২২ মার্চ ইডেনের টিকিট আছে তো? না থাকলে কিন্তু আফসোস করতে হতে পারে। যদি বলা হয় একই টিকিটে বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দেখা যাবে দিশা পাটানির নাচ আর শুনতে পাবেন শ্রেয়া ঘোষালের গান— কে তা হাতছাড়া করতে চাইবে?
গত বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আইপিএলের প্রথা অনুযায়ী, কেকেআর এ বারে তাদের ঘরের মাঠে উদ্বোধন ও ফাইনালের জোড়া বরাত পেয়েছে। আর ২২ মার্চ বোধনেই ক্রিকেট এবং বলিউডের মিশ্রণে এমন ঝড় উঠতে চলেছে ইডেনে, হালফিলে কলকাতায় এমন মহাযজ্ঞ আর দেখা যায়নি।
একে তো শুরুই হচ্ছে রাজায়-রাজায় যুদ্ধ দিয়ে। কিং কোহলি আসছেন কিং খানের দলের মুখোমুখি হতে। আইপিএল সূচি ঘোষণা হওয়া মাত্র প্রথম ম্যাচের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। কাকুতি-মিনতি শুরু হয়ে গিয়েছে, অন্য কোনও টিকিট চাই না, কোহলি-ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করে দাও। তার উপর যে রকম জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে, টিকিটের চাহিদা হাহাকারে পাল্টে যেতে বাধ্য। সম্ভবত ম্যাচ শুরুর আগে আধঘণ্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।
রবিবার রাত পর্যন্ত মুম্বইয়ের সূত্রে যা খবর, শ্রেয়া ঘোষাল আসছেন। বাংলার মাঠে বাঙালি ক্রিকেটারহীন কেকেআর, এমন দীর্ঘশ্বাস বহুদিন ধরে কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদের সঙ্গী। এ বারে অন্তত বাঙালির কণ্ঠ থাকছে। শ্রেয়া কি বাংলা গানও গাইতে পারেন? নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ইডেনের গ্যালারি থেকে আব্দার তো যেতেই পারে।
তরুণ সমাজের হার্টথ্রব দিশা পাটানিও আসতে পারেন বলে শোনা গেল। তাঁর সঙ্গে যে ক্রিকেটেরও যোগাযোগ রয়েছে, ভুলে গেলে চলবে কেন? মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিকে মাহির প্রথম প্রেমিকা। উড়ানে ধোনির সঙ্গে আলাপ হয়। ইডেনে সব দলের অধিনায়কেরা উপস্থিত থাকবেন কিন্তু ধোনি তো আর চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক নন। তাই পর্দার প্রথম প্রেমিকার সঙ্গে রাঁচীর দামাল তরুণের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন, আইসিসি ইভেন্টে যেমন দেখা যাচ্ছে প্রত্যেক ম্যাচে মহাতারকারা কেউ ট্রফি নিয়ে মাঠে আসছেন, আইপিএলেও তো তেমন হতে পারে। ভারতে ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় যেমন দেখা গিয়েছে, সচিন তেন্ডুলকর, ভিভ রিচার্ডস ট্রফি নিয়ে ঢুকেছেন। ভবিষ্যতে আইপিএলেও তেমন কিছু হলে ধোনি ট্রফি নিয়ে আসতেই পারেন।
শ্রেয়া-দিশার সঙ্গে উদ্বোধন মাতাতে পারেন করণ আউজলা। যাঁর ‘হুস্ন তেরা তওবা তওবা’ গান এখনও ভাইরাল। পঞ্জাবি র্যাপার দেশ-বিদেশে খুব জনপ্রিয়। গত বছর বড়দিনে কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ব বাংলায় এমন উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল যে, ভিড় সামলাতে পুলিশের নাজেহাল অবস্থা হয়।
তিনি শাহরুখ খান— কোন গানের সঙ্গে নাচবেন? ‘সুপারহোস্ট’ হওয়ার কথা তাঁর কারণ ইডেন যে কেকেআরের ঘরের মাঠ। গৃহকর্তার মতোই সমস্ত কিছু সামলানোর কথা তাঁর। জানিয়ে রাখা যাক, আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ ভাবে ভারতীয় বোর্ডের তদারকিতে হয়। যে দলের ঘরের মাঠেই হোক না কেন, তাদের সরাসরি কোনও ভূমিকা নেই। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা বা আয়োজন সবটাই বোর্ডের হাতে। তাই ২২ মার্চের অনুষ্ঠান কেকেআর নয়, বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে।
তবু মনে হতে বাধ্য, শাহরুখ খান কেকেআরের মালিক। ইডেনে উদ্বোধন। তিনি থাকবেন না, হয় নাকি? যদি অনুষ্ঠানে না-ও দেখা যায়, দলের তো তাঁকে প্রয়োজন। অনুষ্ঠানাদি যা হচ্ছে হোক, আসল তো ক্রিকেট। আর শুরুতেই এমন একটা মারকাটারি ম্যাচ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে যেমন ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ, আইপিএলে তেমন কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আইপিএলের পথ চলা শুরু দুই দলের ম্যাচ দিয়ে। কে ভুলতে পারবে বেঙ্গালুরুতে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাটে সেই শুভ মহরৎ? তার পর থেকে যখনই আরসিবি আর কেকেআরের দেখা হয়েছে, আগুনের ফুলকি উড়েছে। তা-ও রক্ষে, গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হয়ে গিয়েছেন। না হলে কেকেআরে থাকলে এ বারেও কোহলি বনাম গম্ভীর বাজনা বাজা শুরু হয়ে যেত এত ক্ষণে।

আকর্ষণ: শাহরুখকে চেনা মেজাজে দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। —ফাইল চিত্র।
তবে গম্ভীর না থাকলেও আরসিবি কলকাতায় পৌঁছে গেলে শিঙা ফোঁকাফুকি শুরু হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। গোলাবারুদের যে কোনও অভাব নেই এ বারেও। আরসিবি ব্যাট করতে এলেই যেমন বিরাট কোহলি বনাম হর্ষিত রানা। দারুণ লড়াই। গত বছর হর্ষিত নবাগত ছিলেন। এখন ভারতীয় দলের টগবগে পেসার। দারুণ চেহারা বানিয়ে ফেলেছেন, জোরে বল করছেন। কোহলিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতেই পারবেন। এর পর কোহলির জন্য থাকছে স্পিনের জোড়া ফলা। সুনীল নারাইন এবং সদ্য বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সি ভি বরুণ। হালফিলে তিনি বারবার স্পিনারদের বিরুদ্ধে আউট হয়েছেন। তাই নাইট স্পিন জুটির সামনে কোহলি— উপভোগ্য লড়াই হতে যাচ্ছে। জশ হেজ্লউড বনাম আন্দ্রে রাসেল, এটাই বা খারাপ কী? সুনীল নারাইন ও ফিল সল্ট গত বার নাইট রাইডার্সের আইপিএল জয়ের প্রধান স্থপতি। ফাইনালে সল্ট ছিলেন না কিন্তু তার আগে গ্রুপ পর্বে নারাইনের সঙ্গে দুর্দান্ত সব শুরু দিয়েছেন। এ বারে প্রথম ম্যাচেই তাঁরা কি না প্রতিপক্ষ। দু’জনে দু’দলের ওপেনার। জুটি ভেঙে কে কাকে ছাপিয়ে যেতে পারেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
এমন উত্তেজক বোধনে বাজিগরহীন ইডেন? কেউ দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করবে না। মঞ্চে থাকুন বা না থাকুন, বেগুনি রঙয়ে উদ্ভাসিত নাইট বক্সের ব্যালকনিতে তাঁকে লাগবে। মাঠে কিং কোহলি, গ্যালারিতে কিং খান। না হলে আর ‘বাম্পার বোধন’
হল কোথায়?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)