ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
তেরো বছর আগে লিগ জেতানো গোলদাতা আব্দুল স্যালিউকে পরের মরসুমেই ছেঁটে ফেলেছিল মোহনবাগান। বাকি বছরে খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য।
তেরো বছর পরে লিগের অঘোষিত ফাইনালে বাগানকে সমতা ফেরানো গোলে খেতাব এনে দেওয়া বেলো রজ্জাককে কিন্তু আগামী মরসুমেও রেখে দেওয়া হচ্ছে। চোদ্দো বছর খেলার পরেও ধারাবাহিকতার জন্য।
ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে প্রবীণতম বিদেশি হওয়া সত্ত্বেও আই লিগের সব কোচ এবং অধিনায়কের বিচারে সেরা ডিফেন্ডার হয়েছেন সবুজ-মেরুনের এই নাইজিরিয়ান। এ রকম এক সফল এবং পরীক্ষিত ডিফেন্ডার আর পাওয়া সম্ভব নয় বলে বেলোর এজেন্টের সঙ্গে ইতিমধ্যে নতুন মরসুমের কথা শুরু করে দিয়েছেন বাগানের অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত।
বেলোর সঙ্গে সনি নর্ডি এবং কাতসুমিকে বিদেশি কোটায় রেখে দেওয়া হলেও বাদ দেওয়া হচ্ছে সঞ্জয় সেনের টিমের ‘ব্যান্ড মাস্টার’ পিয়ের বোয়াকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা বোয়ার বয়স যথেষ্ট। সেটাই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁর ক্ষেত্রে। বাগান কর্তারা এক রকম নিশ্চিত বোয়া গোটা মরসুম টিমকে টানতে পারবেন না। বোয়ার জায়গায় এক জন পজিটিভ বিদেশি স্ট্রাইকার নেওয়া হবে।
সোমবার বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের পথে টিম বাসে ওঠার আগে বেলো বললেন, ‘‘সংযমী জীবনযাপন আর কঠিন পরিশ্রমই আমার এই লম্বা লড়াইয়ের রসায়ন। না হলে এত দিন পর ফেডারেশনের কাছ থেকে সেরার স্বীকৃতি পাব কেন?’’ বাগানের মুখচোরা ‘দাদু’ যখন নিজেকে মেলে ধরছেন তখনই পাশ দিয়ে চলে গেলেন বোয়া। সম্ভবত বুঝে গিয়েছেন নিজের বাগান-ভবিষ্যৎ। ‘‘আমি এখন ফ্রান্সে পরিবারের কাছে যাব। মোহনবাগানের কেউ যোগাযোগ করলে ফিরব। না হলে অন্য কোথাও খেলব,’’ বললেন ক্যামেরুন স্ট্রাইকার। যদিও বলার সময় তাঁর মুখটা করুণ দেখায়। ‘‘আর ডাকুক, না ডাকুক বাগানে ইতিহাস তো গড়ে দিয়ে গেলাম’’ হোটেলের লবিতে রাখা আই লিগ ট্রফিতে হাত বুলোতে বুলোতো বলছিলেন এই বাগান টিমের ‘নেতা’।
কাতসুমি আর তাঁর এজেন্টদের সঙ্গে কাল উৎসবের রাতেও দুটো পর্যন্ত টিম হোটেলে আলোচনা করেন বাগান কর্তারা। জাপানি মিডিও পরের মরসুমেও সবুজ-মেরুনে থাকছেন।
আর সনি? গত বছর বাংলাদেশে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করতে যাওয়া বাগান অর্থ সচিবকে ঢাকার হোটেলে প্রায় দশ ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন হাইতি স্ট্রাইকার। সেই সনি এ বার নিজে বাগানে থাকার জন্য এতই আগ্রহী যে, ৬ জুন পর্যন্ত কলকাতায় থেকে যাচ্ছেন, চুক্তিপর্ব সাঙ্গ করতে। ‘‘মোহনবাগানের মতো ভালবাসা আর কোথায় পাব? দেবাশিসকে বলে দিয়েছি তোমার ক্লাবেই খেলব।’’
পরের বার বাগানের কোচও থাকছেন সঞ্জয় সেনই। সে কারণে তাঁর সঙ্গে বেঙ্গালুরু মহাম্যাচের চার দিন আগে আলোচনায় বসেছিলেন কর্তারা। কিন্তু তখন কোনও প্লেয়ার্স লিস্ট দিতে চাননি তিনি। আই লিগকেই পাখির চোখ করেছিলেন বলে। এ দিন অবশ্য সঞ্জয় বললেন, ‘‘এই টিমের ডিফেন্স আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঝমাঠেও দু’-এক জন ভাল ফুটবলার দরকার আছে। কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় সেটা বলব। নতুন ফুটবলার নিলে তো আর চ্যাম্পিয়ন টিমেরও সবাইকে রাখা সম্ভব নয়!’’
তবে ফুটবল-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাগান কোচও চ্যাম্পিয়ন টিমের সত্তর শতাংশ ফুটবলারকে ধরে রাখতে চান। বাগানের ফুটবল দল গড়ার দায়িত্ব যিনি গত দশ বছর ধরে দেখভাল করে আসছেন সেই দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘আমরাও চ্যাম্পিয়ন টিমে খুব বেশি পরিবর্তনের পক্ষে নই।’’ প্রীতম কোটাল, শৌভিক চক্রবর্তী, পঙ্কজ মৌলাদের সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি আছে। রেখে দেওয়া হচ্ছে তিন সিংহ— বলবন্ত, বিক্রমজিৎ, শেহনাজকে। শিল্টন পাল, কিংশুক দেবনাথ, দেবজিৎ মজুমদারের সঙ্গেও চুক্তি হবে দু’-এক দিনের মধ্যেই।
বোয়ার সঙ্গে বাদের তালিকায় রয়েছেন ডেনসন দেবদাস, লালকমল ভৌমিক, আনোয়ার, দীপক দেবরানির মতো কয়েক জন। বাতিলের তালিকায় ভাবা হচ্ছে জেজেকেও।
কিন্তু এঁদের জায়গায় নেওয়া হবে কাদের? আই লিগ থেকে নেমে যাওয়া ডেম্পো থেকে নারায়ণ দাস-সহ তিন জনের নাম ভাবা হচ্ছে। তবে তাঁদের পুরনো ক্লাবের সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি আছে। সঞ্জয় চাইছেন ডেম্পোর রোমিও ফার্নান্ডেজকে। বাগান কর্তাদের এক বড় অংশ অবশ্য গোয়ার কোনও ফুটবলারকে নিতে আগ্রহী নন। এঁরা কলকাতায় এসে সাফল্য পান না বলে। বাগান কোচ আবার ডেম্পোর কোনও চোটগ্রস্ত তারকাকে চান না। ফলে নতুন ফুটবলার নেওয়া নিয়ে জট আছে। কর্তারা আবার নতুন কাউকে নেওয়ার আগে এ বারের সব ফুটবলারের বকেয়া মাইনে মিটিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। সব মিলিয়ে বাগানে বইছে ফুরফুরে বাতাস!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy