রাজকোট টেস্ট শেষ হল না। কিন্তু রাজকোট টেস্টের উইকেট নিয়ে বিতর্ক লেগে গেল।
সোজাসুজি বললে, বোর্ড কিউরেটরের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দিলেন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার কিউরেটর রশিক মকওয়ানা। পরিষ্কার বলে দিলেন, রাজকোট পিচে চতুর্থ দিনেও টার্ন না হওয়ার নেপথ্যে দেশের প্রধান কিউরেটর দলজিৎ সিংহ এবং ধীরজ পারসানা। যাঁদের এই টেস্টের উইকেট করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। এমন উইকেট বানানোয় তাঁর কোনও হাত নেই। তিনি চেয়েছিলেন টার্নিং উইকেট করতে!
চতুর্থ দিনের পিচেও সে ভাবে টার্ন না পাওয়ায় শনিবার প্রশ্ন উঠছিল এমন পিচের কাযর্কারিতা নিয়ে। ভারতের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসেছিলেন মুরলী বিজয়। এমন অচেনা ফোর্থ ডে পিচ নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেসও করা হয়। বিজয় কোনও বিতর্কিত কথা বলেননি। শুধু বলেছেন, উইকেট এখনও ভাল আছে। তাঁরা আশা রাখেন, পঞ্চম দিন সকালে ইংল্যান্ডের কয়েকটা উইকেট তুলে নিতে পারবেন। বিতর্কটা বাঁধে পরে। বাঁধিয়ে দেন সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার কিউরেটর।
দলজিৎ এবং ধীরজ, দু’জনেই এ দিন সকালে বেরিয়ে যান। পড়ে ছিলেন একমাত্র সৌরাষ্ট্র কিউরেটর রশিক। পিচে কেন এখনও টার্ন নেই, জানতে চাওয়া হলে তিনি পরিষ্কার বলে দেন, এটা তাঁর পিচ নয়। তাঁকে যেমন বলা হয়েছে, করতে হয়েছে। “আমি চেয়েছিলাম, একটু টার্নিং করতে। চেয়েছিলাম, তৃতীয় দিন থেকে বল টার্ন করুক। আমাকে দিলে তাই করতাম। কিন্তু বোর্ড কিউরেটর এসে গেলেন। উনি বললেন, এ রকম হবে না। উইকেট আগে হার্ড ছিল। উনি এসে অল্প জল দিয়ে চার দিকে রোল করে দিলেন। উইকেট যেমন আগে হার্ড ছিল, তেমনই থেকে গেল। এতে টার্ন হয় নাকি? ভাল করে জল দিয়ে ছেড়ে দিলে সারফেসের মাটি আস্তে আস্তে লুজ হতে থাকে। সেটাই তো হয়নি। মাটি ঝুরঝুরে হলে তবে তো টার্ন হবে,” গজগজ করতে থাকেন কিউরেটর।
কিন্তু ভারত যে আশা করছে, শেষ দিন টার্ন হবে? উইকেটও পাওয়া যাবে? শুনে আরও তেতে যান রশিক। এ বার বলে দেন, “কিছুই হবে না। আজ ক’টা বল দারুণ ঘুরেছে? আমি পুরো ম্যাচটা দেখেছি। মাত্র একটা! দেখুন আমি খবর পেয়েছিলাম যে ইন্ডিয়ান টিম চেয়েছিল উইকেটে টার্ন থাকুক একটু। আমার সংস্থা থেকে আমাকে বলাও হয়েছিল সে ভাবে পিচ বানাতে। করছিলামও। কিন্তু ওঁরা এসে অন্য রকম করতে বললেন। আমি কী করব? আমি গিয়ে বোর্ড কিউরেটরকে বলব যে, অমুকটা করুন? উনি ইন্ডিয়া কিউরেটর। উনি তো জানবেন।” সঙ্গে রশিক দ্রুত যোগ করে দেন, “খারাপটা লাগছে কেন জানেন? লোকে এসে আমাকে বলছে। বলছে, রশিকভাই কী উইকেট এটা বানিয়েছো? আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি, ভাই এটা আমার উইকেট নয়। যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। আমার উপর থাকলে যে দিন থেকে বলত, বল ঘোরানোর ব্যবস্থা করে দিতাম!”
এক কথায়, বোর্ড কিউরেটরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ।
সন্ধেয় বোর্ড কিউরেটরকে ধরে বিষয়টা বলা হলে, তিনি সব শুনে বললেন, “উনি এটা বলেছেন? আমার শুভেচ্ছা রইল ওঁর জন্য। আমার কিছু বলার নেই এই ব্যাপারে।” বরং তাঁর মতে, পিচ নিয়ে এত কথাবার্তার কিছু নেই। “আমাকে বলতে বললে এটুকুই বলব যে, এটা গুড টেস্ট ম্যাচ পিচ। যেখানে পাঁচ দিন পর্যন্ত খেলা যাচ্ছে। ইংল্যান্ড ভাল রান করার পর ভারতও ভাল করেছে।” দলজিৎ এর বাইরে কথা বাড়াতে চাইলেন না। কিন্তু বোর্ডের কিউরেটর মহলে কেউ কেউ উইকেট নিয়ে এত চর্চা দেখে বেশ ক্ষুব্ধ। এঁরা বলাবলি করছেন যে, ঘূর্ণি উইকেট পেলেও কিউরেটদের দোষারোপ করা হয়। আবার পাঁচ দিন খেলা চললেও কেউ না কেউ ঠিক কিছু বলে। ভারত এত ক্যাচ ফেলে যদি টেস্টকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যায়, কিউরেটর কী করবে?
এঁরা বলছেন ঠিকই, কিন্ত তাতে আর লাভ কী? যা হওয়ার তো হয়ে গিয়েছে। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট থেকেই পিচ নিয়ে ধুন্ধুমার তো লেগে গেল।
শুধু টিম বনাম কিউরেটরে নয়। কিউরেটর বনাম কিউরেটরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy