ক্লাবে গিয়ে মন ভাঙল গোষ্ঠ পালের ছেলে নীরাংশু পালের। —নিজস্ব চিত্র
হাতে বাবার পাওয়া জরাজীর্ণ সব পুরস্কার। মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে হাউহাউ করে কাঁদছেন গোষ্ঠ পালের ছেলে নীরাংশু পাল! ২৭ বছর আগে গোষ্ঠ পালের পাওয়া পদ্মশ্রী-সহ এই সমস্ত পদক, দুষ্প্রাপ্য সব ছবি, দুর্মূল্য ব্যাজ মোহনবাগানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন নীরাংশুবাবু। শনিবার সে সবের ধ্বংসাবশেষই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল! এ নিয়ে শেষমেশ পুলিশের কাছে গিয়েছেন তিনি।
এগুলো ফেরত নিতেই নীরাংশুবাবুকে শুক্রবার ফোন করা হয়েছিল ক্লাবের তরফে। পুরনো জিনিস ফেরত পাওয়ার আনন্দ নিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি। বহু বছর ধরেই ক্লাবকে দেওয়া ওই সমস্ত জিনিসের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এত দিন পর সেগুলো ফিরে পাওয়া যাবে এই আনন্দে ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব উবে যায়।
ক্লাবে পৌঁছনোর পর একটি বাজারের ব্যাগ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়, যার ভেতরে ছিল ‘চিনের প্রাচীরের’ হারিয়ে যাওয়া পুরস্কারগুলো। তার কোনওটা ভেঙে গিয়েছে, ইঁদুরের কামড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে দামি মানপত্র! এ দিন তাঁর হাতে যে সমস্ত জিনিস তুলে দেওয়া হয়েছে, তাতে ছিল না পদ্মশ্রী পদক। দুর্মূল্য ব্যাজেরও খোঁজ মেলেনি।
আরও পড়ুন: ১৮ বছর আগের স্মৃতি কি ফিরবে? প্রার্থনায় বসেছেন প্রথম বারের নায়ক
কিংবদন্তি বাবার প্রতি ক্লাবের অমর্যাদা-অশ্রদ্ধা দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি নীরাংশুবাবু। হাত দিয়ে কোনও রকমে চোখের জল মুছে আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, ‘‘একটা ট্রফিও এখন আর অক্ষত অবস্থায় নেই। দেখে মনে হচ্ছে অত্যন্ত অযত্নে এত দিন ফেলে রাখা হয়েছিল এগুলো।’’
জরাজীর্ণ অবস্থা গোষ্ঠ পালের পুরস্কারের। —নিজস্ব চিত্র।
অথচ এমন জিনিস তো তিনি তুলে দেননি ২৭ বছর আগে! এতটা অযত্ন কি প্রাপ্য ছিল কিংবদন্তি গোষ্ঠ পালের? ইতিহাসের এক শিহরণের নাম গোষ্ঠ পাল। তাঁকে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে কত ঘটনা। সেই গোষ্ঠ পালই পেলেন না সম্মান! প্রশ্ন তুলছেন গোষ্ঠপ্রেমীরা। কিন্তু, কোথায় গেল সেই সব অমূল্য ট্রফি? সদুত্তর পাননি গোষ্ঠ পালের পরিবার। ক্লাবের তরফে আরও কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছে।
সবুজ-মেরুন তাঁবু থেকে নীরাংশুবাবু এর পর সোজা ছোটেন ময়দান থানায়। সেখানে অভিযোগ জানান। নীরাংশুবাবু বলেন, ‘‘সবটাই জানিয়েছি ময়দান থানায়। মোহনবাগান ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, ওঁরা বাকি ট্রফিগুলো খুঁজছেন।’’
এত দিন বাদে কেন টনক নড়ল? বাগানের প্রাক্তন কর্তা স্বাধীন মল্লিক বলছেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গোষ্ঠ পালকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। সেগুলো পড়ে খুব ব্যথিত হচ্ছিলাম। আমি এখন আর কমিটিতে নেই। তবুও খোঁজ করে কয়েকটা ট্রফি পেয়েছি। বাকিগুলোর খোঁজ করতে হলে তো সময় লাগবে।’’
ইঁদুর কামড় বসিয়েছে মানপত্রে। থানায় অভিযোগ গোষ্ঠ পালের ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।
২৭ বছর কম সময় নয়। এর মধ্যে বহু বার ক্লাবকর্তাদের চিঠি দিয়েছিল গোষ্ঠ পালের পরিবার। সেই সব আবেদনে কর্ণপাত করা হয়নি। নীরাংশুবাবু বলছেন, ‘‘আমরা বহু বছর ধরেই পুরস্কারগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের আবেদনে কর্ণপাত করা হয়নি। সম্প্রতি বাবার পাওয়া পুরস্কার নিয়ে লেখালেখি হওয়ায় শুক্রবার স্বাধীন মল্লিক আমাকে ফোন করেন। বলেন, ক্লাবে এসে জিনিসগুলো যেন নিয়ে যাই। আজ জিনিসগুলোর অযত্ন দেখে খুব খারাপ লাগছে।’’
ভারতের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ১৯৬২তে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল গোষ্ঠ পালকে। ১৯৭৬-এ মারা যান তিনি। ১৯৯২ সালের ২০ অগস্ট গোষ্ঠ পালের ইচ্ছানুয়ায়ী সমস্ত পুরস্কার, ট্রফি নীরাংশুবাবু দিয়ে এসেছিলেন মোহনবাগানের হাতে। গোষ্ঠ পালের ছেলে বলছিলেন, ‘‘আসলে বাবা চাইতেন, প্রাক্তন ফুটবলারদের পাওয়া পুরস্কারগুলো ক্লাবের সংগ্রহশালায় জায়গা পাওয়া উচিত। ২৭ বছরেও সেই পুরস্কারগুলো রাখা হয়নি ক্লাবের সংগ্রহশালায়। উল্টে সেগুলোর অমর্যাদা করা হয়েছে।’’
এত দিন পরে প্রকাশ্যে এল রহস্যাবৃত এক অধ্যায়। তাতে বাড়ল লজ্জাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy