Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

এবি-হীন আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফের স্বর্গ আরোহণের যুদ্ধ পদ্মাপারে

স্বর্গ থেকে মর্ত্যে! ক্রিকেট বিশ্বের নানাবিধ কাগজ, ক্রিকেট ওয়েবসাইট সিরিজটার পূর্বাভাস করতে গিয়ে যা লিখছে, বলছে তার নির্যাস অনেকটা এমনই। বিশ্বের ক্রিকেট-মানচিত্রে দীর্ঘদিন ‘পুঁচকে’ অস্তিত্ব নিয়ে বসে থাকা একটা টিম এক দিন ঘুম ভেঙে উঠে সিরিজের পর সিরিজ ব্যাঘ্রগর্জন তুলল।

বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিস। ছবি: এএফপি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিস। ছবি: এএফপি।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ১৬:২৪
Share: Save:

স্বর্গ থেকে মর্ত্যে!

ক্রিকেট বিশ্বের নানাবিধ কাগজ, ক্রিকেট ওয়েবসাইট সিরিজটার পূর্বাভাস করতে গিয়ে যা লিখছে, বলছে তার নির্যাস অনেকটা এমনই। বিশ্বের ক্রিকেট-মানচিত্রে দীর্ঘদিন ‘পুঁচকে’ অস্তিত্ব নিয়ে বসে থাকা একটা টিম এক দিন ঘুম ভেঙে উঠে সিরিজের পর সিরিজ ব্যাঘ্রগর্জন তুলল। জিম্বাবোয়ে-কিনিয়া মার্কা প্রতিপক্ষের পৃথিবী ছেড়ে ঢুকে পড়ল ক্রিকেটের কুলীন গ্রহে যেখানে থাকে ভারত-পাকিস্তানের মতো টিম। এবং ক্রিকেটকুলের চোখ কপালে তুলে দিয়ে তারা একদিন ভারত-পাকিস্তানকে হারাতেও শুরু করে দিল! কাউকে ৪-০, কাউকে থ্রি নিল, কারও বিরুদ্ধে আবার প্রথম ঐতিহাসিক ওয়ান ডে সিরিজ জয়। মাসখানেক আগে ভারতের বিরুদ্ধে দেশের চলমান ক্রিকেট-রোম্যান্স হিসেবে আবার আবির্ভূত হলেন কোনও এক মুস্তাফিজুর রহমান। বিষাক্ত কাটারে বছর উনিশের বাংলাদেশ পেসার যে উইকেটগুলো ভারত সিরিজে পেলেন, বাড়ির ক্যাবিনেটে সাজিয়ে রাখা যায়। রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কত রথী-মহারথী, কত দুঁদে সমস্ত নাম! ভারত যেমন ভুলবে না ওই সিরিজ, ঠিক তেমনই ওই সিরিজ কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ভোলা সম্ভব নয়।

সময় কত কিছু পাল্টে দেয়। কত দিনই বা আগে হবে? দিন পনেরো-কুড়ি। কিন্তু ভারত সিরিজ উত্তর এই দিন কুড়িতেই পদ্মাপারের স্বপ্নের রথচক্র বাস্তবের মাটি ছুঁল। বলতে গেলে, ফাফ দু’প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকা টি টোয়েন্টি সিরিজে দাঁড়াতেই দিল না বাংলাদেশকে। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ এখনও সে ভাবে নিয়মিত টি টোয়েন্টি খেলে না। টেস্টেও তারা খুব মজবুত নয়। ক্রিকেটে পেশিশক্তির প্রদর্শন মাশরফি মর্তুজারা করে থাকেন ওয়ান ডে-তে। কিন্তু কোথাও গিয়ে আশঙ্কার পোড়া গন্ধটা যেন পাওয়া যাচ্ছে। ও পারের কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন যে, আফ্রিকান সিংহরা বাকিদের চেয়ে অনেক আলাদা। টিম হিসেবে তারা অনেক উন্নত ও প্রাচুর্যসম্পন্ন। তার চেয়েও বড় কথা তারা তৈরি হয়ে এসেছে। জেনে এসেছে, কী ভাবে টিমটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত-পাকিস্তানকে। বাংলাদেশকে হালকা ভাবে নেওয়ার মূর্খামি তারা করবে না। মুস্তাফিজুরকে কাটার দিতে দেখলে ‘ওহে ছোকরা, তোমাকে এখুনি ফেলে দিচ্ছি’ মার্কা ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভারতীয় মনোভাব দেখাতে গিয়ে মৃত্যুর পথ তারা প্রশস্ত করবে না। বিষাক্ত কাটারগুলোকে সম্মানের সঙ্গে খেলবে। আর প্রহারের জন্য অপেক্ষা করবে বাকি বোলারদের জন্য।

শুক্রবার থেকে মীরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যে ওয়ান ডে সিরিজটা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে শুরু হচ্ছে, তা মাশরফিদের কাছে তাই অধিকতর কঠিন হবে।

কিন্তু ঠিকঠাক খেললে মোটেও অসম্ভব হবে না।

এবি ডে’ভিলিয়ার্স তিনিই তো থাকছেন না ওয়ান ডে সিরিজে। ডেল স্টেইন তাঁকেও দেখা যাবে না।

এবিডি থাকা না থাকায়, কতটা তফাত হয় সেটা পাঁচ বছরের খুদেও এখন জানে। ডে’ভিলিয়ার্স প্রথম ওয়ান ডে এমনিতেও খেলতে পারতেন না স্লো ওভাররেট জনিত নির্বাসনের কারণে। ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা তাঁকে গোটা ওয়ান ডে সিরিজ থেকেই অব্যাহতি দিয়েছে। তা ছাড়া তাঁর সন্তানের জন্মও হবে দিন কয়েকের মধ্যে। কোনও সন্দেহ নেই যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এটা বড় ধাক্কা। কিন্তু বাকি যাঁরা আছেন, তাঁরা আবার প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিতে যথেষ্ট ওস্তাদ। অধিনায়কের নাম হাসিম আমলা, তিনি একবার দাঁড়িয়ে গেলে কী করতে পারেন না পারেন, স্ট্যাটিসটিক্সের বইটা একবার উল্টে নিলেই চলবে। দু’প্লেসি আছেন। ডি’কক আছেন। বিস্ফোরক ‘কিলার মিলার’ আছেন। বোলিংয়েও একটা স্টেইন না থাকলেও একটা মর্নি মর্কেল থাকবে। স্পিনে একটা ইমরান তাহির থাকবে। উর্ধ্ববাহু হওয়ার খুব জায়গা নেই। সতর্ক না থাকলে বরং বিচ্যুতির পদে পদে সম্ভাবনা।

তার উপর আবার ওয়ান ডে-র পরিবর্তিত নিয়মকানুন। তামিম ইকবাল যা নিয়ে একটু টেনশনেই যেন আছেন। বাংলাদেশ ওপেনারের মনে হচ্ছে, খুব সহজ হবে না নতুন আইনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। অন্তত দু’টো ম্যাচ লাগবে। তবে বাংলাদেশ দু’টো ব্যাপারে স্বস্তি পেতে পারে। প্রথমত, মাহমুদউল্লাহ প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছেন। বিশ্বকাপে পদ্মাপারের সেরা ব্যাট ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট বা ওয়ান ডে-র কোথাও ছিলেন না। এ বার থাকবেন। ইনামুল হকও আছেন। আর আছে জনসর্মথন। পঁচিশ হাজারের শের-ই-বাংলা সবুজ-লাল জার্সিধারীদের নামতে দেখলে কী জঙ্গি সমর্থন আমদানি করতে পারে, দুনিয়া জানে। দক্ষিণ আফ্রিকা ধারে-ভারে যতই এগিয়ে থাক, শের-ই-বাংলা জনতা কিন্তু বাংলাদেশের ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ হবে। কোথাও গিয়ে তাই মনে হবে, তামিম ইকবাল মীরপুর প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ জনতাকে আরও একবার জেগে ওঠার ডাক দিয়ে গেলে পারতেন! মর্ত্য ছেড়ে ফের ক্রিকেট-স্বর্গের বাসিন্দা হতে গেলে ওটা তো লাগবে। ক্রিকেটের সঙ্গে গ্যালারির আবেগ মিশলে অনেক কিছু সম্ভব হয়। অনেক অপ্রত্যাশিতকেও তখন জলজ্যান্ত বাস্তব মনে হয়।

সান্তিয়াগোর চিলি-আর্জেন্তিনা কোপা ফাইনাল তো খুব পুরনো হয়নি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE