দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ছবি: রয়টার্স
প্রথমেই সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলে দিই। বিশ্বনাথন আনন্দের পর ভারতে প্রজ্ঞানন্দই নিঃসন্দেহে সেরা দাবাড়ু। আনন্দ পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই সাফল্য ভারতীয় দাবায় এখনও পর্যন্ত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু এ দেশের দাবার ইতিহাসে এর পরেই থাকবে প্রজ্ঞানন্দের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা। তবে শুধু প্রজ্ঞা নয়, এই সাফল্য একটা গোটা প্রজন্মের। যে প্রজন্ম স্বপ্ন দেখাচ্ছে গোটা দেশকে।
আনন্দ ভারতীয় দাবায় যে পথটা তৈরি করেছিল সেটাই প্রজ্ঞারা বহন করছে। শেষ চার-পাঁচ বছরে ভারত থেকে তিন-চার জন ভাল মানের দাবাড়ু উঠে এসেছে। এদের খেলা দেখে বলা যেতে পারে, আগামী কয়েক বছরে ভারতই বিশ্ব দাবার কেন্দ্র হতে চলেছে। ক্রমতালিকায় গুকেশ (ডি) অনেক আগে (১১)। বিদিত (গুজরাতি), অর্জুন (এরিগাইসি)-রাও ভাল জায়গায় আছে। ক্রমতালিকায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে প্রজ্ঞা (২৮)। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারতের দাবা তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু প্রজ্ঞার ফাইনাল খেলা নয়, একটা গোটা প্রজন্মের এ ভাবে উঠে আসার পুরো ঘটনাটাই ভারতীয় দাবায় মাইলফলক।
দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর কার্লসেনের বিরুদ্ধে প্রজ্ঞার হারানোর কিছু ছিল না। উল্টে চাপ ছিল কার্লসেনের উপর। কারণ একে বিশ্বের এক নম্বর হিসাবে ফাইনাল খেলেছে কার্লসেন। তা ছাড়া আগে ও পাঁচ বার প্রজ্ঞার কাছে হেরেছে। সেটাও কার্লসেনের মাথায় ছিল। কিন্তু তার পরেও কার্লসেন জিতেছে। ওর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে। প্রজ্ঞা হারলেও ওর সামনে এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
এ কথা বলতে কোনও বাধা নেই যে শেষ ৩-৪ বছরে ভারতীয় দাবায় নতুন জোয়ারের পিছনে আনন্দের অবদান অনেকটাই। পাঁচ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দাবার মূল স্রোত থেকে সরে যাওয়ার পরেও নিজের দায়িত্ব ভোলেনি আনন্দ। পরের প্রজন্মকে হাতেকলমে তৈরি করছে। আনন্দ নিজে ওর সময় কোনও আনন্দ পায়নি। যা করেছিল সব নিজের প্রচেষ্টায়। নিজের চেষ্টাতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু এখনকার প্রজন্ম মাথার উপরে আনন্দকে পাচ্ছে। ওরা যখনই পরামর্শ চেয়েছে আনন্দ দিয়েছে। অনেক সময় তো নিজে যেচে দিয়েছে। আর সেই পরামর্শ দায়সারা নয়। অনেক গভীরে গিয়ে। আনন্দ এই প্রজন্মের দাবাড়ুদের পিছনে অনেক সময় দেয়। তা ছাড়া প্রযুক্তিগত সুবিধাও প্রজ্ঞারা পেয়েছে। প্রজ্ঞা রমেশের কাছে শেখে। তার পাশাপাশি বিদেশেও ট্রেনিং করতে পারে। সারা বছর ধরে দেশে-বিদেশে এখন প্রতিযোগিতা খেলার সুযোগ অনেক বেশি। আগে এই সব সুযোগ ছিল না।
আনন্দকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তখন দাবা এখনকার মতো জনপ্রিয় ছিল না। ফলে আর্থিক দিক থেকেও ওকে লড়তে হয়েছে। সেই সমস্যা এখনকার দাবাড়ুদের সামনে অতটা নেই। প্রজ্ঞাদের আর্থিক চিন্তা অনেকটাই কম। আনন্দ বা আমার পরের প্রজন্ম (পেন্টালা হরিকৃষ্ণ, সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপন চন্দ, নীলোৎপল দাসেরা) একটা জায়গার পরে আর এগোতে পারেনি। সেই বেড়াটা এই প্রজন্ম (প্রজ্ঞা, গুকেশ, বিদিতেরা) ভেঙে দিয়েছে। এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
তবে সমস্যা অবশ্য পুরোপুরি মেটেনি। আমাদের পরিকাঠামো আরও ভাল করতে হবে। এখনও দেশে সামগ্রিক ভাবে অনুশীলন করার কোনও সেন্টার নেই। সবাইকে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হতে হয়। এই বিষয়ে ভারতীয় দাবা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দাবায় আরও স্পনসর দরকার। যদি আমরা এই সব সমস্যা মেটাতে পারি, তা হলে ভবিষ্যতে শয়ে শয়ে আনন্দ পাব। যার শুরুটা হয়েছে প্রজ্ঞা, গুকেশ, অর্জুনদের মধ্যে দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy