Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rameshbabu Praggnanandhaa

প্রজ্ঞা তাঁরই ছাত্র, তবু দাবা বিশ্বকাপ ফাইনালে কেন কোচের সমর্থন ছিল প্রতিপক্ষের দিকেও

ছোট থেকে আরবি রমেশের কাছেই দাবা শিখেছেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে প্রজ্ঞার দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার নেপথ্যে মাথা ভারতের ৪৭ বছর বয়সি কোচেরই।

R Praggnanandhaa

রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। —ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ১৮:৫৩
Share: Save:

দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল চলাকালীন বেজায় দোটানায় ছিলেন আরবি রমেশ। ভারতের দাবাড়ু রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দের কোচ তিনি। নিজের প্রিয় ছাত্রের জয় চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। তা হলে সমস্যা কোথায়? আসলে প্রজ্ঞার প্রতিপক্ষ পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনও তো তাঁর খুব কাছের। কার্লসেনের দাবা অ্যাকাডেমি ‘ওফারস্পিল ক্লাব’-এর প্রধান কোচ রমেশ। তাই তিনি বুঝতে পারছিলেন না কোন দিকে যাবেন। সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘‘দু’জনেই আমার খুব প্রিয়। ফাইনালে যে ভাল খেলবে, সে জিতবে। আশা করি খুব ভাল ম্যাচ হবে। তবে প্রজ্ঞা যে এত দূর এসেছে সেটা কম কৃতিত্বের নয়।’’ শেষ পর্যন্ত কার্লসেনের কাছে টাইব্রেকারে হারতে হয়েছে তাঁর ছাত্র প্রজ্ঞাকে।

রমেশের কথা থেকে পরিষ্কার, প্রজ্ঞার কৃতিত্বে গর্বিত তিনি। হবেন নাই বা কেন! এই ছেলেকে নিজের হাতে তৈরি করেছেন। বিশ্বনাথন আনন্দের পরে যে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছেন প্রজ্ঞা তার নেপথ্যে প্রধান মাথা তো রমেশেরই। মেয়ে রমেশবাবু বৈশালীর পরে ছেলে প্রজ্ঞাকে তাঁর অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন কে রমেশবাবু। সেই শুরু। সেখান থেকে রমেশই তো ছোট থেকে প্রজ্ঞাকে রাজা-রানি-গজের খেলা শিখিয়েছেন। বুঝিয়েছেন ৬৪ খোপের কোথায় কী চাল দিলে প্রতিপক্ষকে হারানো যায়।

ভারতের দশম গ্র্যান্ডমাস্টার রমেশ। ২০০২ সালে ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০০৮ সালে কমনওয়েলথ জেতেন। তার পরেই তিনি ঠিক করে নেন, তরুণ দাবাড়ুদের তুলে আনার কাজ শুরু করবেন। ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে স্ত্রী আরতি রামস্বামীর সঙ্গে মিলে নিজের অ্যাকাডেমি চেন্নাইয়ে ‘চেস গুরুকুল’ খোলেন রমেশ। আরতি নিজেও দাবাড়ু ছিলেন। রমেশের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন ভারতের বেশ কয়েক জন গ্র্যান্ডমাস্টার। তবে সব থেকে বড় নাম প্রজ্ঞানন্দ। তিনিই রমেশকে বিশ্ব ক্ষেত্রে আরও পরিচিতি দিয়েছেন।

রমেশের কোচিং জীবন অবশ্য শুরু আরও ১০ বছর আগে। ১৯৯৮ সালে। অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই। ২২ বছরের রমেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতীয় দাবা সংস্থা। সেই সময় ইরানে ছিলেন ২২ বছরের রমেশ। আর সেখানেই চলছিল এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ। তাই রমেশকে সেই দলের কোচ করা হয়েছিল। তার পরেই পাকাপাকি ভাবে কোচিং করানোর ভাবনা মাথায় আসে রমেশের।

ইরান থেকে ফিরে এসে আরতিকে কোচিং করানো শুরু করেন রমেশ। সেই শুরু। প্রজ্ঞার কোচ পরে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ইরান থেকে ফিরে আমি আরতির বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করি। ওঁদের বলি, আরতিকে কোচিং করাতে চাই। ওঁরা রাজি হন। পরের বছর স্পেনে আরতি বিশ্ব অনূর্ধ্ব-১৮ দাবা প্রতিযোগিতা জেতে।’’ আরতির সাফল্যের পরেই আরও কোচিংয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন রমেশ। তখন কয়েক জন তরুণ দাবাড়ুকে অনুশীলনে সাহায্য করতেন রমেশ। তবে কোনও কোচিং অ্যাকাডেমি ছিল না। পরে তা শুরু হয়।

২০০৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর ভারতীয় দাবা দলের কোচ ছিলেন রমেশ। পাশাপাশি ফিডে (আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা)-র সিনিয়র ট্রেনারের কাজ করছেন তিনি। ২০১৫ সালে ফিডে রমেশকে এশিয়ার সেরা যুব কোচের পুরস্কার দেয়। তিন বছর পরে ২০১৮ সালে তাঁকে বিশ্বের সেরা যুব কোচের পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২২ সালে এশীয় দাবা সংস্থা রমেশকে সেরা কোচের তকমা দেয়। রমেশের এই একের পর এক পুরস্কার বিশ্ব জুড়ে তাঁকে পরিচিতি দেয়। ২০২২ সালেই রোমানিয়ার দাবা সংস্থা তাঁকে সে দেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়। সেই বছরই নরওয়েতে আমন্ত্রণ করে রমেশের হাতে নিজের অ্যাকাডেমির ভার তুলে দেন কার্লসেন।

এক জন গ্র্যান্ডমাস্টার থেকে কোচ হিসাবে রমেশের এই উত্থান কোনও সিনেমার থেকে কম নয়। কিন্তু এখনই থামতে রাজি নন তিনি। একের পর এক দাবাড়ু তুলে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি। প্রজ্ঞানন্দের মতো দাবাড়ুরা আরও আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে রমেশের। ভারতীয় দাবার আরও উন্নতির জন্য নিজের মস্তিষ্ক খাটিয়ে চলেছেন ৪৭ বছরের রমেশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy