গ্রিনফিল্ডের পিচে ঘায়েল হলেন দু’দলের ব্যাটাররাই। ফাইল ছবি
তিন বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির আসর বসেছিল তিরুঅনন্তপুরমে। স্বাভাবিক ভাবেই ফুটবল-পাগল কেরলের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের সমর্থন জানাতে অনেক আগেই থেকেই মাঠে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন সমর্থকরা। তবে প্রশ্ন উঠে গেল গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে। এত সবুজে ভরা পিচ সাম্প্রতিক কালে ভারতের কোনও মাঠে দেখা গিয়েছে কি না, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না।
ঘরের মাঠে খেলা হলে সাধারণত স্পিন সহায়ক পিচ বানিয়ে থাকে ভারত। কিন্তু বুধবারের পিচ দর্শনে এবং আচরণে সম্পূর্ণ উল্টো। পিচে এতটাই ঘাস, যে আউটফিল্ডের সঙ্গে তাঁকে আলাদা করা যাচ্ছিল না। ভারতের সবচেয়ে দ্রুততম পিচ হিসাবে পরিচিতি রয়েছে হরিয়ানা লাহলি স্টেডিয়ামের। সেই পিচকেও হার মানাল গ্রিনফিল্ড। দু’দলের ব্যাটাররাই খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিঃসন্দেহে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। তাদের টপ অর্ডার তাসের ঘরে ভেঙে পড়াই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।
ম্যাচের আগে পিচ পরীক্ষা করতে গিয়ে পমি এমবাঙ্গোয়া এবং অজিত আগরকর জানিয়েছিলেন, এই পিচে ব্যাট করা কঠিন। বাউন্ডারি যতই ছোট হোক, তা পেরনো সহজ হবে না। অজিত আগরকর বলছিলেন, “পিচে ভালই ঘাস রয়েছে। ফলে শুরুর দিকে জোরে বোলাররা সাহায্য পাবে। ম্যাচের মাঝে শিশিরও পড়তে পারে।” আগরকরের আশঙ্কা সত্যি করে প্রথম থেকেই গ্রিনফিল্ডের পিচে আগুন ঝরালেন ভারতের জোরে বোলাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা ছোট থেকেই দ্রুতগতির পিচে খেলে অভ্যস্ত। ডারবানের কিংসমিডের পিচ সবচেয়ে দ্রুতগতির। এর পরেই থাকবে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স। বুধবার টেম্বা বাভুমারা অবাক হয়ে দেখলেন, এক টুকরো কিংসমিড উঠে এসেছে গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে! সেই পিচে খেলতে গিয়ে ল্যাজে-গোবরে দশা হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথম থেকেই বল আসছিল দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গে ছিল বিষাক্ত সুইং, যা পুরোপুরি কাজে লাগালেন ভারতীয় বোলাররা। ব্যাটে ঠেকানোর সাহসই পাচ্ছিলেন না প্রোটিয়া ব্যাটাররা। ১৫ বলে বিপক্ষের প্রথম পাঁচ উইকেট তুলে নিল ভারত। প্রথম ওভারেই ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হলেন বাভুমা।
দ্বিতীয় ওভারেই আরশদীপ সিংহ তুলে নিলেন তিনটি উইকেট। তার মধ্যে ডেভিড মিলারের আউট হওয়ার ধরন বাভুমার মতোই। ইন সুইং বল বাভুমার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্প নড়িয়ে দিল। তার পরের ওভারে আরশদীপের বল কুইন্টন ডি’ককের ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দিল। রিলি রোসৌ অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়েছিলেন। সহজ ক্যাচ নিলেন ঋষভ পন্থ। তৃতীয় ওভারে পঞ্চম উইকেটটি তুললেন দীপক চাহার। বস্তুত, দুই পেসারকে দিয়েই পাওয়ার প্লে শেষ করিয়ে দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ফল পেলেন হাতেনাতে।
ভারতের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সহজ ছিল না। পিচে তখনও পুরোমাত্রায় প্রাণ ছিল। তার শিকার হলেন রোহিত। ভারতের ইনিংসের প্রথম দু’টি ওভার লোকেশ রাহুল খেলে দেন। তৃতীয় ওভারে প্রথম বার ব্যাট করার সুযোগ পান রোহিত। কাগিসো রাবাডার দ্বিতীয় বলেই খোঁচা দিয়ে ক্যাচ। টিকতে পারলেন না বিরাট কোহলিও। তাঁকে তুলে নিলেন অনরিখ নখিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারের উঁচু হয়ে আসা বলে চালাতে গিয়েছিলেন কোহলি। উইকেটের পিছনে ক্যাচ ডি’ককের।
এর আগে যে দু’টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে, সেখানে প্রথম ইনিংসে গড় রান ১১৮। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গড় রান ১২৭। ফলে ‘সুখ্যাতি’ রেখেই তিরুঅনন্তপুরমে শেষ হল ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy