নেইমারের ব্যক্তিগত বিমানে লিফট নিলেন মেসি।
র্সেলোনা ট্রেনিংয়ে তাঁরা সব সময় একসঙ্গে। কখনও হাসিঠাট্টা করছেন। কখনও আবার বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা চলছে।
হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলে একে অপরের জন্য পেনাল্টি ছেড়ে দেন। আবার মাঠের বাইরেও সব সময় একে অন্যকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। বার্সার প্রতিটা জয়ের পরে সেলফি তুলতেও দেখা গিয়েছে দু’জনকে।
একজন শিল্পী হলে, আর এক জন বিস্ময়বালক। একজন জাদুকর হলে, আর একজন সেই সিংহাসনের যোগ্য উত্তরসূরি। একজন বর্তমান হলে অন্য জন ভবিষ্যৎ।
ক্লাব ফুটবলে তাঁরা প্রিয় বন্ধু হতে পারেন। কিন্তু শুক্রবার ভোরে দুই বন্ধুর মাঝে রয়েছে ১০২ বছরের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। হলুদ আর নীল- সাদার সেই ঐতিহাসিক রাইভ্যালরি আজ যেন দুই মেরুতে দাড় করিয়েছে দু’জনকে।
তাঁরা— লিওনেল মেসি ও নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র। ক্লাব ফুটবলে সাময়িক বিরতি রেখে প্রাক্ বিশ্বকাপ ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে ব্রাজিল ও আর্জেন্তিনা। আরও ভাল ভাবে বললে হাজির আন্তর্জাতিক ফুটবলের ‘সুপারক্লাসিকো’। যে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে শিরোনামে উঠে আসছে দুই বন্ধুর লড়াই।
‘দশ বনাম দশ’-এর কাহিনি।
দুই বন্ধুর লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট আবার বেলো হরাইজন্তের এস্তাদিও মিনেইরাও। ব্রাজিলিয়ানদের জন্য যে মাঠ কোনও দুঃস্বপ্নের থেকে কম কিছু নয়। মাঠের প্রতিটা ঘাসে আজও যেন সেই শোকস্তব্ধ ব্রাজিলের কান্নার রেশ ছড়িয়ে আছে। গ্যালারিতে আজও শোনা যায় ৬১ হাজারের সেই আকুল আর্তনাদ। চোখ ভেজা গ্যালারি। মাথা নিচু করা সেলেকাওরা। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই রাতে ফুটবলের এক সোনার সাম্রাজ্যের দর্পচূর্ণ হয়েছিল এই মাঠে। জার্মানির আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি ব্রাজিল। তবু আগামী বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণের আরও কাছেও ব্রাজিলকে এগিয়ে দিতে পারে এই অভিশপ্ত মাঠই। কিন্তু অপয়া মাঠে ব্রাজিলের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন দশ নম্বর জার্সিধারী সেই ছোট্ট চেহারার মেসি। যাঁর একটা বাঁ পায়ের ক্ষমতা আছে যে কোনও বিপক্ষকে শাসন করার।
প্র্যাকটিসে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ছবি টুইটার, রয়টার্স
ব্রাজিল শিবির তো আগেভাগে জানিয়ে দিয়েছে মেসির উপরেই থাকবে নজর। যাঁর উপর মাঝমাঠে দায়িত্ব থাকবে মেসিকে শান্ত রাখার, ব্রাজিলের সেই রেনাতো অগাস্টো তো এখন থেকেই ছক কষছেন কী ভাবে আটকাবেন রাজপুত্রকে। অগাস্টোর স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী মেসিকে পাস দেওয়ার জায়গা দিলে হবে না। অগাস্টো বলছেন, ‘‘আর্জেন্তিনা ফরোয়ার্ডদের জায়গা ছোট করতে হবে। মেসি বল পেলে ওকে পাস দেওয়ার জায়গা দেওয়া চলবে না।’’ ব্রাজিল ট্রেনিংয়ে নেইমারের বিরুদ্ধে সেই মেসি-ছক প্রয়োগ করে দেখছেন কোচ তিতে। অগাস্টো আরও বলছেন, ‘‘নেইমারের উপর আমরা এই স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করেছি। টার্গেট হচ্ছে বল পেলে যাতে মেসি কোনও জায়গা না পায় শট মারার বা পাস দেওয়ার।’’ বার্সেলোনায় এলএম টেনের সঙ্গে আট বছর খেলেছেন। বারবার বলে এসেছেন তাঁর দেখা অন্যতম সেরা ফুটবলার হচ্ছেন মেসি। কিন্তু সুপারক্লাসিকোর আগে সে সব মেসি-বন্দনা উড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন দানি আলভেজও। যিনি বলছেন, মেসিকে ভয় পায় না ব্রাজিল। ‘‘ফুটবলে ভয় বলে কিছু হয় না। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে পারে। মেসিকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বিপক্ষে যেই থাকুক না কেন আমরা পয়েন্ট তুলতে তৈরি।’’ সুপারক্লাসিকোর আগে আবার আর্জেন্তিনা শিবির জুড়ে অস্বস্তি। এডগার্ডো বাউজার অধীনে চারটে ম্যাচে মাত্র একটা জিতেছে আর্জেন্তিনা। কনমেবল যোগ্যতা অর্জন টেবলের ছ’নম্বরে বসে রয়েছে লা অ্যালবিসেলেস্তেরা। আবার এমন এক ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলা যারা গত কয়েক ম্যাচে ফর্ম ফিরে পেয়েছে। তিতের কোচিংয়ে ফের সাম্বার ছন্দে ব্রাজিল। শেষ চারে চারটেই জিতে।
তাতে কী? আর্জেন্তাইন সমর্থকরা এক বিন্দুও চিন্তিত নন। বরং টুইটার যুদ্ধে ব্রাজিল ভক্তদের আগেভাগেই সতর্ক করে দিচ্ছেন আর্জেন্তাইনরা। বেলোর মাঠে তারা তৈরি ব্রাজিলকে আর এক দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিতে। আর্জেন্তাইন ভক্তদের আত্মবিশ্বাসের আর এক কারণ অবশ্য দেশের ট্রেনিংয়ে মেসির যোগ দেওয়া। চুলের স্টাইল ও চাপদাড়ির মতোই যাঁর ট্যুাটু নিয়ে এ দিন ঝড় উঠেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। এ দিনও ট্রেনিংয়ের সময় ধরা পড়ল মেসির পায়ে করা নতুন ট্যাটু। পুত্র থিয়াগোর হাতের ছবির পাশে দশ লেখা। কালো রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে চারপাশে। ডিজাইনার ট্যাটু নিয়ে ট্রেনিংয়ে নামার পরে দেখা গেল সেই মেসিচিত ছাপ। আর্জেন্তিনা কোচ বাউজা বলছেন, ‘‘মেসি একশো শতাংশ তৈরি। কিন্তু ওর একার উপর নির্ভর করলে হবে না। সবাইকে ভাল খেলতে হবে।’’
আর্জেন্তিনা যে রকম ফর্মেই থাকুক না কেন, ব্রাজিল তারকা ডগলাস কোস্তা বলছেন, ‘‘এই সমস্ত ম্যাচে কে কী রকম ফর্মে আছে সেটার থেকেও জরুরি দিনের দিনে ভাল খেলা।’’
ব্রাজিলের পোস্টার বয় নেইমারও খোশমেজাজেই রয়েছেন। হাসিঠাট্টা করছেন ট্রেনিংয়ে। প্রিয় বন্ধু মেসিকে ব্যক্তিগত বিমানে লিফ্টও দিয়েছেন। হোটেলে সমর্থকদের সেলফি আব্দারও মেটাচ্ছেন।
বেলো তৈরি। নেইমার তৈরি। মেসিও তৈরি। শেষ হাসি কার, দেখার সেটাই।
টিভিতে সুপারক্লাসিকো ব্রাজিল বনাম আর্জেন্তিনা (শুক্রবার ভোর ৫-১০, সোনি সিক্স)
মেসির ট্যাটু-বদল
বাঁ-পায়ের ট্যাটু বদলে নতুন ট্যাটুতে দেখা গেল লিওনেল মেসিকে। মেসির এর আগে যে ট্যাটু ছিল তাতে একটি তলোয়ারের ছবি ছিল। ফুলের প্যাটার্নে একটি হাতের প্রিন্টও দেখা যেত। সঙ্গে তাঁর বড় ছেলের নাম থিয়াগো আর তাঁর জার্সির নম্বর ১০। নতুন ট্যাটুতে প্রায় গোটাটাই কালো কালিতে ভরা। তলোয়ারটা দেখা যাচ্ছে না। তবে বাচ্চার হাতটা দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে তাঁর জার্সি নম্বর। হঠাৎ ট্যাটু কেন বদলালেন আর্জেন্তিনার রাজপুত্র? কারণটা পরিষ্কার নয়, তবে মনে করা হচ্ছে তাঁর ছোট ছেলে মাতেওর জন্মের পর ট্যাটুতে তলোয়ারের ছবি রাখাটা দুই বাচ্চার বাবা হিসেবে ভাল বি়জ্ঞাপন নয় বলে মনে হয়েছে মেসির। তাই এই নতুন ট্যাটু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy