মন্দাকিনী পণ্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
বয়স ১০৫। বার্ধক্যজনিত সমস্যা থাকলেও এখনও বয়সের কাছে হার মানেননি মেদিনীপুরের বাসিন্দা মন্দাকিনী পণ্ডা। তাঁর বাড়ি মেদিনীপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনবাজার এলাকায়। এখনও নিজের কাজ নিজেই করেন। ভাল ভাবেই কথা বলতে পারেন, কানেও শোনেন। স্বামী ৪০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। বয়সের ভারে এখন কুঁজো হয়ে হাঁটেন। আগে ভোট দিতে বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলে রিকশা করে যেতেন। তবে কয়েক বছর ধরে বাড়িতে বসেই ভোট দেন মন্দাকিনী। তাঁর বাড়িতেই ভোটকর্মীরা চলে আসেন। ভোটদানের সময় নিজেই সবাইকে সরে যেতে বলেন। নিজের মতো করে ভোট দেন।
এ বারও মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছেন মন্দাকিনী। তিনি বলেন, “আমার বাবার বাড়ি ডেবরা রসুলপুর গ্রামে। বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা বেশি করতে পারিনি। নিজের নাম সই করতে পারি। তবে এখন হাতের লেখা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তাঁর ছয় মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মারা গিয়েছেন। মেজো আর ছোট ছেলের কাছেই থাকেন মন্দাকিনী। ছোট পুত্রবধূ কাকলি বলেন, “গত বছর টাকা তুলতে গেলে ব্যাঙ্কের কর্মীরা অবাক হয়ে যান শাশুড়ি মায়ের বয়স দেখে। ওঁকে কেউ কেউ আবার প্রণামও করেন।” কাকলি জানান, গত বারের লোকসভা ভোটের সময়ে বাড়িতেই মন্দাকিনীর ভোট নিতে এসেছিলেন ভোটকর্মীরা। সে সময় নিজের মতো করে ভোট দিয়েছেন। কাকলি আরও জানান, শাশুড়ি নিজেই বলেছেন, “ভোট দেওয়া আমার অধিকার। ভোটদানের সময় তোমরা কেউ সামনে আসবে না।” বৃদ্ধার নাতি প্রিন্স ব্যারাকপুরে বিটেক পড়ছেন। প্রিন্স বলেন, “বাড়িতে এলে ঠাকুমার চুল বড় হয়ে গেলে আমি কেটে দিই। পায়ের নখ কাটতে পারি না, কারণ খুব ছোট করে দিলে রেগে যান।” এলাকার বাসিন্দা সহদেব চৌধুরী বলেন, “প্রতি বছর কাউন্সিলরের থেকে মন্দাকিনীর জন্য লাইফ সার্টিফিকেট নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিই। এ বারেও ভোটকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ভোট নেবেন। নিশ্চয় উনি ওঁর গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবেন।”
আগামী ১৩ নভেম্বর মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে ১০০ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটার রয়েছেন ৯৫ জন। তার মধ্যে মহিলা ৬৮ এবং পুরুষ ২৭। তা ছাড়া ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটার রয়েছেন ২৬০৭ জন। এঁদের বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে নির্বাচন দফতর। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, বুথে গিয়ে নয়, বয়স্ক (৮৫ বছরের ঊর্দ্ধে) ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকা মানুষ)-দের জন্য বাড়িতে বসে ‘হোম ভোটিং’-এর সুবিধা রয়েছে। এ বারের উপনির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি। তিনি বলেন, “বয়স্ক ভোটার এবং প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য বাড়ি গিয়ে ভোট নেবেন প্রিসাইডিং অফিসারেরা। তার তালিকা রয়েছে, সেই মতো কাজ করা হবে।”
জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি কোনও ভোটার বাড়িতে ভোট না দিয়ে কেন্দ্রে আসতে চান তা-ও করতে পারেন। তবে বয়স্কদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy