প্রত্যয়ী: পড়াশোনার পাশে আয়ুষি তৈরি পদকের জন্যও। ফাইল চিত্র
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে শ্যুটিং বিশ্বকাপে যাওয়া ঠিক, না হুগলির স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ফাইনালে পরীক্ষায় বসা—কোনটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ভেবেই পাচ্ছে না বাংলার সোনার মেয়ে, দেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান শ্যুটার আয়ুষি পোদ্দার! অদ্ভুত এক টানাপোড়েনে পড়েছে শেওড়াফুলির মেয়ে।
আন্তর্জাতিক স্তরে ইতিমধ্যেই বেশ ক’টি সোনা ও ব্রোঞ্জ জিতে ফেলেছে সপ্তদশী মেয়ে। এ বারের জাতীয় শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে পেয়েছে চারটে সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ। ক’দিন আগে রাজ্য গেমসেও সোনা পেয়েছে আয়ুষি। বাংলায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেহুলি ঘোষকে হারিয়ে। দশ মিটার এয়ার রাইফেলে রেকর্ড পয়েন্ট করেছে আয়ুষি। ৬০০-র মধ্যে ৫৯৬। এরই মধ্যে আরও কঠিন চারটি টুনার্মেন্টে নেমে পেয়েছে সিডনিতে নামার ছাড়পত্র।
এর পরও বাংলার অন্যতম সেরা শ্যুটিং প্রতিভার গলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষণ্ণতা। ‘‘আজই স্কুলে যখন গেয়েছিলাম তখনই এসএমএস করে জানানো হয় ভারতীয় দল ১৯ মার্চের বদলে ১৬ মার্চ যাবে। কিন্তু ১৭ মার্চ তো আমার সিবিএসই-র ভূগোল পরীক্ষা পড়েছে? পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি না পেলে জীবনে বড় ক্ষতি হবে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসব ঠিক করেছি। অন্য দিকে আবার পদক জেতার সুযোগ, ওটা হাতছাড়া করলে ক্ষতি হবে খেলোয়াড় জীবনের!’’ আয়ুষির দোটানায় পড়ার আরও কারণ একই স্কুলে এবং একই ক্লাসের পড়ুয়া মেহুলি, পরীক্ষা না দিয়ে বেছে নিয়েছে খেলার মাঠ। সিনিয়র বিশ্বকাপের জন্য অনুষ্ঠেয় দিল্লির জাতীয় শিবিরে যোগ দিয়েছে সে। পড়াশোনা না, খেলাধুলা—কোনটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত? সফল ক্রীড়াবিদ বিশেষ করে জুনিয়র পর্যায়ের হলে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে হিমশিম খান অভিভাবকরা। এটা একটা জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যা। শুধু বাংলায় নয়, গোটা ভারতেই। কারণ এখানে দু’একটি অ্যাকাডেমি ও সাইয়ের কিছু কেন্দ্র ছাড়া কোথাও সেই পরিকাঠামো নেই। আয়ুষির স্কুল এতদিন সাহায্য করায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বার তো সর্ভারতীয় বোর্ডের পরীক্ষা।
দীপা কর্মকার অলিম্পিক্স চলাকালীন এম এ পরীক্ষার বই পড়তেন রিও-র গেমস ভিলেজের ঘরে। আয়ুষিও সিডনিতে নিয়ে যেতে চান বই-খাতা। কারণ সেখান থেকে ফিরে বাকি পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু যেতেই যদি না পারে? অন্য অভিভাবকরা যা করতেন, আয়ুষি-র বাবা পঙ্কজ পোদ্দার তাই করেছেন। চিঠি লিখেছেন জাতীয় ফেডারেশনের কাছে। ‘‘জাতীয় কোচ দীপালি ম্যাডাম (দেশপান্ডে) হয়তো কিছু করবেন আমার জন্য। বয়স আঠারো হয়নি বলে একা যাওয়ার অনুমতিও দেবে না ফেডারেশন। টিমের যাওয়া যদি দু’দিন পিছোয়, তা হলেই যেতে পারব,’’ আশায় ভদ্রেশ্বর বুলস আই অ্যাকাডেমির ছাত্রী। এক সময় নাচ শিখত আয়ুষি। সেটা ছেড়ে দিয়েছে শ্যুটিং পদকের জন্য। কিন্তু এ বার মাঠের পরীক্ষার চেয়ে স্কুলের পরীক্ষা তার কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
আয়ুষি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে ৫০ মিটার রাইফেল প্রোন থ্রি পজিশনে। আয়ুষির আরও একটা বড় সমস্যা, ভারী রাইফেল। বাবা-ই তাঁর কোচ। সাড়ে পাঁচ কেজি-র বদলে বাবার সাড়ে ছয় কেজি-র রাইফেলই তার সঙ্গী এখন। ভারী রাইফেল তবুও বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে পদকের সন্ধান—আয়ুষির যে ঘুম ছুটেছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy