Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Imam ul Haq

Imam Ul Haq: স্বজনপোষণের অভিযোগে কেঁদে ফেলা চশমা পরা ছেলেটাই সামলাচ্ছেন স্টার্কদের গোলা-বারুদ

৪ মার্চ, ২০২২ পাকিস্তানের সাদা জার্সি ওপেন করতে নামলেন ইমাম। সামনে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউডের মতো পেসার।

প্রথম টেস্ট শতরানের পর ইমাম।

প্রথম টেস্ট শতরানের পর ইমাম। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ ১৮:২৫
Share: Save:

বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলছেন না। মনে হচ্ছে আশপাশ সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এই গোটা পৃথিবীতে তিনি একা হয়ে যাচ্ছেন। ২১ বছরের এক তরুণ নিজের মনের মধ্যে লড়াই করে চলেছেন। কখনও কখনও ভেঙে পড়ছেন। স্নানঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁদে চলেছেন। আর তৈরি হচ্ছেন একটা সুযোগের জন্য।

ইমাম উল হক সেই সুযোগ পেলেন ২০১৭ সালে। সেটাই যথেষ্ট ছিল তাঁর জন্য। এত দিন যাঁরা বলছিলেন, “ইনজামাম উল হকের ভাইপো বলে পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছে ইমাম” তাঁদের সপাটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন তিনি। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই শতরান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে ১২৫ বলে ১০০ করেন তিনি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে প্রথম ম্যাচেই শতরান করলেন ইমাম। পরের নয় ম্যাচে চারটি শতরান। বিশ্বের কোনও ব্যাটারের এমন রেকর্ড নেই। স্বজনপোষণের অভিযোগ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল ইমামের ব্যাট।

এখনও অবধি ৪৬টি এক দিনের ম্যাচ খেলে সাতটি শতরান করেছেন তিনি। রান ২০২৩। সর্বোচ্চ ১৫১। সাদা বলের ক্রিকেটে জায়গা হলেও লাল বলের ক্রিকেটে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২০১৮ পর্যন্ত। কিন্তু কুলীন ক্রিকেটে সেই ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না চোখে চশমা আঁটা ইমাম। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রাওয়ালপিণ্ডির টেস্ট বাদ রাখলে এখনও অবধি ১১টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। শতরান ছিল না। তিনটি অর্ধশতরান ছিল। ২০১৯ সালের পর দল থেকেই বাদ রাখা হয় তাঁকে।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত ইমাম।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত ইমাম। ছবি: পিটিআই

৪ মার্চ, ২০২২ পাকিস্তানের সাদা জার্সি ওপেন করতে নামলেন ইমাম। সামনে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউডের মতো পেসার। চোখে চশমা এঁটে নেমে পড়লেন ইমাম। দেড়শো কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা বল সামলাচ্ছেন চোখে চশমা পরে! ক্রিকেট দুনিয়া যদিও এমন ঘটনা প্রথম দেখেছে এমন নয়। অনিল কুম্বলে, ক্লাইভ লয়েড, জাহির আব্বাস, ড্যানিয়েল ভেত্তোরির মতো একাধিক ক্রিকেটার চশমা পরে খেলেছেন। কিন্তু কোনও ওপেনার চশমা পরে খেলছেন এই দৃশ্য খুব পরিচিত নয়। কিছু সময়ের জন্য বীরেন্দ্র সহবাগ চশমা পরে খেলতেন। তবে সেটা দীর্ঘ দিনের জন্য নয়।

ইমাম খেললেন। শুধু খেললেন না, স্টার্কদের তুলোধোনা করে ১৫৭ রান করলেন। টেস্টে এটাই তাঁর প্রথম শতরান। এটাই কি পাল্টে দেবে তাঁর টেস্ট জীবন? এখনই বলা সেটা কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোটা সিরিজে নজর থাকবে তাঁর দিকে। আন্তর্জাতিক জীবনের শুরুটা খুব সহজ ছিল না ইমামের। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে যে ভাবে লড়াই চালিয়েছেন তিনি, আগামী দিনেও সেই লড়াইটাই তাঁর সামনে।

কেমন ছিল আন্তর্জাতিক জীবন শুরুর লড়াই? এক সাক্ষাৎকারে ইমাম বলেন, “আমি একা একা খেতাম। কেউ ছিল না আমার পাশে। আমার প্রথম সফর ছিল সেটা। সবাই জানে প্রথম সফর কেমন হয়। ফোন খুললেই আমাকে উদ্দেশ করে লেখা। খারাপ লাগত। বুঝতাম না কী করব। পরিবারের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওদের উপর চাপ দিতে চাইনি। আমার ফোন বন্ধ করে ম্যানেজারকে দিয়ে দিয়েছিলাম।”

কষ্ট পেয়েছিলেন ইমাম। তিনি বলেন, “এখনও মনে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতে কাঁদতে স্নান করছি। নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছিল তরুণ ক্রিকেটারের। শুধু একটা জিনিস আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি দেশের হয়ে খেলিনি। যদি সুযোগ পাই আর খেলতে না পারি? আমার কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে যাবে। ঘরের বাইরে যেতাম না। দুবাইতে প্রচুর পাকিস্তানী। তাই মনে হত বাইরে গেলেই আমাকে কথা শুনতে হবে।”

সেই চাপ কাটিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলছেন ইমাম। টেস্ট দলেও জায়গা করে নিয়েছেন। অপেক্ষা আগামী দিনের। ইনজামামের ভাইপো বলে আর তিনি পরিচিত নন, ইমামের নাম সকলে জেনে গিয়েছে। এ বার সেই নাম প্রতিষ্ঠার সময়। কুলীন ক্রিকেটে নিজের নাম খোদাই করার সময়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE