দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব নয়। ভারতীয় ক্রিকেটের টিম ডিরেক্টর হিসেবে দশ দিন থাকতে চলেছেন রবি শাস্ত্রী।
ডানকান ফ্লেচারের বিসর্জনের ঘণ্টা বেজে গেল মঙ্গলবারের পর, সেটাও তাই নিশ্চিত করে আর বলা যাবে না। তা সে যতই দেশজুড়ে ধোনিদের ব্রিটিশ কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হোক। যতই প্রখ্যাত প্রাক্তনরা একযোগে ‘ফ্লেচার হঠাও’ কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ুন। যতই এ দিন সন্ধের দিকে টিভি শো-য়ে ফ্লেচারের বিরুদ্ধে আর এক দফা বিষোদ্গার করে যান গাওস্কর-বেঙ্গসরকর। কারণ, শাস্ত্রী আনন্দবাজারকে সোজাসুজি ফোনে তো বলে দিলেন, টিম ধোনির দায়িত্ব তাঁর দশ দিনের। তাঁর বেশি নয়।
বোর্ডের একটা অংশ যদিও অপেক্ষা করে আছে ফ্লেচার এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কী করেন, তা দেখতে। এঁরা চাইছেন, ফ্লেচার নিজে ইস্তফাপত্রটা জমা করুন। তাতে প্রস্থানটা সম্মানজনক হবে। এঁদের মতে, ফ্লেচারের মাথার উপর শাস্ত্রীকে বসিয়ে দেওয়াটা নাকি যথেষ্ট বার্তা যে, তোমার আর কোনও ক্ষমতাই থাকল না। টিমের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ওয়ান ডে-তে যাবতীয় সব সিদ্ধান্ত এ বার থেকে শাস্ত্রী-ধোনি নেবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার কথায়, “এই সিদ্ধান্তের মানে কী সেটা বোঝার বুদ্ধি ফ্লেচারের আছে। বোর্ড যথেষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তোমাকে আর দরকার নেই।” এঁরা নাকি অবাকই হবেন যদি এর পরেও দেশের মাঠে অক্টোবরে ফ্লেচারকে ভারতীয় টিমের কোচের চেয়ারে দেখা যায়। তাঁর মাথার উপর টিম ডিরেক্টর হিসেবে শাস্ত্রীকে বসিয়ে দেওয়া তো শুধু নয়, বোর্ডের এই অংশের বক্তব্য, তাঁর দুই বিশ্বস্ত যোদ্ধাকেও বিশ্রামের ট্যাগ দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হল। এঁরা বোলিং কোচ জো ডস এবং ফিল্ডিং কোচ ট্রেভর পেনি। বলা হচ্ছে, ফ্লেচারের তা হলে আর পড়ে থাকল কী? টিমের শাসনদণ্ড শাস্ত্রী-ধোনির হাতে। সহকারী কোচ দুই ভারতীয়। ভরত অরুণ এবং সঞ্জয় বাঙ্গার। অস্থায়ী ফিল্ডিং কোচ তিনিও ভারতীয়। রামকৃষ্ণন শ্রীধর। ফ্লেচার নাকি হেড কোচ হিসেবে ইংল্যান্ডে ওয়ান ডে সিরিজের জন্য থেকে গেলেন নামেই!
ঘটনা হল, ফ্লেচারের সঙ্গে বোর্ডের চুক্তি আছে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। যে চুক্তিতে আবার সম্মানজনক ভাবে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার একটা রাস্তাও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ফ্লেচার কি আদৌ নিজে থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন, না দেবেন না? দিলীপ বেঙ্গসরকরের মনে হচ্ছে দেবেন না। সুনীল গাওস্কর আবার ফ্লেচার কী করবেন, না করবেন তা নিয়ে ভাবতেই চান না।
“বসে বসে এত টাকা পাবে, ও যাবে কেন,” মঙ্গলবার সন্ধের দিকে এক টিভি শোয়ে বলে দিয়েছেন বেঙ্গসরকর। গাওস্কর আরও আক্রমণাত্মক। “কিছু লোক নেগেটিভ প্রভাব নিয়ে আসে। টেকনিক্যালিও নেগেটিভ ব্যাপারস্যাপার টিমের মধ্যে তারা ঢুকিয়ে দেয়। তাতে টিমের ক্ষতি হয়,” স্পষ্ট বলে দিয়েছেন গাওস্কর। যিনি মনে করেন, শাস্ত্রীকে এনেই তাঁর কাছে বিশাল কিছু প্রত্যাশা করাটা অন্যায় হবে। ইন্সট্যান্ট কফির মতো কিছু আশা করাটা ঠিক হবে না।
মঙ্গলবার সকালে ফ্লেচারের মাথার উপর শাস্ত্রীকে বসিয়ে দেওয়ার খবরে বিভিন্ন জল্পনা চালু হয়ে যায় দেশের ক্রিকেটমহলে। প্রশ্ন উঠে পড়ে, ফ্লেচারের ডানা ঠিক কতটা ছাঁটা হল? ঠারেঠোরে যে আগুনে ঘি দিয়ে বসেন বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল। বলেন যে, ব্যাপারটা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছিল বোর্ড। পটেলকে জিজ্ঞেস করা হয়, ডস আর পেনির কী হবে? মিডিয়া বিবৃতি অনুযায়ী ‘বিশ্রাম’ শব্দটা ব্যবহার না করে পটেল বলে দিয়েছেন, “আপনারা জানেন, ওদের সরিয়ে তিন জন ভারতীয় কোচকে আনা হয়েছে।” অর্থাৎ, পেনিদের বিশ্রাম নয়, সরানো হল!
ফ্লেচারের উদ্দেশ্যে বার্তাটা তা হলে আদতে কী? আগামী বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy