টাকমাথা, বয়স্ক আপনভোলা লোকটাকে দেখলে কিছুতেই বিশ্বাস হবে না এর মধ্যে এতটা ক্ষমতা আছে!
ভদ্রলোকের হাতে বেশির ভাগ সময় হাতে ধরা থাকে একটা চায়ের ফ্লাস্ক। সঙ্গে একগাদা চায়ের কাপ। ক্রিকেটার হোক বা সাংবাদিক, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট মানে তাঁর হাতের ‘রং চা’ (ও পারে যেটাকে বলে লাল চা) খেয়ে বেরোতে হবে। সচিন রমেশ তেন্ডুলকর খেয়েছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি খাচ্ছেন। লিওনেল মেসি, দাবি ধরলে তিনিও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত!
ভদ্রলোকের নাম, ভুলু চন্দ্র ঘোষ। এবং তিনি মোটেই দুর্দান্ত চা তৈরি করার জন্য বিখ্যাত নন!
সাকিব আল হাসান তাঁর কাছে মাঝেমধ্যে আসেন। তামিম ইকবাল ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে তাঁকে দিয়ে যান।
কেন?
কারণ ভুলুবাবু ভাল চা তৈরির মতো দুর্দান্ত ভবিষ্যদ্বাণীটাও করতে পারেন!
অবাক লাগছে নিশ্চয়ই। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এমন কিছু শোনাও তো মহাপাপ! কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকমহল বা ক্রিকেটমহল এটাকেই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করে। ক্রিকেটাররাও শোনা গেল মনে করেন ভুলুভাই একবার কিছু বলে দিলে মিলে যাবেই। সেটা সেঞ্চুরি করার ভবিষ্যদ্বাণী হোক। সেটা পাঁচ উইকেট নেওয়ার কথা আগাম বলে দেওয়া হোক।
কিছু দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যেমন কিছুতেই উইকেট পাচ্ছিলেন না সাকিব। সোজা তিনি নাকি চলে যান ভুলু ঘোষের কাছে। জিজ্ঞেস করেন, কবে পাব উইকেট? ভুলু বলে দেন, কাল পাবে। পাঁচটা। এবং সেটাই হয়! যার পর সাকিব নাকি তাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন পুরস্কার হিসেবে! তামিম ইকবালের সঙ্গেও একই জিনিস ঘটেছে। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তামিমের ফর্ম মোটেও সুবিধের যাচ্ছিল না। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে তামিমের ঠিকানাও হয়ে যায় ভুলু ঘোষ। সেঞ্চুরি পাবে বলে দেওয়ার পর আবারও সেটা মিলে যায়! মজার এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের খেলাধুলোর সঙ্গে তিরিশ বছর ধরে জড়িত থাকা ভদ্রলোক আবার একটু কানেও খাটো। তামিম নাকি বলেছিলেন, যদি সেঞ্চুরি পাই তোমাকে এক লক্ষ টাকা দেব! সেটাই তালেগোলে তিনি শুনেছিলেন, যদি সেঞ্চুরি পাই তোমাকে এক হাজার দেব! চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি করার পর তামিম যখন তাঁকে টাকা দিতে যান, বাংলাদেশ ওপেনারকে পত্রপাঠ ফেরত পাঠিয়ে দেন ভুলু। পর দিন তামিম ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে তাঁকে দিয়ে যান।
যে প্রসঙ্গ উঠলে অভিভূত হয়ে যান ভুলু। বলে ফেলেন, “এটা আমার ক্ষমতা কি না জানি না। তবে মাঝেমধ্যে বলে ফেলি। সেগুলো মিলে যায়!” আসন্ন সিরিজে কী হবে? শুনে হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, “মনে হয় দু’টো ম্যাচ হবে। একটা বৃষ্টিতে হবে না।” কিন্তু সিরিজে তা হলে কী হবে? এ বার উত্তর আসে, “সেটা বলব কেন? প্লেয়ারকে বলব। আর বললেও আমি কী পাব?”
সত্যি নমস্য চরিত্র বটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy