দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ছবি: পিটিআই
ইতিহাস তৈরি করার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। বিশ্বনাথন আনন্দের পরে ভারতের দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসাবে দাবা বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে। কিন্তু পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে হারতে হয়েছে তাঁকে। তাতে অবশ্য প্রজ্ঞার কৃতিত্বকে ছোট করে দেখা যায় না। কারণ, এত অল্প বয়সে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা কম কৃতিত্বের নয়। প্রজ্ঞা যে খালি হাতে ফিরবেন না তা আগে থেকেই জানতেন তাঁর বাবা কে রমেশবাবু। কী ভাবে এত অল্প বয়সে এই কীর্তি প্রজ্ঞার? বাবার কথায়, সব সময়ই মাথায় চৌষট্টি খোপ ঘোরে প্রজ্ঞার। ঘুমের মধ্যেও তিনি দাবা খেলেন। গুরু আনন্দের মন্ত্র নিয়েই এগোচ্ছেন ১৮ বছরের দাবাড়ু।
২০০৫ সালের ১০ অগস্ট চেন্নাইয়ে জন্ম নেওয়া প্রজ্ঞা ছোট থেকেই বাড়িতে দাবার পরিবেশ পেয়েছেন। তাঁর দিদি বৈশালী রমেশবাবুও এক জন নামকরা দাবাড়ু। ২০১৩ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-৮ ওয়ার্ল্ড ইউথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন প্রজ্ঞা। সেখানে জেতার পরে ফিডে মাস্টারের খেতাব অর্জন করেন তিনি। ২০১৩ সালে বিশ্ব যুব দাবা প্রতিযোগিতা জেতা দিয়ে শুরু। তার পর কোনও দিন আর পিছনে তাকাতে হয়নি প্রজ্ঞানন্দকে। একের পর এক প্রতিযোগিতায় ট্রফি জিতে বাড়ির ক্যাবিনেট ভরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। ১০ বছর ১০ মাস ১৯ দিন বয়সে বিশ্বের কনিষ্ঠতম আন্তর্জাতিক মাস্টার্স (আইএম) হন। তার পরে ২০১৬ সালে মাত্র ১২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন বয়সে ভারতের দ্বিতীয় ও বিশ্বের পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ (অভিমন্যু মিশ্র, গুকেশ ডি, সের্গে কার্জাকিন ও জাভোখির সিন্দারতের পরে) গ্র্যান্ডমাস্টার হন প্রজ্ঞানন্দ।
তবে দাবার সঙ্গে প্রজ্ঞানন্দের পরিচয় নেহাতই আকস্মিক। মেয়ে বৈশালীর টিভি দেখার নেশা ছাড়াতে তাঁকে স্থানীয় দাবার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন রমেশবাবু। দিদির দেখাদেখি প্রজ্ঞানন্দও ভালবেসে ফেলেন দাবাকে। ৬৪ খোপের খেলাতে মজে থাকতেন সারাক্ষণ। তাঁকেও দাবার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন রমেশবাবু। কখনও ভাবেননি যে সেই ছেলেই এক দিন দিদিকে ছাপিয়ে যাবেন এবং দেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে পড়বেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে রমেশবাবু বলেন, “ছোটবেলা থেকেই দাবায় ওর আগ্রহ ছিল। দেখছিলাম ভাল খেলছিল। বড় বড় খেলোয়াড়দেরও হারিয়েছিল। কিন্তু দাবা খেলা শুরু করার সময় আমাদের কোনও প্রত্যাশা ছিল না। আমরা চাইতাম ও নিজের মনের আনন্দে খেলুক। কোনও চাপ যাতে ছোটবেলায় ওর উপরে না পড়ে সেটা লক্ষ্য রাখতাম।”
বাকি ছেলেমেয়েরা যখন এই বয়সে স্কুল পর্যায় পার করে সফল কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, তখন প্রজ্ঞানন্দ প্রথাগত শিক্ষাজগৎ থেকে অনেকটাই দূরে। দিনের বেশির ভাগটাই কাটে দাবার বোর্ডে। মাথায় ঘোরে নতুন চাল। দেশ-বিদেশে ঘোরা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সাফল্যও আসছে। কী ভাবে প্রস্তুতি নেন প্রজ্ঞানন্দ? রমেশবাবুর উত্তর, “সত্যি বলতে, ওর প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি কোনও দিন মাথা ঘামাইনি। এটা পুরোপুরি দেখেন ওর কোচ। তিনি অনেক ভাল বোঝেন এই বিষয়ে। কোনও দিন আমি ভেতরে ঢুকতে চাইনি। আমি অত টেকনিক্যাল দিকগুলো বুঝতে পারব না। তবে দিনে ছ-সাত ঘণ্টা অনুশীলন করত, এটা দেখেছি। বিশ্বকাপের আগেও বাড়িতে থেকে অনুশীলন করেছে। নিবিড় অনুশীলনে ডুবে থাকত। তা ছাড়া সমাজমাধ্যম থেকে নিজেই দূরে থাকে। ফলে কোনও দিন বাইরের জগতের কোনও কিছু ওকে স্পর্শ করতে পারেনি।”
প্রজ্ঞানন্দের কোচ রমেশবাবু জানিয়েছেন, ছোট থেকেই তিনি খুব পরিশ্রমী। তাঁর অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যখন ওপেনিং নিয়ে সময় ব্যয় করতেন, তখন প্রজ্ঞা মিডল বা এন্ড গেম শিখতেন। ওঁর মাথাটা কম্পিউটারের মতো। প্রজ্ঞার বাবার কথায়, ছেলের ধ্যান-জ্ঞান শুধুই দাবা। ঘুমের মধ্যেও নাকি তিনি দাবা খেলেন। ছোট থেকেই দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্তের ছবি দেখতে ভালবাসেন প্রজ্ঞা। সেটাই তাঁর অবসর কাটানোর মাধ্যম। গত বছর দাবা এশিয়াডের আগে প্রজ্ঞার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রজনীকান্ত। একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল তাঁর। প্রজ্ঞার আদর্শ প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আনন্দ। তাঁর অ্যাকাডেমিতেই (ওয়েস্টব্রিজ আনন্দ চেস অ্যাকাডেমি) অনুশীলন করেন প্রজ্ঞানন্দ। আনন্দ তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন সমাজমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে। তাঁর বিষয়ে কে কী বলছে সে দিকে নজর না দিতে। আনন্দের সেই মন্ত্র নিয়েই এগোচ্ছেন প্রজ্ঞা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy