরিয়ে পড়া।
প্র: আপনি সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার— নিজে জিনিয়াস বলতে কী বোঝেন?
ফেডেরার: জিনিয়াস—আমার মতে একটা অদ্ভুত শব্দ! এক-এক জনের কাছে জিনিয়াসের মানে এক-এক রকম। আমি এখনও জিনিয়াসের মানে খুঁজে পাইনি। বরং এ ভাবে ভাবি যে, টেনিস খেলাটাকে আমি ভীষণ ভালবাসি। আর ছেলেবেলা থেকেই টেনিস খেলাটার মাধ্যমে একটা স্বপ্নকে ছুঁতে চেয়েছি। এবং দিনের শেষে এক জন ভাল টেনিস প্লেয়ার হিসেবেই থাকতে চাই। সে ভাবেই যেন সবাই মনে রাখে আমাকে!
ফেড-এক্সপ্রেস রাজধানীতে
আইপিটিএল মঞ্চে আবির্ভাব।
রাত আড়াইটে: দিল্লি বিমানবন্দরে নামেন। ফ্লাইটে পাশের সিটেই ছিলেন তাঁর ইন্ডিয়ান এসেসের সুপারস্টার সতীর্থ পিট সাম্প্রাস।
রাত তিনটে: দক্ষিণ দিল্লির পাঁচতারা টিম হোটেলের লবিতে অভ্যর্থনা জানান আইপিটিএলের প্রধান পুরোহিত মহেশ ভূপতি।
সকাল আটটা: টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পনসরের মিডিয়া প্রতিনিধিকে বিশেষ সাক্ষাত্কার।
সকাল দশটা: হোটেলের পুলে সাঁতার, পরে জিমে কিছুক্ষণ সময় কাটান।
দুপুর বারোটা: টিম হোটেলের বিখ্যাত বুখারা রেস্তোরাঁ ফেডেরারকে সার্ভ করে তাঁর কয়েকটি প্রিয় ভারতীয় ডিশ— নান, তন্দুরি ঝিঙ্গা, মুর্গ মালাই কাবাব, ডাল মাখানি, চিকেন বিরিয়ানি।
প্লেনে সাম্প্রাসের সঙ্গে।
দুপুর দু’টো: টিমবাসে ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছন।
দুপুর তিনটে: ভারতের কোর্টে প্রথম পা। সাম্প্রাসকে নিয়ে কুড়ি মিনিট বল হিটিং।
বিকেল পৌনে চারটে: সরকারি ভাবে ইন্ডিয়ান এসেস দলের সঙ্গে কোর্টে ঢোকেন।
বিকেল চারটে বেজে দশ: ভারতের কোর্টে প্রথম পয়েন্ট খেললেন ফেডেরার।
(রবিবারের দিনলিপি)
ছবি: গেটি ইমেজেস ও টুইটার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy