পোর্টল্যান্ড ডক থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সালার মরদেহ। এপি
ইংলিশ চ্যানেলের অতল থেকে উদ্ধার করা দেহ এমিলিয়ানো সালারই। উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের খণ্ডাংশে বৃহস্পতিবারই একটি বিকৃত দেহ পায়। বিশেষ জাহাজে তা নিয়ে আসা হয় ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের কাউন্টি ডরসেটে। শুক্রবার পুলিশ শনাক্তকরণ করে জানিয়ে দিল, দেহ সালারই।
আঠাশ বছরের প্রয়াত আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লোনে ফ্রান্সের ক্লাব নঁতে থেকে প্রিমিয়ার লিগে কার্ডিফ সিটিতে খেলতে আসছিলেন ছোট বিমানে। যে বিমান মাঝপথে হারিয়ে যায়। পরে পরিষ্কার হয়, দুর্ঘটনায় তা ইংলিশ চ্যানেলে তলিয়ে গিয়েছে। সালা ছাড়া বিমানে ছিলেন পাইলট ডেভিড ইবোস্টন। তাই উদ্ধার করা দেহ সালার না পাইলটের, তা নিয়ে সংশয় ছিল।
সালার অকাল প্রয়াণের খবর নিশ্চিত হতেই বিশ্বফুটবল আচ্ছন্ন শোকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে দিয়েগো মারাদোনা লিখেছেন, ‘‘দুঃখের খবরটা পেলাম। খুব খারাপ লাগছে। এমিলিয়ানো, আমার মতো অনেকেই তোমাকে দেখার ক্ষীণ আশা মনের মধ্যে রেখেছিল। তোমার পরিবার আর বন্ধুদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ ম্যাঞ্চেস্টার সিটির স্ট্রাইকার সের্খিয়ো আগুয়েরোর টুইট, ‘‘খুব খারাপ খবর। তুমি শান্তিতে থেকো এমিলিয়ানো।’’
শোকপ্রকাশ করেছেন প্রিমিয়ার লিগের অনেক ফুটবলার। লিভারপুলের ডিফেন্ডার দেহান লভরেনের বার্তা, ‘‘তোমার জন্য প্রত্যেক দিন প্রার্থনা করেছি। ভেবেছিলাম, তুমি ফিরে আসবে এমিলিয়ানো। এখন সত্যিটা মেনে নিতে পারছি না।’’ আর্সেনালের মিডফিল্ডার মেসুত ওজ়িলের বার্তা, ‘‘খবরটা কতটা দুঃখের তা বর্ণনা করার ভাষা জানা নেই।’’
খুদে ফুটবলারদের মৃত্যুর খবরে ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের সামনে ভক্তেরা।
মর্মান্তিক খবর শুনে সালার বোন রোমিনা লিখেছেন, ‘‘যতদিন বাঁচব ততদিন আমার হৃদয়ে তোমার আত্মা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তোমাকে ভালবাসি।’’ সঙ্গে নঁতের স্টেডিয়ামে আকাশের দিকে তাকানো সালার দুই হাত প্রসারিত করা একটি ছবিও দিয়েছেন। সালা যে ক্লাবে খেলতে আসছিলেন সেই কার্ডিফ সিটির পক্ষ থেকেও শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়েন রুনি লিখেছেন, ‘‘তুমি শান্তিতে থেকো এমিলিয়ানো।’’ শোক প্রকাশ করেছেন প্যারিস সাঁ জারমাঁর তরুণ প্রতিভা কিলিয়ান এমবাপেও। যিনি সালাকে খুঁজে বার করতে বিশেষ তহবিলে অর্থ দান করেছিলেন। সালার পুরনো ক্লাব নঁতেও শোকস্তব্ধ। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, আর কেউ সালার ৯ নম্বর জার্সি পরবেন না।
বিমান দুর্ঘটনায হারিয়ে যাওয়ার আগে ফুটবলার হিসেবে দারুণ কিছু সাফল্য পাননি আঠাশ বছরের তরুণ। আর্জেন্টিনার এক অখ্যাত অ্যাকাডেমি থেকে ছোটবেলাতে তাঁকে নিয়ে যায় ফ্রান্সের ক্লাব বোর্দু। কিন্তু কখনও সেখানে প্রথম দলের জার্সি মেলেনি। এমনকি ফ্রান্সের দ্বিতীয় ডিভিশনের একাধিক ক্লাবে তাঁকে লোনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে নঁতে পাঁচ বছরের চুক্তি করে সালার সঙ্গে। ফ্রান্সের ফুটবল কোচেরা মনে করতেন, অনেক বেশি বয়সে এই আর্জেন্টাইন পরিণত হচ্ছিলেন।
তবু চেষ্টা করে ঘসেমেজে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন। পাচ্ছিলেন ফলও। এই মরসুমেই ফরাসি লিগ ওয়ানে ১২ গোল করেন কখনও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ডাক না পাওয়া সালা। ইউরোপে খেলা আর্জেন্টাইনদের মধ্যে লিয়োনেল মেসির পরে এই মরসুমে তাঁর গোলই ছিল সব চেয়ে বেশি। যে কারণে কার্ডিফ সিটি তাঁকে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সালা স্বপ্ন দেখতেন, প্রিমিয়ার লিগে দারুণ কিছু করার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর খেলা হবে না তাঁর। চিরঘুমে শায়িত থাকবেন ইংলিশ চ্যানেলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy