অনুজ-অগ্রজ। ঢাকায় প্র্যাকটিসে ধোনি-কোহলি। মঙ্গলবার। ছবি: দেবাশিস সেন
দু’জনকে একসঙ্গে এখন খুব দেখা যাচ্ছে।
মীরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের যে মাঠে মঙ্গলবার থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতকে এসে পড়তে হল, তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা স্টেডিয়ামের বনেদিয়ানায় কোনও মিলই নেই। নারায়ণগঞ্জ মাঠ যদি ও-পারের বারাসত স্টেডিয়াম হয়, তা হলে শের-ই-বাংলা বাংলাদেশ ক্রিকেটের শোভাবাজার রাজবাড়ি। ভাপা ইলিশ, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিতল মাছের মুইঠ্যার দেশে ক্রিকেটের যে কোনও গঙ্গাসাগর মেলা মানে তার অবধারিত ঠিকানা মীরপুরের শের-ই-বাংলা। গত বছরই এখানে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ধুন্ধুমার লেগেছিল। স্টেডিয়ামের সিংহদরজা পেরিয়ে দেখা গেল, তার নথিপত্র এখনও ছড়িয়ে এ দিক ও দিক। এক-আধটা হোর্ডিং এক বছর পরেও থেকে গিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিস এখানে। প্রধান মাঠকে বাদ দিলেও পড়ে থাকে একটা আলাদা প্র্যাকটিস ভেন্যু। বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির লাগোয়া মাঠ।
দুপুর আড়াইটে সেই মাঠে উপস্থিত হয়ে চার জনের তুমুল হাসাহাসির একটা দৃশ্য পাওয়া গেল। শিখর ধবন আর সুরেশ রায়নাকে বাদ দিলে বাকি থাকেন যে দুই, তাঁদের এক জনের খোঁচাখোঁচা সাদা দাড়ি অদৃশ্য। ঝরঝরে আর রিল্যাক্সড লাগছে। কিছু একটা বলছেন আর তাতে গড়াগড়ি যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে যাঁর, অতীতের খোঁচাখোঁচা দাড়ির ভদ্রলোকের চেয়ে বয়সে তিনি বেশ কিছুটা ছোট।
এঁরা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর বিরাট কোহলি।
টিম প্র্যাকটিসের ফুটবল ম্যাচে এক টিমে থাকছেন। এক জনের পাস থেকে আর এক জন গোল করছেন। ডিনারে যাচ্ছেন একসঙ্গে। ড্রেসিংরুমে ফ্রুট ডিশ শেয়ার করছেন। ফিটনেস ট্রেনিং, ব্রেকফাস্ট টেবল, টিম স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা কোথাও নাকি এঁদের দু’জনকে আলাদা করা যাচ্ছে না। পুরোটাই যেন অনুজের অগ্রজকে নীরব বার্তা দেওয়া যে, সংসার এত দিন তোমারই ছিল। এখনও আছে। তুমি সরে গিয়েছ বলে আমি টেস্টে এসেছি মাত্র!
সময় বরাবরের অসফল জহুরি। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভ্রম, তার আন্দাজ কখনও সে দিতে পারে না। ধোনি যখন গত অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট ছাড়লেন, জল্পনা চলছিল, ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কোহলিই এখন সর্বেসর্বা। ওয়ান ডে অধিনায়ক তো কী, টিমমেটদের কাছে কোহলি নাকি বেশি কাছের। বেশি আপন। তা ছাড়া ধোনির সঙ্গে নাকি কোহলির দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।
ঢাকায় দাঁড়িয়ে অবশ্য দূরত্বের কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না। গত কাল এমএসডিকে দেখামাত্র বৃষ্টিতে টেস্ট জিততে না পারার আফসোস যিনি করলেন, তাঁর নাম তো নাকি বিরাট কোহলি। আবার ক্যাপ্টেন্সি করে বোলারদের অবস্থা কী বোঝা গেল, সেই প্রশ্নকর্তার নাম ধোনি। প্রশ্ন অবশ্যই কোহলিকে।
তা হলে?
মঙ্গলবার সন্ধেয় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পুল সাইডে রবি শাস্ত্রী বলছিলেন, “কোনও দিন সমস্যা তো ছিলই না। বিরাট খুব ভাল অধিনায়ক। কিন্তু সবে ও শুরু করল। এমএস সেখানে সিজনড ক্যাপ্টেন। ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি। বিরাটের ওর কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। জানার আছে। আর পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বলব, অসাধারণ। দু’জনের অধিনায়কত্বের স্টাইল দু’রকম। কিন্তু ওরা একে অন্যকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করে।” শোনা গেল, গত বছর ওই বিভ্রান্তির সময়ে দু’জনকে নিয়ে বসেছিলেন এই শাস্ত্রী। টিমে যাঁর ভূমিকা এখন কড়া হেডস্যর নয়, বড় দাদার মতো। টিমের সঙ্গে ওঠাবসা, কেনাকাটা, ডিনার পার্টি দেওয়া সবেতেই টিম ডিরেক্টরের ভূমিকা থেকে যায়। সে যাই হোক, টিমের দুই মহাতারকাকে নিয়ে নাকি শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, টিমের লক্ষ্যটা আসল। টিমকে জেতানোটা আসল। বাকি কে কোথায় কী বলল, সে সবে কান না দিলেও চলবে।
ঠিকই। এবং টিমকে জেতানোর প্রসঙ্গে এখানে বলে রাখা যাক, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কিন্তু টেস্টের নিরীহ বাংলাদেশকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ সফরে ভারতের উন্নতিসাধনের প্রশ্নে শাস্ত্রী রেগে গিয়ে, “আপনারা খালি বিদেশ বিদেশ করে যাচ্ছেন। আঠারো মাস পর কথা বলবেন,” বলে গেলেন বটে, কিন্তু এ পারের ড্রেসিংরুম থেকে যে আগুনের ফুলকি পাওয়া যাচ্ছে তা খুব একটা নিশ্চিন্তে রেখে দেওয়ার মতো নয়। তিন পেসারে নাকি ভারত-বধের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ। রুবেল হোসেন। আর মাশরফি মর্তুজা নিজে। গত বছর ভারতের বিরুদ্ধে শের-ই-বাংলাতেই তাসকিনের অভিষেকে পাঁচ উইকেট আছে। বলে গেলেন, ওটা তাঁকে বাড়তি তাতিয়ে রাখবে। মাশরফি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। কিন্তু ঘনিষ্ঠমহলে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলে রেখেছেন যে, বোলিং ঠিক আছে। ব্যাটিং ভাল হওয়ার দরকার। বল অফে পড়ছে না লেগে, হাফভলি আসছে না ইয়র্কার দেখার দরকার নেই। টেকনিকের ট্যাবলেট মুখে নিয়ে বসে থাকারও প্রয়োজন নেই। বিপক্ষ বোলারদের দেখবে আর চালাবে!
অতি-আগ্রাসনের মডেল নাকি অতিরিক্ত আবেগ? যে কোনও কিছু হতে পারে। কিন্তু বিরাট-ধোনির পুনর্মিলনের সংসারে যে অনভিপ্রেত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
‘মাইরা ফেলুম, কাইট্যা ফেলুম’-এর চাপা গর্জন তো আবার ফিরে আসছে। আসছে, আবার বিশ্বকাপের পর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy