চ্যালেঞ্জার: অনিল কুম্বলের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন বীরেন্দ্র সহবাগ।
মহাতারকা কোচ বনাম মহাতারকা অধিনায়কের সম্পর্ক নিয়ে রহস্যের উন্মোচন তো হলই না। বিতর্কের ওপর আরও বেশি করে কালো পর্দাই ঢেকে দেওয়া হল।
ঠিক যে ভাবে কালো পর্দার আচ্ছাদনে ঢেকে ফেলা হল ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস। পর্দার আড়ালে চলল কোচ অনিল কুম্বলে এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালিদের অনুশীলন। পর্দার এ পারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দল।
আর তার মধ্যেই অনিল কুম্বলের উত্তরসূরি হিসেবে বীরেন্দ্র সহবাগের নাম নিয়ে আলোচনা বেড়ে গেল। সহবাগ ভারতীয় কোচের পদের জন্য আবেদন করেছেন। মনে করা হচ্ছে, একেবারে কোনও সম্ভাবনা না থাকলে সহবাগ আবেদন করতেন না। কোচ নির্বাচন করবে ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি। সেই কমিটিতে আছেন সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভি ভি এস লক্ষ্মণ। তিন জনের সঙ্গে খেলেছেন সহবাগ। তাঁদের দিক থেকে ইঙ্গিত আসার পরেই মত পাল্টে সহবাগ আবেদন করলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
সহবাগ আবেদন করায় আরও বেশি করে কুম্বলের বিদায়ী বাজনা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। তার আগেই সকালের দিকে এজবাস্টন মাঠে অদ্ভুত ঘটনা দেখা গেল। ভারতীয় দলের প্র্যাকটিসে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হল। ভিতরে ঢুকলে কুম্বলে এবং কোহালির প্রত্যেকটি পদক্ষেপ দেখতে পাবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। চলতে থাকা বিতর্কে তা আরও বারুদ যোগ করতে পারে। হয়তো সেই কারণেই এন্ট্রি বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: রুটের নিষ্ঠুর শাসনে ম্লান তামিমের সেঞ্চুরি
এজবাস্টন মাঠের পিছন দিকে প্র্যাকটিসের জায়গায় লম্বা কালো পর্দা ঝুলছে। দু’ভাগে ভাগ করা এই পর্দা দিয়ে প্র্যাকটিসের পুরো অঞ্চলকেই রুদ্ধদ্বার করে ফেলা যায়। সাইটস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই কালো কাপড়। কিন্তু জাল দিয়ে ঘেরা প্র্যাকটিসের অঞ্চলের বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন ভারতীয় দলের অনুশীলন ক্যামেরাবন্দি করছেন দেখে কালো পর্দা পুরোটাই টেনে দেওয়া হল। নিরাপত্তা রক্ষীদের এক জন এসে তদারকিও করে গেলেন, যাতে পর্দার কোথাও ফাঁক না থাকে।
নাটকের এখানেই শেষ নয়। বোর্ডের কার্যনির্বাহী সচিব অমিতাভ চৌধুরি গত কাল রাতে উড়ে এসেছেন বার্মিংহামে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় দলের অনুশীলন চলার ফাঁকে হঠাৎ তিনি এলেন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে। তাঁর মিনিট দশেকের উপস্থিতিকে অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলন নয়, ফিল্মের শ্যুটিং বলে মনে হচ্ছিল।
বোর্ড সচিবকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কি মিটমাট করতে এলেন? উত্তর— ‘‘কামাল হ্যায়। আমার সফরসূচি আমার চেয়ে বেশি আপনারা জেনে গিয়েছেন! আমার তো আগে থেকেই আসার কথা ছিল।’’ বোঝা গেল সংলাপ মুখস্থ করে এসেছেন। পরে শোনা গেল, তাঁর ডিরেক্টরের কাজ করেছেন বোর্ডের এক অভিজ্ঞ কর্মী। আধ ঘণ্টার ওপর ক্লাস নিয়ে তবেই তাঁকে পাঠানো হয় সাংবাদিক সম্মেলনে। তার পরেও সচিব গুলিয়ে ফেললেন।
বললেন, কোচ অনিল কুম্বলে এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালির সম্পর্কে কোনও ভাঙন ধরেনি। কোনও তিক্ততাই তাঁদের মধ্যে নেই। যতটুকু যা প্রকাশ্যে এসেছে সবই মিডিয়ার বানানো গল্প। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করা হল, কুম্বলে কি ভাল কাজ করেছেন? সচিব জবাব দিলেন, ‘‘আমাকে বলতে হবে কেন? গোটা দেশ জানে কুম্বলে ভাল কাজ করেছে। তবে এ ব্যাপারে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবে তিন প্রাক্তন ক্রিকেটারকে নিয়ে তৈরি কমিটি।’’
বোর্ড সচিবের প্রেস কনফারেন্স প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ‘ট্রোল্ড’ হতে শুরু করেন। কেউ কেউ মনে করিয়ে দেন, ‘ইনি তো মেক-আপ স্পেশালিস্ট। জিম্বাবোয়েতে সৌরভ আর গ্রেগ চ্যাপেলের ঝামেলার সময়েও ওদের দিয়ে পুল খেলার ছবি তুলিয়ে সৌহার্দের নকল স্টেজ সাজিয়েছিলেন’। বৃহস্পতিবারই আবার ইস্তফা দিলেন পর্যবেক্ষক কমিটির অন্যতম সদস্য রামচন্দ্র গুহ। বোর্ডমহলে খোঁজ-খবর নিয়ে শোনা যাচ্ছে, বেঙ্গালুরুবাসী ইতিহাসবিদ কুম্বলে ঘনিষ্ঠ বলেই হয়তো নিজেকে সরিয়ে নিলেন।
মুশকিল হচ্ছে, সৌরভ-গ্রেগ ঝামেলা ঘটেছিল প্রাক-স্মার্টফোন যুগে। তখন সাজানো ছবি বুঝতেও কিছুটা সময় লেগেছিল। দেশে ফেরার পর সৌরভ-গ্রেগকে নিয়ে মিটিং ডাকেন তখনকার বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া। সেখানে দু’জনের আর একপ্রস্ত হাত মেলামেলি হয়। তার পর গ্রেগ এক দরজা দিয়ে বেরিয়ে সৌরভকে গালমন্দ করতে থাকেন। সৌরভ অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে বলতে থাকেন, এই লোকটাকে আর কখনও বিশ্বাস করা যাবে না।
এখন স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে অতক্ষণ কেউ আর অপেক্ষা করে না। মুহূর্তে মতামত জমা পড়তে শুরু করে দেয়। সৌরভ-গ্রেগের যুগে টুইটার বা ফেসবুক সক্রিয় ছিল না। ‘ট্রেন্ডিং’ বলে কিছু ছিল না। এখন আছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বোর্ড সচিবের কমেডি ফিল্মের নামকরণ হয়ে যায়— ‘ঝুট বোলে কাউয়া কাটে’!
ততক্ষণে আঁটসাঁট করে টেনে দেওয়া পর্দার আড়াল থেকেই বেরিয়ে পড়েছে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন এবং তথ্য। যেমন ইংল্যান্ডে আসার আগে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে কোহালির বলা একটি কথা যে, ড্রেসিংরুমে বিশ্বাসের বাতাবরণটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোচের দিকে আঙুল তুলে তিনি নাকি এমনও বলেছেন এক পরিচিত কর্তাকে যে, ড্রেসিংরুমে ঢুকে মাঝেমধ্যে তিনি মেজাজই হারিয়ে ফেলছেন। ঠান্ডা মাথায় দল পরিচালনা করবেন কী!
ভারতীয় বোর্ডে কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদি কোচ বা অধিনায়কের সম্পর্কে ভাঙন না ধরেই থাকবে, তাঁদের দিয়ে ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট’ দেওয়ানো হোক। এমনও আলোচনা হয় যে, বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটেই কোহালি এবং কুম্বলে একে অন্যকে ইন্টারভিউ করুন। যেটা এখন খুবই দেখা যায় দু’জন ক্রিকেটার মিলে করছেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটা করে ওঠা যায়নি। কেন? কোহালি এই সাজানো ইন্টারভিউ করতে রাজি হননি বলে? অদূর ভবিষ্যতে কালো পরদার আচ্ছাদন সরে গিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy