Advertisement
E-Paper

হ্যাটট্রিকের মাঠে শামি ফিরছেন অগ্নিপরীক্ষা দিতে

পায়ের পাতার চোট সম্পূর্ণ ভাবে তাঁকে ক্রিকেট থেকে ছিটকে দিতে পারেনি। আজ, বুধবার থেকে ইন্দোরে শুরু মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচে শামি নামছেন।

প্রত্যাবর্তন: ৩৬০ দিন পরে ক্রিকেটে ফিরছি। রঞ্জি ট্রফিতে নামতে তৈরি। মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে এই ছবি দিয়ে লিখলেন মহম্মদ শামি।

প্রত্যাবর্তন: ৩৬০ দিন পরে ক্রিকেটে ফিরছি। রঞ্জি ট্রফিতে নামতে তৈরি। মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে এই ছবি দিয়ে লিখলেন মহম্মদ শামি। ছবি: এক্স।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৭
Share
Save

আমদাবাদের পর ইন্দোর। ১৯ নভেম্বরের পর ১৩ নভেম্বর। কে জানত প্রায় এক বছর লেগে যাবে তাঁর মাঠে ফিরতে?

শুধু বঙ্গ বা ভারতীয় ক্রিকেটের ভক্তরাই নন, যাঁরা পেস বোলিংয়ের মধ্যে শিল্প খোঁজেন, তাঁদের জন্যও সুসংবাদ হচ্ছে, মহম্মদ শামি ফিরছেন। পায়ের পাতার চোট সম্পূর্ণ ভাবে তাঁকে ক্রিকেট থেকে ছিটকে দিতে পারেনি। আজ, বুধবার থেকে ইন্দোরে শুরু মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচে শামি নামছেন। এক-এক সময় যদিও মনে হচ্ছে, শামি আবার মাঠে নামছেন, কথাটা খুব জোলো হয়ে যাচ্ছে। আসলে তো আরও একবার অগ্নিপরীক্ষা দিতে নামছেন! কারও কারও জীবনে পরীক্ষার কোনও শেষ হয় না যে!

এই ম্যাচে তাঁর বোলিং দেখা হবে পরে। আগে যাচাই করা হবে ফিটনেস। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ম্যাচে বোলিং করতে পারছেন কি না। তার উপরে নির্ভর করবে অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন টেস্ট সিরিজ়ের দরজা আদৌ খুলবে কি না। কোন কোন জাতীয় নির্বাচক এই ম্যাচ দেখতে আসছেন? বোর্ডের কেউ কি থাকবেন? এ সব প্রশ্নগুলো অবান্তর মনে হচ্ছে। কারণ, এঁদের কারও উপরে শামির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে না।

বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গেল, শামি একা ইন্দোরে আসেননি। তাঁর সঙ্গী হয়েছেন দু’জন। কারা তাঁরা? না, জাতীয় অ্যাকাডেমির ফিজ়িয়ো ও ট্রেনার। এর মধ্যে ফিজ়িয়ো নীতীন পটেলকে নিয়ে এটাই বলতে হয়, ফিটনেস সংক্রান্ত ব্যাপারে এত প্রভাবশালী ব্যক্তি গত কুড়ি বছরে এসেছে কি না সন্দেহ। তাঁর ‘হ্যাঁ’ মানে ইনি খেলবেন। তাঁর ‘না’ মানে হয়ে গেল। জাতীয় অ্যাকাডেমি থেকে অবশেষে ম্যাচ খেলার অনুমতি মিললেও তাই শামির জন্য অস্ট্রেলিয়া সফর এখনও পুরোপুরি ‘চিচিং ফাঁক’ হয়নি। তাঁকে এই রঞ্জি ম্যাচে যে ভাবেই হোক প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি একশো শতাংশ ফিট। অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ স্পেল করার জন্য তৈরি। ‘এফবিআই এজেন্ট’-এর মতো দুই ছায়াসঙ্গীকে লাগিয়ে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে, ফিটনেস নিয়ে বিন্দুমাত্র আপস করা হবে না। নির্বাচকদের মতামত পরে আসবে। আগে ফিজ়িয়ো-ট্রেনার দেখবেন। ঠিক যেমন রুগিকে আগে টেস্টে পাঠানো হয়, তার পরে রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার।

মনে রাখা দরকার, শামির জন্য এটাই শেষ সুযোগ। কারণ, এই ম্যাচের পরেই রঞ্জির প্রথমার্ধ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর পরে মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি শুরু হবে। সেই প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবেন তিনি। তবে সেক্ষেত্রে নভেম্বরের শেষে আইপিএল নিলামের জন্য ‘অডিশন’ দেওয়া হবে, অস্ট্রেলিয়ায় মহাদ্বৈরথে অংশ নেওয়া হয়তো হবে না। তবে শামিও নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারেন অতীত উদাহরণ থেকে। এই ইন্দোরেই যে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর জীবনের প্রথম হ্যাটট্রিক। যা তাঁকে আজকের মহম্মদ শামি করে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।

এমনিতে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির জন্য ভারতীয় দল ঘোষিত হয়ে গেলেও শামি যদি বাংলার এই রঞ্জি ম্যাচে ফিট প্রমাণিত হন, তাঁকে যে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পার্‌থে প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে ২২ নভেম্বর। ভারতীয় দলের অনেকে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন। বিরাট কোহলিও পৌঁছে গিয়েছেন। শামিকেও তড়িঘড়ি উড়ানে তোলার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে পার্‌থের আগুনে পিচে যাতে তাঁকে নামানো যায়, সেই ফাস্ট ট্র্যাক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে কষ্টসাধ্য কোনও ব্যাপারই নয়। না হলেও পার্‌থে প্রথম ও অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্টের মধ্যে ৯ দিন সময় রয়েছে। অন্তত অ্যাডিলেডের দিনরাতের টেস্টের আগে শামি পৌঁছে যেতেই পারেন, যদি ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যান।

অস্ট্রেলিয়ার জন্য নির্বাচিত দলে ভারতীয় পেসারদের নামগুলোয় চোখ বোলালে প্রার্থনার জোর আরও বাড়বে যে, শামি যেন পরীক্ষায় পাশ করেন। না হলে এই কাঁচা বোলিং নিয়ে জেতা যাবে? অভিজ্ঞ বলতে যশপ্রীত বুমরা আর মহম্মদ সিরাজ। বাকিরা আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও হর্ষিত রানা। যাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। একেই দেশের মাঠে ০-৩ বর্শাবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত মহাতারকা ব্যাটিং। তার উপরে পেস বোলিং বিভাগ যদি এমন পলকা দেখায়, তা হলে অস্ট্রেলিয়ায় গত দু’বারের বিজয়রথ চালু রাখা যাবে?

শামি শেষ বলটি করেছিলেন আমদাবাদে বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই কালরাত্রিতে। তখন কেউ বুঝতে পারেননি যে, বিয়েবাড়ির সাজানো প্যান্ডেলে একই সঙ্গে দু’টো আলো ঝুপ করে নিভে গেল। কাপ জেতা হল না, সঙ্গে ডান পায়ের পাতায় মারাত্মক চোট শামির ক্রিকেটজীবনই অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢেকে দেবে। যে লোকটা কি না বিশ্বকাপে প্রথম থেকে উপেক্ষিত থাকল, তার পরে সুযোগ পেয়েই টিম ম্যানেজমেন্টের মুখের উপরে জবাব ছুড়ে দিল যে, দ্যাখো কী অন্যায় তোমরা করছিলে আমাকে বসিয়ে রেখে। সাত ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা বোলার, গড় অবিশ্বাস্য ১০.৭০! তখন কে ভেবেছিলেন, পায়ের পাতায় অস্ত্রোপচার হয়ে এক বছর আর ক্রিকেট বলই ধরা হবে না। আন্দামানের দ্বীপে নির্বাসিত হওয়ার মতো বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে পড়ে থাকতে হবে দীর্ঘ রিহ্যাব করার জন্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরু থেকে তিনি যখন ইন্দোর রওনা হচ্ছেন, খুব স্বাভাবিক যে, আবেগ ঠিকরে বেরোবে। উড়ান ধরতে যাওয়ার ছবি এক্স-এ তুলে দিয়ে শামি লিখেছেন, ‘‘এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। রঞ্জি ট্রফিতে খেলার জন্য তৈরি। একই রকম তীব্রতা এবং খিদে নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত আমি।’’ ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাঁদের ভালবাসা ও সমর্থনের জন্য। বিশেষ করে কঠিন সময়ে যে ভালবাসা তারকার শ্বাস-প্রশ্বাস বাঁচিয়ে রাখে।

ছবিটা দেখেও ক্রিকেট-ট্রিকেট কিছু মাথায় আসছে না। কেমন জানি মনে হচ্ছে, গরাদ থেকে মুক্তি পাওয়া কেউ তাঁর আপন সংসারে ফিরছেন!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mohammed Shami Cricket Ranji Trophy 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}