শতরানের পর রবীন্দ্র জাডেজা। শনিবার মোহালিতে। ছবি: এএফপি
অর্ধশতরান পূর্ণ করার পর রবীচন্দ্রন অশ্বিন চেষ্টা করেছিলেন ব্যাটকে তলোয়ারের মতো ব্যবহারের। কিন্তু তাঁর সে চেষ্টা সফল হল না। সফল যে হবেন না, সেটা ব্যর্থতার হাসিতেই বোঝা গিয়েছিল। তিনি যে রাজপুত নন। রাজপুতের তলোয়ার ঝলসে উঠল মোহালিতে।
রবীন্দ্র জাডেজা ঘোড়সওয়ার রাজপুত যোদ্ধার ভঙ্গিতেই তলোয়ারের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন করলেন শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণকে। ভারতের স্কোর বোর্ড যেন চলতে শুরু করল অশ্বশক্তিতে। দিমুথ করুণারত্নের কোনও পরিকল্পনাই কাজে এল না। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার জাডেজা অসাধারণ ইনিংস খেলে দলের রানকে পৌঁছে দিলেন পর্বত উচ্চতায়।
কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের প্রয়াণের পরের দিনেই জাডেজার ব্যাট থেকে এল অনবদ্য ইনিংস। একই সঙ্গে দু’টি কাজ করলেন ‘স্যর জাডেজা’। প্রথমত, প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলীর শততম টেস্টে দলকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিলেন, যেখান থেকে না জেতাটাই অবিশ্বাস্য। দ্বিতীয়ত, রাজস্থান রয়্যালসের প্রাক্তন তারকা সেরা শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলেন প্রথম রয়্যাল ওয়ার্নকে।
আইপিএল-এর প্রথম চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ছিলেন ওয়ার্ন। পরে দলকে কোচিংও করিয়েছেন তিনি। সেই দলেরই সদস্য ছিলেন জাডেজা। প্রথম দেখাতেই প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনারের চোখে পড়ে যান সৌরাষ্ট্রের বাঁহাতি। বল এবং ব্যাট হাতে জাডেজার দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন ওয়ার্ন। তিনিই জাডেজাকে অভিহিত করেন ‘রকস্টার’ বলে।
প্রথম রয়্যালের সেই ‘রকস্টার’-এর ‘রকিং’ পারফরম্যান্সের সুবাদেই মোহালিতে চালকের আসনে ভারত। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বড় রানের ভিত প্রথম দিনেই গড়ে দিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। সেই ভিতের উপর রানের অট্টালিকা তৈরি করলেন ওয়ার্নের ‘রকস্টার’। প্রয়াত প্রাক্তন অধিনায়ককে এর থেকে ভাল শ্রদ্ধার্ঘ্য আর কী ভাবে দিতে পারতেন তিনি। সতীর্থ প্রাক্তন অধিনায়কের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতেই বা এর বেশি কী করতেন।
ক্রিকেট জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট শতরানই করলেন না জাডেজা, যথার্থ সিনিয়রের মতোই আগলে রাখলেন শেষের দিকের ব্যাটারদের। উদাহরণ এক, নবম উইকেটে মহম্মদ শামির সঙ্গে জুটিতে যখন ৫০ রান উঠল, তখনও খাতাই খোলেননি বাংলার ফাস্ট বোলার। উদাহরণ দুই, জয়ন্ত যাদব খারাপ শটে আউট হতেই জাডেজার ক্ষোভ প্রকাশ পেল ইস্পাত কঠিন চাহনিতে। দল যখন নিরাপদে তখন কেন অযথা ঝুকি নেওয়া? কীসের এত তাড়াহুড়ো? তরুণ সতীর্থকে এ কথাই বোধ হয় বোঝাতে চাইলেন তিনি। আর ভারতের ইনিংস শেষ হলেই বল হাতে আক্রমণ শুরু করতে হবে শামিকে। তাই, তাঁকেও বাইশ গজে যতটা সম্ভব ‘বিশ্রামে’ রাখলেন ভারতীয় দলের সাজঘরের প্রিয় জাড্ডু।
— crictalk (@crictalk7) March 5, 2022
জাডেজার এ দিনের ইনিংসের শুরুটা ছিল টেস্ট সুলভ। পরে গিয়ার বদলে এক দিনের মেজাজে দেখা গেল তাঁকে। কখনও কখনও টি-টোয়েন্টির মেজাজেও ব্যাটিং করলেন। অধিনায়ক রোহিত শর্মা যখন ভারতীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন তখন জাডেজার সংগ্রহ ২২৮ বলে ১৭৫ রান। মনে হচ্ছিল জীবনের প্রথম টেস্ট দ্বিশতরান সময়ের অপেক্ষা।
রোহিতের এই সিদ্ধান্ত মনে করিয়ে দিল রাহুল দ্রাবিড়কে। ভারতীয় দলের বর্তমান কোচ ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুলতান টেস্টে যখন ইনিংসের সমাপ্তি ঘোযণা করেন, তখন সচিন তেন্ডুলকর অপরাজিত ছিলেন ১৯৪ রানে। হতে পারে কাকতালীয়। হতে পারে ব্যক্তিগত রেকর্ড নয়, দলের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার। কিন্তু মাইল ফলকের কাছাকাছি তো বার বার পৌঁছনো যায় না।
জাডেজা হয়তো আবার সুযোগ পাবেন। সে দিন তিনি ঢুকে পড়বেন দ্বিশতরানের ক্লাবে। সে পরের কথা। তাঁর এ দিনের ইনিংস দেখে প্রশংসার বন্যা বইছে নেট মাধ্যমে। তাঁর ব্যাটিং দক্ষতায় মুগ্ধ প্রাক্তন থেকে বর্তমান ক্রিকেটাররা। দেশ বিদেশের ক্রিকেট মহলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে টুইটার, ফেসবুকে। জাডেজার ব্যাটিং দক্ষতা অজানা ছিল না কারোরই। সঠিক সময়, সঠিক মঞ্চে সেই দক্ষতার ব্যবহারও কম কৃতিত্বের নয়।
অনেকেই বলছেন, প্রথম রয়্যালকে যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলেন প্রাক্তন রয়্যাল। কেউ বলছেন, এর থেকে ভাল শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রাক্তন আইপিএল অধিনায়ককে দিতে পারতেন না তাঁর প্রিয় ‘রকস্টার’। তাঁর ইনিংস নিয়ে উচ্ছ্বাস, বিশেষণের বন্যা বইছে। আসলে বড় মঞ্চে সফল হওয়ার বীজমন্ত্র জাডেজাকে দিয়ে ছিলেন ওয়ার্নই। সেই মন্ত্রেই দুই প্রাক্তন অধিনায়ককে একযোগে শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং উপহার তুলে দিলেন জাডেজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy