ইস্টবেঙ্গলে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে নিয়ে নাটক পৌঁছল পঞ্চমাঙ্কে।
ডার্বিতে তিনি তো থাকছেন না-ই, ইস্টবেঙ্গলে তাঁর থাকা নিয়েও হঠাৎ তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
আনন্দবাজারে তাঁর ডার্বিতে না থাকার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন মর্গ্যান। কিন্তু কর্তাদের পরষ্পরবিরোধী মন্তব্যে একই সঙ্গে ধোয়াঁশা ও নানা নাটক তৈরি হয়েছে।
আর সেখান থেকেই উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন— ইস্টবেঙ্গলে মর্গ্যান জমানার সেকেন্ড ইনিংস কি শেষ হওয়ার পথে? ভবিষ্যতে আদৌ কি লাল-হলুদ কোচ হিসেবে দেখা যাবে তাঁকে? ইস্টবেঙ্গল শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কলকাতা লিগের জন্য অগস্ট পর্যন্তই নাকি মর্গ্যানের সঙ্গে চুক্তি ছিল ইস্টবেঙ্গলের। আই লিগের আগে সাহেব কোচের সঙ্গে ফের চুক্তি করত ক্লাব। এ রকমই চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছিল মরসুমের শুরুতে। যা বেশ আশ্চর্যের!
চলতি মরসুমে মর্গ্যানকে ফের লাল-হলুদ কোচ হিসেবে ইস্টবেঙ্গলে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন স্পনসরদের প্রতিনিধি অমিত সেন এবং ক্লাবের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য। মর্গ্যান নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যেও।
অমিতবাবু এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুতে। এ দিন টেলিফোনে সেখান থেকে তিনি মর্গ্যানের চুক্তি নিয়ে যে তথ্য দিলেন তা চমকে ওঠার মতো। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘ক্লাবে আর্থিক টানাটানি। বাজেটের কথা ভেবেই কলকাতা লিগের জন্য মর্গ্যানের সঙ্গে আমরা জুলাই, অগস্ট— এই দুই মাসের জন্য চুক্তি করেছিলাম। তার পর চুক্তি হত আই লিগের জন্য।’’ অমিতবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, গত দু’বছরই কলকাতা লিগ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়িয়েছে। তা হলে এ বার কেন ৩১ অগস্ট পর্যন্ত চুক্তি করতে গিয়েছিলেন? অমিতবাবু জবাবে দেখিয়ে দেন মর্গ্যানকে ফের ক্লাবে কোচ করে আনার ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগী ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যকে। সঙ্গে বলতে ভোলেন না, ‘‘সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলকাতা লিগ গড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ফুটবল সচিবের মনে রাখা উচিত ছিল। সেই ভাবে চুক্তি করলে আজ এই সমস্যা হত না।’’
ইস্টবেঙ্গল ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য যা শুনে আবার বলছেন, ‘‘মর্গ্যান পেশাদার মানুষ। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কথা ভেবে মহানুভব হতে পারলেন না। বুধবার ক্লাব সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসব এ ব্যাপারে। তার পরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাদের জানিয়ে দেব।’’
ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার আবার সোমবার সন্ধেতেও ক্লাব তাঁবুতে বলে গিয়েছেন, ‘‘এই মরসুমে আমাদের টিমের পুরো ব্যাপারটা দেখছিলেন ফুটবল সচিব। তিনি আমাকে বলেছিলেন কোচ কলকাতা লিগের পর আইএসএলে যেতে পারেন। তার পর আই লিগের সময় তিনি ফের আমাদের টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন। এটুকুই জানতাম।’’
কিন্তু ক্লাবের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, গত দশ দিন ধরেই নাকি চুক্তি শেষ হয়ে আসার ব্যাপারটা নিয়ে অমিতবাবু এবং ফুটবল সচিবের কানে বিষয়টি তুলেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাঁরা কোচকে ডার্বি শেষ করে ফেরার অনুরোধ করলেও তা কানে তোলেননি মর্গ্যান।
যাঁকে নিয়ে এত কথা সেই ট্রেভর জেমস মর্গ্যান এ দিন হাজির ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের জিম সেশনে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত মিডিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনও বাক্যব্যয় না করেই তিনি চলে যান।
কলকাতা লিগের পর বরদলুই ট্রফিতে খেলার কথা ইস্টবেঙ্গলের। তার পর আই লিগ। মর্গ্যান কি তখন টিমের সঙ্গে থাকবেন? এ দিন ইস্টবেঙ্গল সচিবকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা লিগ এবং আই লিগের আগের টুর্নামেন্টে মর্গ্যান এপিসোড এন্ড। আই লিগ অনেক দূরের ব্যাপার। কাল কী হবে তাঁর কোনও গ্যারান্টি আছে?’’ ফলে অদূর ভবিষ্যতে মর্গ্যানকে ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে ফের দেখা যাবে কি না সচিবের কথার পর তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে ক্লাবের একটা বড় অংশের প্রশ্ন—গত দু’-তিন বছর ধরে মর্গ্যানের জন্য ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে ক্লাব কর্তারা তাঁরা এ বার কী বলবেন? তাঁরা কি নতুন কোচের সন্ধানে নামবেন? সব মিলিয়ে মর্গ্যান নিয়ে নজিরবিহীন এক জট ইস্টবেঙ্গলে।
এরই মাঝে মর্গ্যান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তাদের তোপ দাগা জারি রয়েছেই প্রাক্তন ফুটবলারদের তরফে। লাল-হলুদকে দশ বছর আগে ফেডারেশন কাপ দেওয়া কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য যেমন বলছেন, ‘‘হলফ করে বলছি, চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও কোনও ভারতীয় কোচ এ ভাবে শারীরিক অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে ডার্বি ও টানা সপ্তম বার লিগ জয়ের পরিস্থিতিতে কেটে পড়তেন না। কিন্তু কর্তাদের আবার ভারতীয়দের সেই আবেগ পছন্দ নয়। কাজেই যা হওয়ার ঠিক হয়েছে। মর্গ্যান কর্তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।’’
লাল-হলুদে প্রথম বার হেক্সা কলকাতা লিগজয়ী টিমের আর এক নায়ক শ্যাম থাপাও মর্গ্যানকে নিয়ে বিরক্ত। ফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘লোকটা মোটেই পেশাদার নয়। ওঁকে আর কোনও দিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেই আনা উচিত নয়।’’
ইস্টবেঙ্গলের আর এক ঘরের ছেলে সমরেশ চৌধুরী মর্গ্যানের সমালোচনা করলেও কর্তাদের রেয়াত করেছেন না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘চুক্তি শেষ হলে মর্গ্যান চলে যাবেই। কার কী বলার আছে? কিন্তু এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন চুক্তি ক্লাব করতে গেল কেন? করলেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ক্লাব। তাই সেটা সদস্য-সমর্থকদের কর্তারা বলেননি কেন এত দিন? কেন অন্য কর্তারা তা জানতে পারেননি? শরীর খারাপের কথা বলে মর্গ্যান কি আসলে ফুটবল সচিবকে বাঁচাতে চাইছেন?’’
আশির দশকের মাঝামাঝি এ রকমই এক ডার্বির আগে ইংল্যান্ডে কোচিং কোর্স করতে গিয়েছিলেন তখনকার লাল-হলুদ কোচ শ্যাম থাপা। সহকারী কোচ চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কোচিংয়েই ডার্বি জিতে ফিরেছিল লাল-হলুদ। মর্গ্যান নিয়ে এই ডামাডোলের মাঝে এ রকমই একজন চিন্ময়কে আপাতত খুঁজছে ইস্টবেঙ্গল।
সব মিলিয়ে নাটক জমজমাট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy