হ্যাটট্রিক করেই বোয়ার পিঠে। শুক্রবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার
মোহনবাগান-৪ (বলবন্ত-পেনাল্টি সহ হ্যাটট্রিক, বোয়া)
আর্মি একাদশ-২ (সন্তু-পেনাল্টি সহ ২)
পঞ্জাবি গানের সঙ্গে উল্লাসধ্বনি দিতে দিতে ভিআইপি বক্স থেকে নেমে আসা মোহনবাগান সমর্থকদের দলটার সামনে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। দু’হাত আকাশের দিকে তুলে সিঁড়ি ভেঙে নামছেন, মুখে বাগান স্ট্রাইকারের জয়গান। যুবভারতীতে নায়কের নাম যে আজ বোয়া কিংবা কাতসুমি নয়। পঞ্জাবের বলবন্ত সিংহ।
একেবারে নিখাদ ভারতীয়।
২-২ হওয়ার পরে নিজের হ্যাটট্রিকে দলকে জেতানোর রেশ তখনও ধরা পড়ছে বলবন্তের চোখে-মুখে। তার মধ্যেই সবুজ-মেরুন জনতার উচ্ছ্বাসে ঢাকা পড়ে গিয়েছেন তিনি। ফুটবলারদের ড্রেসিংরুমে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে বেরোতে না বেরোতেই সমর্থকদের ভালবাসার ‘অত্যাচারে’ বন্দি। চোখ-মুখের এমন অবস্থা যে মনে হচ্ছিল বিপক্ষ ডিফেন্ডারের মারাত্মক ট্যাকলে চোট পেয়েছেন। গোটা ম্যাচেও এতটা বিধ্বস্ত দেখায়নি, যতটা ক্লান্ত মনে হল উপস্থিত জনতার চাপে। কাতসুমি থেকে বোয়া, বোয়া থেকে কোচ সবার প্রশংসা পাওয়া ফুটবলারকে তাই ধরাধরি করে ড্রেসিংরুমে পৌঁছে দিলেন ক্লাব-কর্তারা।
সেখানেও অবশ্য নিস্তার নেই! প্রচারমাধ্যমের সব আলো তখন তাঁর খোঁজে নেমে পড়েছে। তবে সাংবাদিকদের এড়াতে যে ভাবে স্টেডিয়াম ছেড়ে নিজের গাড়ির দিকে ছুটলেন, বক্সের মধ্যেও হয়তো এত জোরে বল তাড়া করেননি কখনও। ভিড়ের ফাঁক-ফোকর দিয়েই কোনও রকমে বলবন্ত বলে গেলেন, “এই হ্যাটট্রিক আমি আমার ক্লাবকে উৎসর্গ করছি। তবে আমার এই হ্যাটট্রিক সার্থক হবে, যদি কলকাতা লিগ জিততে পারি।”
শুক্রবারের যুবভারতীতে বলবন্ত যদি সুভাষকে শরতের আকাশ উপহার দেন, ফাতাই সেখানে কালো মেঘ। উপরের স্কোরলাইন যতই চমকপ্রদ দেখাক না কেন, বাগান-ডিফেন্সের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিয়তায় ফেলে দিয়ে গেলেন বাগানের বিদেশি স্টপার। যেখানে দলকে ভরসা দেওয়া উচিত, সেখানে তিনিই যেন দলের বোঝা হয়ে উঠছেন! আটটা ম্যাচ খেলে ফেললেন। অথচ বাকি ডিফেন্ডারদের সঙ্গে বোঝাপড়ার লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর মধ্যে। ফাতাইয়ের বদান্যতায় বাগানের তরুণ ডিফেন্সলাইনও বিদেশিহীন আর্মির বিরুদ্ধে প্রায় বেলাইন হতে হতে বেঁচে গেল। বিরতিতে সবুজ-মেরুন জনতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বাগানের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদেরও।
ম্যাচ শুরুর পঁচিশ মিনিটের মধ্যে যে বলবন্তের সৌজন্যে ২-০ এগিয়ে গিয়েছিল সুভাষের দল, সেই দলই বিরতির আগে ২-২ ড্রেসিংরুমে ফিরল। শাদীপ রায়ের আচমকা শটে বাগান-স্টপার জনি রাউথের হ্যান্ডবল। পেনাল্টি থেকে ১-২ সন্তু সুব্বার। চোখের পলক ফেলার ফুরসত নেই। মিনিট দু’একের ভিতরে বাঁ দিক থেকে ক্রস, আবার গোল, আবার সন্তু। আর্মি ২-২। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আর্মির দু’টো গোলের সময়ই ফাতাই নির্দিষ্ট জায়গায় ছিলেন না। বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও বলছিলেন, “ফাতাইকে আরও উন্নতি করতে হবে। ওর খেলায় আমরা খুশি নই।”
ফাতাই যে সর্বনাশ ডেকে আনছেন, সেটা বুঝতে বেশি দেরি হয়নি সুভাষ ভৌমিকের। আর বিরতির পরে তাঁর মাস্টারস্ট্রোক-ই বাগানকে কলকাতা লিগের চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে বাঁচিয়ে রেখে দিল। কী ভাবে? ফাতাইকে বসিয়ে বোয়া আর আদর্শ লামার পরিবর্তে স্টপারে প্রতীক চৌধুরিকে নামানোর পরেই পালতোলা নৌকা ঝড়ের গতিতে ছুটতে লাগল। বাগান ৪-১-৪-১ ছক ভেঙে ৪-৩-৩। নিট ফল, তিন স্ট্রাইকার বোয়া-বলবন্ত-কাতসুমির দাপটে সেনাবাহিনীর রক্ষণ তখন বেসামাল। বলবন্ত দু’বার একের বিরুদ্ধে এক সুযোগ নষ্ট না করলে বাগানের গোলের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।
সুভাষের তৎপরতায় বাগান জিতলেও, আর্মান্দো কোলাসোর মতো সাহস দেখাতে পারলেন না তিনি। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে লাল-হলুদ কোচ স্বদেশিদের উপর আস্থা রাখলেও, সুভাষ বিদেশি নির্ভরতা ছাড়তে পারছেন না। এমনকী ফাতাই ধারাবাহিক ভাবে খারাপ খেলা সত্ত্বেও। তবে এ দিন বাগান ২-২ হয়ে যাওয়ার পরে প্রতীক-সুখেনরা যে ভাবে বিদেশিহীন-ডিফেন্স সামলালেন, তাতে ভবিষ্যতে আসিয়ানজয়ী কোচকে স্বদেশি ডিফেন্ডারদের কথা ভাবতে নিশ্চয়ই বাধ্য করবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy