ছবি: আতঙ্কের ইস্তানবুল
মঙ্গলবার রাতে যখন বিমানবন্দরে পা রেখেছিলেন, কল্পনাও করতে পারেননি কী ভয়ানক অভিজ্ঞতা অপেক্ষায় আছে তাঁর।
বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়ার মধ্যে নির্বিচার বোমা-গুলি। হত্যালীলার হতবাক সাক্ষী থাকা। আতঙ্কে অবশ হয়ে গিয়েছিল শরীর-মন। তার মধ্যেই সন্ত্রাসের কারবারি সন্দেহে তুর্কি পুলিশ বন্দুক তাক করে তাঁর মাথায়। কোনও রকমে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে শুধু বলতে পেরেছিলেন, ‘‘আমি ব্রাজিলীয়’’। সম্ভবত তাতেই কাজ হয়। সন্ত্রাসবাদী হামলায় রক্ষা পাওয়ার পর পুলিশি হেনস্থা থেকে রেহাই পেয়ে যান অল্পে।
ব্রাজিলীয় ফুটবলার আন্দ্রে নাজারিও আফোনসো অবশ্য পুলিশি হেনস্থাটা বড় করে দেখতে নারাজ। ছ’ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, বত্রিশ বছরের গোলকিপার বরং বলছেন, ‘‘আমাকে সন্ত্রাসবাদী বলে ভুল করে পুলিশ আমার মাথায় বন্দুক ধরেছিল। কিন্তু ওরা যা করেছে, সকলের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদেই করেছে। ওই সময় পরিস্থিতিটাই এমন অতঙ্কের ছিল।’’
আতাতুর্ক বিমানবন্দরে নিহত একচল্লিশ জনের মধ্যে চোখের সামনে অন্তত দশ জনকে মরতে দেখেছেন নাজারিও। ২০০৩ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সিতে নামা নাজারিও ব্রাজিলের প্রথম সারির ক্লাব গ্রেমিও-র প্রাক্তন কিপার। এই মুহূর্তে খেলেন ক্রুজেইরো ক্লাবে। ফুটবল মাঠ আর গোলপোস্টই তাঁর পৃথিবী। কিন্তু মঙ্গলবার তিন আত্মঘাতী জঙ্গির গুলি আর বোমার দাপটে সন্ত্রাসের বীভৎসতা মানসিক ভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে তাঁকে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিমানবন্দরের ছবি-সহ লেখেন, ‘‘বিভীষিকার অভিজ্ঞতা। বোমায় দশ জনকে মরতে দেখলাম। চারিদিকে শুধু হাহাকার, কান্না, পুলিশ, আতঙ্ক।’’
ক্লাব টিমের হয়ে খেলতেই যাচ্ছিলেন নাজারিও। মাঝে স্টপওভার ছিল ইস্তানবুল। তুর্কির অন্যতম প্রধান বিমানবন্দরে যখন পা রাখছেন, তখন বোমা আর গুলির তাণ্ডব চলছে সেখানে। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নাজারিও বলেছেন, ‘‘ইস্তানবুলে স্টপওভার ছিল। আমরা লবির দিকে হেঁটে আসছিলাম। দেখি আতঙ্কিত লোকজন মরিয়া হয়ে উল্টো দিকে ছুটে পালাচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাকে বারুদের গন্ধ এল। চারিদিকে ধোঁয়া।’’
ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার আগেই বিমানবন্দরের মাটি ভেসে যেতে দেখেন রক্তে। প্রাণভয় তখনই গ্রাস করে। বলেছেন, ‘‘ওই সময় কোনও বোধ যেন আর কাজ করছিল না। মন বলছিল একটা আড়াল খুঁজে নিয়ে যে ভাবে হোক লুকোতে হবে। আর সন্দেহজনক কেউ আশেপাশে আছে কি না দেখতে হবে। কিন্তু চারপাশে তখন লোকে টেররিস্ট টেররিস্ট বলে চিৎকার করে দৌড়চ্ছে। মৃতদেহ পড়ে আছে, মাটি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সব দেখে কেমন অবশ হয়ে গিয়েছিলাম।’’ আর তখনই পুলিশ তাঁকে জঙ্গি বলে ভুল করে মাথায় বন্দুক ধরে।
নাজারিওর কথায়, ‘‘আমার পিঠে ব্যাকপ্যাক, হাতে স্যুটকেস। কী করব বুঝে উঠতে না পেরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর লোকজন আমার উল্টোদিকে ছুটছিল। সেটা দেখেই হয়তো পুলিশের সন্দেহ হয়।’’ এর পর যোগ করেছেন, ‘‘ওরা আমার মাথায় বন্দুক ঠেকাতে ঘোরটা কাটে। বলে উঠি আমি ব্রাজিলীয়। তাতেই কাজ হয়।’’ তবে পুলিশ তার পরেও তাঁর মালপত্র তল্লাশি করে পাসপোর্ট ও পরিচয় যাচাই করে তবে ছাড়ে।
নাজারিওর মতোই গালাতাসারের ক্লাবের কর্তা আব্দুররহিম আলবায়রকও আতাতুর্ক বিমানবন্দরের জঙ্গি হানায় আটকে ছিলেন। তিনি নিজের পরোয়া না করে দু’জন যখম যাত্রীকে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy