ম্যাচের মাঝে ফুটবলারদের নির্দেশ দিচ্ছেন মোহন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কী ভাবে ফিরে আসতে হয় রবিবাসরীয় ডার্বিতে তার আদর্শ উদাহরণ রাখল মোহনবাগান। প্রায় ভাঙা দল নিয়েই তারকাখচিত ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিল গঙ্গাপাড়ের ক্লাব। তবে, স্কোরলাইন দেখে যদি ম্যাচ বিশ্লেষণ করা হয় তা হলে ভুল হবে। কম করে ৫ গোলে ম্যাচটি জিততে পারত মোহনবাগান। ম্যাচের সেরা দিপান্দা ডিকার গলায়ও বেশি গোলে জিততে না পারার আক্ষেপ ধরা পড়ল ম্যাচের পর।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে রজার মিল্লার দেশের স্ট্রাইকার বলেন, “৮ গোলে ম্যাচটা জিততে পারতাম আমরা। তবে, জয় এসেছে এটাই বড়।”
এ দিনের ম্যাচটিকে নিজের জীবনের সেরা ম্যাচ হিসেবে দেখছেন ক্যামেরুনের এই স্ট্রাইকার। তিনি বলেন, “আমার জীবনের সেরা ম্যাচটা খেললাম আজ। গোলের জন্য শুরু থেকেই ঝাপিয়েছিলাম। দু’টি গোল পেয়েছি, দল জিতেছে আমি খুশি। তবে, প্রথম গোলের তুলনায় দ্বিতীয় গোলটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।”
ডিকার পাশাপাশি মোহন কোচ শঙ্করলালের গলায়ও ধরা পড়েছে জয়ের তৃপ্তি। তাঁর কথায়, “অনেকেই মনে করেছিলেন সনি নেই, সমস্য হতে পারে, কিন্তু সকলের অজান্তেই তলায় তলায় একটা জমাট দল আমরা তৈরি করে ফেলেছিলাম। আর এর প্রতিফলনই এই ফল।”
মহারণ জিতে ভিকট্রি ল্যাপ ওয়াটসনদের।
তবে, সনির না থাকাটা তাঁর দলের কাছে কোনও ফ্যাক্টর নয় জানালেও এ দিন ম্যাচ শেষে সনি বন্দনা ধরা পড়ে শঙ্করলালের গলায়। শঙ্কর বলেন, “মোহনবাগনের প্রতি সনির অবদান কম নয়। আমার দেখা অন্যতম সেরা বিদেশি ও। ফুটবলারদের মোটিভেট করা থেকে শুরু করে যে কোনও সময় সাহায্য করা—এই প্রত্যেকটা গুণই সনির রয়েছে। এই জয় আমি সনিকেই উৎসর্গ করতে চাই।”
কোচের মতো কলকাতা ক্লাসিকো জয় হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ানকেই উৎসর্গ করলেন ম্যাচের সেরা ডিকা। তিনি বলেন, “ম্যাচের আগে সনি আমায় টিপস দিয়েছিল। ও বলে দিয়েছিল যে এই ম্যাচে আমি গোল করবই। ওকে প্রচন্ড মিস করব, এই জয় ওকেই উৎসর্গ করতে চাই।”
তবে, এ দিনও সাংবাদিক সম্মেলনে ঘুরে ফিরে ওঠে সঞ্জয় সেন প্রসঙ্গ। ক্লাব ছাড়ার পর ঘনিষ্ঠমহলে আই লিগ জয়ী কোচ জানিয়েছিলেন পিছন থেকে তাঁকে ছুড়ি মারা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রসঙ্গে কথা উঠতেই তা ডজ করে শঙ্কর জানিয়ে দেন ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি মনে করেন না প্রাক্তন মোহন কোচ এই কথা বলতে পারেন।
আরও পড়ুন: ডিকার বাঁ পায়ের ধাক্কায় উড়ে গেল ইস্টবেঙ্গল
আরও পড়ুন: অনেক হতাশা পেরিয়ে চেনা ছন্দে কলকাতার ডার্বি
ডার্বি জয়ের পরন্ত সূর্যের আলোতে মোহন শিবির যখন ঝলমলে, তখন ঠিক উল্টো চিত্রটাই ধরা পড়ল ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের মুখে। যেন অমাবস্যার আলোয় ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া একটা মানুষ নিয়মাফিক সাংবাদিক সম্মেলনে একের পর এক খোঁচা খেতে উপস্থিত হয়েছেন।
তবে, প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই অসহায় আত্মসমর্পন করে দেন গত মরসুমের আই লিগ জয়ী কোচ। দল হারার সমস্ত দায় নিজের কাঁধে নিয়ে খালিদ বলেন, “এটা আমারই ভুল। আমার ভুলেই দল হেরেছে। আমি স্বীকার করি এটা। এখানে অজুহাত দেওয়ার জায়গা নেই। প্রস্তুতি থেকে মাঠের ভেতরে ফুটবলের ব্যর্থতা সবের জন্যই আমি দোষী।”
তিনি আরও বলেন, “ডিফেন্সকে আরও শক্তিশালী করা উচিৎ ছিল। এই হারের ফলে নিজের উপর চাপটা নিজেই আমি বাড়িয়ে নিয়েছি। আমার ভুলেই ইস্টবেঙ্গলকে হারতে হল। এই ফলের যোগ্য নয় ইস্টবেঙ্গল।”
কাজে এল না সাইড লাইন থেকে দেওয়া নির্দেশ। হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হল খালিদ জামিলকে।
তবে হারলেও তিনি এই মুহূর্তেই যে পদত্যাগ করছেন না তা স্পষ্ট করে দেন এই মুম্বইকর। তিনি বলেন, “পদত্যাগের কথা আমি ভাবছি না। আমি কাপুরুষ নই। দলের উপর থেকে হাত তুলে আমি যাব না। পরের ম্যাচ থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোই আমার প্রধান লক্ষ্য। তবে ক্লাব অধিকারিকরা চাইলে আমি চলে যাব।”ডার্বি হারের সমস্ত দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার পাশাপাশি এক জন প্রকৃত নেতার মতোই ক্রমাগত সমর্থকদের রোষের মুখে পড়া প্লাজারও পাশে দাঁড়ালেন খালিদ। খালিদ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে যান এক জন ফুটবলারকে প্রতিনিয়ত এই ভাবে টার্গেট করা ঠিক নয়। কোনও এক জন নয়, দলটাই খেলতে পারেনি এ দিনের ডার্বিতে।
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy