গুরু: শাস্ত্রীর ক্লাসে চলছে হার্দিকের বোলিং অনুশীলন। এএফপি
বিরাট কোহালির বর্তমান প্রজন্মের ভারতীয় দলের হয়ে ফের ব্যাট ধরলেন রবি শাস্ত্রী। বলে দিলেন, এই দল ইতিমধ্যেই এমন অনেক কীর্তি গড়ে ফেলেছে, যা অতীতের অনেক তারকাসমৃদ্ধ ভারতীয় দল করে দেখাতে পারেনি। বলে দিলেন, অদূর ভবিষ্যতেও বিরাট-রা অনেক কীর্তি গুঁড়িয়ে দেবেন।
সিরিজে ১-০ এগিয়ে থাকা ভারতীয় দলের হেড কোচ মঙ্গলবার কলম্বোর সিংহলিজ ক্রিকেট ক্লাবের মাঠে বসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই ভারতীয় দলটা দু’বছরের ওপর একসঙ্গে আছে। ওরা এখন আরও পরিণত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই এমন অনেক প্রাপ্তি ওদের নামের পাশে রয়েছে, যা এর আগে অনেক ভারতীয় দলের নেই। অনেক বড় বড় নাম যা করে দেখাতে পারেনি।’’
শাস্ত্রী উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন বিরাট কোহালির নেতৃত্বে ২০১৫-তে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জেতার মুহূর্তকে। বলেন, ‘‘তেইশ বছর পরে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জিতেছিল এই দল। ওয়ান ডে সিরিজও জেতে অনেক দিন পর।’’ ১৯৯৩-এ শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জিতেছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারত। তার পর ২০১৫-তে ফের কোনও ভারত অধিনায়ক হিসেবে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ জেতেন কোহালি। মাঝে আর কেউ জিততে পারেননি।
এসএসসি-তে বসে শাস্ত্রীর বলা এই মন্তব্য নিয়ে যদিও বিতর্কের ঝড় উঠতে বাধ্য। ‘অনেক বড় বড় নাম’ শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জিততে পারেনি বলে তিনি কাদের বোঝাতে চাইলেন, এই প্রশ্ন উঠে পড়তে কতক্ষণ?
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ না জেতাদের তালিকায় অধিনায়ক হিসেবে আছেন কপিল দেব, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অনিল কুম্বলে। সিরিজ না জেতাদের মধ্যে আরও আছেন সচিন তেন্ডুলকর এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও। তবে সচিন বা ধোনি সিরিজ না জিতলেও হারেননি। কপিল, সৌরভ এবং কুম্বলে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ হেরে ফিরেছিলেন।
পরের দু’জনের উপস্থিতিই শাস্ত্রীর মন্তব্যকে অন্য মাত্রা দিচ্ছে। এক জনের সঙ্গে শাস্ত্রীর তিক্ততার সম্পর্ক সকলের জানা। অন্য জন— কুম্বলে তাঁকে সরিয়েই কোচ হয়েছিলেন। আবার কোহালির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কুম্বলে সরে যাওয়ায় ফের কোচ হয়েছেন শাস্ত্রী। তবে কি এঁদের দু’জনের দিকেই তোপ শাস্ত্রীর? তিনি নিজে পরিষ্কার না করলেও এমনটা হলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
ভারত গল টেস্ট জেতার পরে সৌরভ মন্তব্য করেন, কোহালিদের আসল পরীক্ষা হবে বিদেশে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো দেশে খেলতে গেলে। বিদেশের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শাস্ত্রী বেশ সুর চড়িয়েই বলে গেলেন, ‘‘বিদেশ সফরের কথা উঠলেই আমার মনে হচ্ছে, এই তরুণ এবং উত্তেজক টিমের কাছে সেটা একটা দারুণ সুযোগ। এই টিম ইতিমধ্যেই দারুণ অনেক কিছু করে দেখিয়েছে এবং ওরা বাইরে গিয়েও ভাল করে দেখাবে, এমন কিছু করবে যা ওদের আগে কেউ করেনি।’’
ফের দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে প্রশ্ন হওয়ায় বলে উঠলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে থাকতে ভালবাসি। এখন একটা সিরিজ চলছে আর সেটা হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। আমরা ১-০ এগিয়ে রয়েছি, ছেলেরা সেই কাজটা আগে ভাল ভাবে সেরে ফেলতে চাইবে।’’
বলেই আবার চলে এলেন শ্রীলঙ্কার সিরিজ জেতা নিয়ে। ‘‘কুড়ি বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের হয়ে খেলা অনেক বড় বড় নাম শ্রীলঙ্কা ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু সিরিজ জিতে ফিরতে পারেনি। সেই কারণেই বলছি, এই টিমটার বিদেশে গিয়ে এমন কিছু করার অভ্যেস রয়েছে, যা আগে কেউ করতে পারেনি।’’
এটা ঠিকই যে, শ্রীলঙ্কা বরাবরই ভারতের শক্ত গাঁট হিসেবে থেকে গিয়েছে। ১৯৮৫-৮৬ মরসুমে প্রথম টেস্ট সফরে গিয়ে হেরে গিয়েছিল ভারত। অধিনায়ক ছিলেন কপিল দেব। সেই দলে শাস্ত্রীও ছিলেন। তার পর ১৯৯৭-এ সচিনের নেতৃত্বে তিন টেস্টের সিরিজ খেলেছিল ভারত। তিনটি টেস্টই ড্র হয়ে যায়। সেই সিরিজ বিখ্যাত হয়ে আছে সনৎ জয়সূর্যের ৩৪০ এবং রোশন মহানামার ২২৫ রানের জন্য। দু’জনে মিলে ৫৭৬ রানের জুটি বেধে বিশ্বরেকর্ড করেন। প্রেমদাসার সেই টেস্টে শ্রীলঙ্কা তুলেছিল ৯৫২-৬। যা আজও তাদের সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে আছে। তবে ১৯৯৩-এ আজহারের বিজয়ী টিমে
সচিন ছিলেন।
সৌরভ অধিনায়ক হিসেবে ২০০১-এর সফরে শ্রীলঙ্কা গিয়ে টেস্ট সিরিজ হেরেছিলেন ১-২। যদিও ক্যান্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে ৯৮ নট আউটের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সৌরভ টেস্ট জিতিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু কলম্বোতে শেষ টেস্টে এসে এসএসসি-তেই ফের মুরলীধরনের ঘূর্ণিতে ইনিংসে হেরে যান। এর পর ২০০৮-এর সফরে এসে কুম্বলের অধিনায়কত্বেও ভারত সিরিজ হারে ১-২। সেই সিরিজের নায়ক ছিলেন অজন্তা মেন্ডিস।
দু’দিন আগেই আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে শাস্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের দৌড়ে অদূর ভবিষ্যতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পাশে বসে পড়ার ক্ষমতা ধরেন বিরাট কোহালি। হেড কোচের এই মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার সারা দিন ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তোলপাড় চলল।
শাস্ত্রী এ দিনও সাংবাদিক সম্মেলনে কোহালি নিয়ে বলে গেলেন, ‘‘অ্যাডিলেডে ক্যাপ্টেন হিসেবে ওর প্রথম টেস্টে আমি ছিলাম। সেই সময় থেকে ও অনেক পরিণত হয়েছে। এখনও বিরাট তরুণ এবং শিখছে। কিন্তু শরীরীভাষা দেখলেই বোঝা যায় ও আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে এবং আরও পরিণত হতে থাকবে।’’ তার পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ২৭ টেস্টে ক্যাপ্টেন্সি করেছে বিরাট। ওর বয়স আন্দাজে অনেক প্রাপ্তিই এসে গিয়েছে। সর্বসেরাদের পাশে বসার ক্ষমতা রয়েছে ওর।’’
তিনি আসার আগে ড্রেসিংরুমে (কুম্বলের জমানার দিকে ইঙ্গিত) অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। তিনি এসে কী ভাবে সামলালেন? শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘আমাকে কোনও বিশেষ বোতাম টিপতে হয়নি। ড্রেসিংরুমে ঢুকেই দেখেছি সব ঠিকঠাক রয়েছে। স্রেফ প্লে বাটনটা টিপে দিয়েছি। খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু কী ভাবে করেন সেটা? ফের জিজ্ঞেস করলেন এক সাংবাদিক। এ বার স্বভাবসিদ্ধ শাস্ত্রীয় সুর, ‘‘ভাই, ওটার জন্য আলাদা স্কিল লাগে। সেই কারণেই আমি এখানে বসে আছি, আপনি নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy