বেসবল, ট্রায়াথলন, সাইক্লিং, ফেন্সিং, ইকুয়েস্ট্রিয়ান— এই খেলাগুলোর বাংলায় অস্তিত্ব আছে, এটা জানাই যেত না, যদি না বেঙ্গল অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নির্বাচন নিয়ে ধুন্ধুমার লেগে যেত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাদা এবং ভাইয়ের মধ্যে!
এই খেলাগুলো এ রাজ্যের কোথায় হয়, কখন হয় সে সব জানা না গেলেও খেলাগুলোর কর্তারা যে আছেন এবং তাঁরা যে মহার্ঘ্য সেটা হঠাৎ-ই বেরিয়ে পড়েছে বিওএ-র ভোটের জন্য। আরও তাৎপর্যের, যে সব খেলার কর্তাদের নিজেদের পাড়াতেও কেউ চেনে না, তাঁদেরই অনেকে এখন বুক বাজিয়ে বলছেন, ‘‘মমতার বাড়িতে গিয়ে মিটিং করে এলাম!’’ আবার কেউ গর্ব করে বলছেন, ‘‘মু্খ্যমন্ত্রীর ভাই আমাকে দশ বার ফোন করেছে আমার ভোটটার জন্য। এখনও কথা দিইনি!’’
শুক্রবার বিওএ-র নির্বাচন। ইস্টবেঙ্গল তাঁবু বাছা হয়েছে নির্বাচন কেন্দ্র হিসেবে। সোমবারই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এবং দেখা যাচ্ছে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি প্যানেলের সঙ্গে তাঁরই ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্যানেলের। রাজ্য অলিম্পিক্স সংস্থায় শেষ বার নির্বাচন হয়েছিল বারো বছর আগে। তার পর এই এ বার!
অজিতবাবু নিজে প্রেসিডেন্ট পদে ওয়াকওভার পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী জোগাড় করতে পারলেন না ভাই স্বপন। বাকি তেরোটি পদে নির্বাচন হচ্ছে। স্বপনবাবু নিজে দাঁড়িয়েছেন সচিব পদে। অজিতবাবুর পছন্দের প্রার্থী চন্দন রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অলিম্পিয়ান গুরুবক্স সিংহ এবং দুই প্রাক্তন ফুটবলার কার্তিক শেঠ এবং দিলীপ পাল-ও। সাঁতারের রামানুজ মুখোপাধ্যায়, কুস্তির অসিত সাহার মতো দশকের পর দশক সংস্থার চেয়ারে থাকা জনা ছয়েক সত্তরোর্ধ্ব কর্তাও সামিল নির্বাচনে। লোঢা কমিশন জানলে কী বলত কে জানে!
সিএবি, আইএফএ, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান— এ রকম কিছু সংস্থার পদাধিকারী নির্বাচন নিয়ে মাঝেমধ্যেই ময়দানে উত্তাপ ছড়ায়। তাতে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতি থেকে বাংলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। কিন্তু রাজ্যের একেবারে প্রচারহীন একটি ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন ঘিরে যে ভাবে আগুন ছড়াচ্ছে ময়দানে তা প্রায় নজিরবিহীন। সেটা এতটাই তীব্র যে, কোনও খেলার কর্তার জন্মদিনের পার্টিতে অনেকে দল বেঁধে ‘ভি’ দেখিয়ে সেই ছবি তা ফেসবুকে পোস্ট করছেন। পাল্টা আবার কেউ একান্তে পাঁচ-ছয়জন ভোটারকে ডেকে নিচ্ছেন কোনও নামী ক্লাবে লাঞ্চ বা ডিনারে।
ফলে যে সব খেলার কর্তারা নিজেদের স্যুটকেসে সংস্থার প্যাড রেখেই রাজ্য সংস্থা চালান, নির্বাচন ছাড়াই যাঁরা বছরের পর বছর মৌরসীপাট্টা গেঁড়ে বসে আছেন সংস্থায়, তাঁদের এখন পোয়াবারো। ৬৪ জন ভোটারের একটা বড় অংশ কখনও মুখ্যমন্ত্রীর দাদার কাছে, কখনও ভাইয়ের কাছে গিয়ে ভরপেট দুপুর বা রাতের খাওয়া সেরে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন আলোচনার অছিলায়। ভোট দেবেন বলে নানা প্রতিশ্রুতিও আদায় করছেন। সোজা কথায় ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন!
কিন্তু কেন হরিশ চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটের মু্খ্যমন্ত্রীর পরিবারের ঝামেলা ময়দানের ঘাসে এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে? কেন মু্খ্যমন্ত্রী নিজে দাদা-ভাইয়ের এই লড়াইয়ে হস্তক্ষেপ করছেন না, তার কোনও উত্তর দিতে পারছেন না মমতা-ঘনিষ্ঠ কোনও তৃণমূল নেতাও। তবে বর্তমান বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিতবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমার ভাইয়ের বাংলার অলিম্পিক্স সংস্থার সচিব হওয়ার যোগ্যতা থাকলে ওকে নিশ্চয়ই মেনে নিতাম। অনেক বুঝিয়েছি। অন্য পদ দিতে চেয়েছি। কিন্তু ও শুনছে না। আমি যাকে সচিব পদে ফের চাইছি সেই চন্দন প্রাক্তন জেভিয়ার্স। শিক্ষিত ছেলে। একটা অভিজাত ক্লাবের সচিব পদে রয়েছে অনেক দিন। বিওএ-র স্বার্থেই চন্দনকে চাইছি। আমার ভাই ওই জায়গাটা সামলাতে পারবে না।’’ ভাই স্বপনের আবার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘দাদার বিরুদ্ধে আমি কিছু বলব না। তবে ওর প্যানেলে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের অনেককে পছন্দ করছি না। আগেও লড়েছি, আবার লড়ছি।’’ এ দিনই অবশ্য স্বপনবাবুর প্যানেলের ভাইস প্রেসি়ডেন্ট পদপ্রার্থী নুমি মেটার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে। যা জেনে অজিতবাবুর শিবির উল্লসিত।
দাদা-ভাইয়ের ভোটযুদ্ধের ব্যালটে ছাপ পড়তে বাকি ৪ দিন। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সূত্রের খবর, এখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে পরিবারের মধ্যে এই ‘যুদ্ধ’ থামাতে মমতা শেষ প্রহরে কোনও নির্দেশ দেন কি না সেটাই দেখার। ভোটারদের একটা অংশ কিন্তু এখনও আশাবাদী, শেষ মুহূর্তে জট কেটে যাবে ভেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy